পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃত আসামীদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী

হবিগঞ্জের মুখ রিপোর্ট ॥ পূর্ব বিরোধের জের ধরে বানিয়াচং উপজেলার বড়ইউড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের নির্দেশে আওয়ামী লীগ নেতা কামাল মিয়াকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা (বিপিএম-পিপিএম সেবা) নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বানিয়াচং সার্কেল) শেখ মোঃ সেলিমসহ পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস ব্রিফিংকালে পুলিশ সুপার জানান- ২০১৭ সালে নিহত কামাল মিয়ার চাচাতো ভাই ইসলাম উদ্দিন খুন হন। এ খুনের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখ করা হয় ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে তার অনুসারিরা ইসলাম উদ্দিনকে খুন করেছে। কামাল মিয়া ওই মামলায় সাক্ষী ও মামলা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। মূলত এ বিষয় নিয়ে কামাল মিয়ার সাথে ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের বিরোধ সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি এ বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করে। এক পর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান কামাল মিয়াকে খুনের পরিকল্পনা করেন। এ প্রেক্ষিতে ইউপি চেয়ারম্যান তার সহযোগিদের নিয়ে শিবগঞ্জ বাজারে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে কামাল মিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এমনকি কারা হত্যাকান্ডে অংশ নেবে আর কারা পাহারা দেবে সে দিকনির্দেশনাও দেন তিনি। ঘটনার দিন (২২ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে শিবগঞ্জ বাজারের উত্তরে একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের নির্দেশে রফিক, ফরিদ, জুনেদ, রুমেল, এবাদুর, সাইফুল প্রাণনাশক অস্ত্র নিয়ে কামালের পথরোধ করে। এক পর্যায়ে তাকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার সময় পাহারাদারের দায়িত্ব পালন করে ফরিদ, মধু মিয়া, পাভেল, আবিদ মিয়াসহ আরও কয়েকজন। কামাল মিয়াকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নবীগঞ্জ ও পরে হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালে ভর্তির পর তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসাধিন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা আরও জানান- কামাল মিয়াকে মারাত্বকভাবে জখম করা হয়েছিল। এ ঘটনায় গত ২৫ জুলাই কামাল মিয়ার স্ত্রী রাজনা আক্তার বাদি হয়ে ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে নবীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে মূল হোতা ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানসহ ১৫ আসামিকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় আটককৃতরা হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
উল্লেখ্য, নিহত কামাল মিয়া বানিয়াচং উপজেলার হলদারপুর গ্রামের মৃত মন্নাফ মিয়ার ছেলে। তিনি বড়ইউরি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বানিয়াচং সার্কেল) শেখ মোঃ সেলিম বলেন- হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতারের মাধ্যমে ব্যতিক্রমী ঈদ আনন্দ উদযাপন করেছে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত আসামীদের স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে এসেছে হত্যাকান্ডের মূল রহস্য।