এসএম সুরুজ আলী ॥ কনিকা খাড়িয়া। সে চুনারুঘাটে আমু চা বাগান শ্রমিক সাগর খাড়িয়া ও আলন্তী খাড়িয়ার কন্যা। বাবা নিত্যান্তই দরিদ্র ১২০ টাকা দৈনিক মজরীতে কাজ করে সংসার চালান। শুধু কনিকা খাড়িয়াই নয়। তার অন্যান্য ভাই, বোনদের লেখড়া পড়া করাচ্ছেন। দৈনিক ১২০ টাকা মজুরী ও বাগানের শ্রমিক হিসেবে অন্যান্য যে সুযোগ সুবিধা পান তা দিয়ে কনিকা খাড়িয়াদের সংসার চলতো। এ অবস্থায় সাগর খাড়িয়া পরিবার নিয়ে অনেক হিমশিম খেতেন। এর মধ্যে মেয়ে কনিকাকে আমু উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করান। এসএস পাস করার পর কনিকাকে যখন দেখলেন তার বাবা এইচএসসি লেখাপড়ার খরচ দিতে পারছিলেন না, সঠিক তখন পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুন্ট কনস্টেবল পদে সারকুলার দেখে একশত (১০০) টাকা খরচ করে চাকুরীর জন্য আবেদন করেন। আবেদন করার পর কনিকা তার বাবাকে জানালে তার বাবা দুৎচিন্তার মধ্যে পড়ে যান। সরকারী চাকুরী তো সোনার হরিণ এ হরিণটা তো অনেকে পেতে চায়। কিন্তু সবার কপালে কি ঝুটে। আর ঝুটতে গেলেও তো টাকার দরকার। এতো টাকা কোথায় থেকে পাবেন কনিকার বাবা। এ নিয়ে কনিকার বাবার এসব চিন্তায় থাকার পরও কনিকা পুলিশের নিয়োগ পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতকার্য হন কনিকা। মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেও উর্ত্তীণ কনিকা। সর্বশেষ সম্প্রতি চুড়ান্ত প্রার্থী হয়ে হবিগঞ্জ পুলিশ লাইনে আসার ডাক পান কনিকা। সাথে তার বাবা সাগর খাড়িয়াকে নিয়ে আসেন। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা (বিপিএম-পিপিএম) প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার কনিকার বাবা সাগর খাড়িয়াকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করেন। এ সময় কনিকার বাবা সাগর খাড়িয়া কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন-বাগানে লেবারের কাজ করে মেয়েটাকে লেখাপড়া করিয়েছি। আমার মেয়ের চাকুরী হবে কখনও কল্পনাই করতে পারিনি। আমার মেয়ে কনিকার চাকুরী হওয়ায় আমি খুব খুশি। তিনি বলেন-নিয়োগ প্রক্রিয়া সঠিক হওয়ার কারণে আমার মেয়ের চাকুরী হয়েছে। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন, স্বরাষ্টমন্ত্রী, আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপারসহ নিয়োগ প্রক্রিয়া যারা ছিলেন তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। কনিকা খাড়িয়া জানান, যেহেতু কোন টাকা দিয়ে আমার চাকুরী হয়নি। এ হিসেবে সৎ ভাবে থেকে দেশের জন্য একটা কিছু করার চেষ্টা করবো।