ফ্রিতেও চামড়া নিতে আসেনি কেউ

আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে কোরবানির পশুর চামড়া ফ্রিতেও নেননি কেউ। অন্যান্য বছর কোরবানীর পুর্বেই চামড়া কিনে নিলেও এবার কোরবানীর পর দিনভর অপেক্ষার পরও কেউ নিতে আসেনি চামড়া। এতে কোরবানীদাতারা বাধ্য হয়ে চামড়া নদী কিংবা পুকুরে ফেলে দিয়েছেন, অনেকেই চামড়া মাটিতে পুতে দিয়েছেন। তবে কিছু কিছু চামড়া অনেকেই এলাকার চামড়া ব্যবসায়ীদের ডেকে দিয়েছেন। আবার যারা বিক্রি করছেন তারাও পানির দামে পশুর চামড়া বিক্রি করছেন। এছাড়া এবার কোন এতিমখানা কিংবা মাদ্রাসা ও লিল্লা বোডিং চামড়া নেয়নি।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কোরবানির গরুর চামড়া কেনার জন্য এবার ব্যাপারীদের তেমন আগ্রহ ছিল না। আবার অল্প দামে কিছু ব্যবসায়ী চামড়া ক্রয় করেছেন। এক্ষেত্রে একটি গরুর চামড়ার দাম সর্বোচ্চ ৫০-১০০ টাকা আর ছাগলের চামড়া ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। আবার বিকেলে ফ্রিতেও চামড়া নেননি ব্যবসায়ীরা। এতে নষ্ট হয়েছে এতিমদের হক। কারণ কোরবানির গরুর চামড়া পুরোটাই গরীবদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
এদিকে হবিগঞ্জে ‘জাতীয় সম্পদ চামড়া, রক্ষা করবো আমরা’ শ্লোগানে চামড়া রক্ষায় জেলা প্রশাসনের মনিটরিং সেল আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ২৯ জুলাই বুধবার জেলা প্রশাসন কর্তৃক এ কমিটি গঠন করা হয়। তবে চামড়ার ক্রেতা না থাকলেও কমিটির কোন সদস্যকে কোথাও চামড়া সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
চুনারুঘাট উপজেলার দেওরগাছ গ্রামের ব্যাপারী বেলাল মিয়া জানান, গত বছরের টাকাই এখন পর্যন্ত পাই নাই। চামড়া কিনে বিক্রি করা যায় না। ট্যানারি মালিকরা নিলেও নগদ টাকা পাওয়া যায়নি। এছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে এবার চামড়া নিয়ে বিপদের ্আশংকায় অনেকেই চামড়া নিচ্ছেন না। এছাড়া গাড়ির ভাড়া বেশি।
তিনি আরও বলেন, অনেক ঝুঁকি নিয়ে এবার আমরা কিছু চামড়া কিনেছি। প্রতিটি চামড়া গড়ে ১০০ টাকা করে কিনলেও বিক্রি করতে পারবো কি-না সেই নিশ্চয়তা নেই।
অন্যদিকে গরু চামড়া বিক্রেতা মো. ফারুক মিয়া জানান, দিনভর চামড়া দুটো পড়েছিল বাড়িতে, কেউ নিতে আসেনি। রাতে একজনকে ফোন দিয়ে চামড়া ফ্রিতে দিয়েছি। এভাবে অনেকেই জানান, তারা চামড়া মাটিতে পুতে গর্তে রাখার ঝামেলা এড়াতে ব্যাপারির বাড়িতে ফ্রিতে চামড়া পাঠিয়েছেন। আবার অনেকেই চামড়া মাটিতে পুতে ফেলেছেন। সাংবাদিক নুরুল আমিন জানান, আমার এলাকায় অনেকেই চামড়া বিক্রি করতে না পেরে খোয়াই নদীতে ফেলে দিয়েছেন। কারণ এবার চামড়া কেউ কিনতে আসেনি, আবার কোন মাদ্রাসা কিংবা লিল্লাবোডিং নিতে আসেনি। ফলে বাধ্য হয়েই চামড়া বাড়ির পাশে নদীতে ফেলেছেন।
সিনিয়র সাংবাদিক আলমগীর হোসেন জানান, তিনি সারাদিন অপেক্ষার পর চামড়া মাটির নিচে পুঁতে ফেলেছেন। কারণ কোরবানির চামড়া কিনতে এবার কেউ আসেনি। অথচ অন্যান্য বছর এতিমখানা থেকে চামড়া নেয়ার জন্য লোকজন আসতো। কিন্তু এবার কেউ আসেনি।
তবে চামড়া রক্ষায় জেলা প্রশাসনের মনিটরিং সেলের সদস্য মো. জহিরুল ইসলাম জানান, এ বছর করোনা ভাইরাসের প্রভাবেই চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। আমরা চেষ্টা করছি মানুষকে সহযোগিতা করার। তিনি আরও বলেন, আমাদেরকে ফোন করলে আমরা চামড়ার হোল সেলারদের কাছে সাধারণ মানুষের কোরবানির গরুর চামড়া বিক্রি করে দেয়ার চেষ্টা করছি।