বিপুল ভোটের ব্যাবধানে মিজানুর রহমান মিজান মেয়র নির্বাচিত
এসএম সুরুজ আলী ॥ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে উপ-নির্বাচন। নির্বাচনে মেয়র পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রহমান মিজান (নৌকা)। ২০০৪ সালে তৎকালীন পৌর চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর পর প্রায় ১৫ বছর ধরে বিএনপি নেতা জি কে গউছের দখলে ছিল হবিগঞ্জ পৌরসভা। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ২৮ নভেম্বর পৌরসভার মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জি কে গউছ। এরপর এবারের পৌর নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করেননি। এবার বিএনপি নেতা ইসলাম তরফদার তনু মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তিনি আশানুরূপ ভোট পাননি। অপরদিকে, বিএনপি নেতার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের তিন নেতার সাথে নির্বাচনী যুদ্ধ করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে হবিগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মিজানুর রহমান মিজান।
গতকালের নির্বাচনে মিজানুর রহমান মিজান পেয়েছেন ১৩ হাজার ২০৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু নারিকেল গাছ প্রতিক নিয়ে পেয়েছেন ৫ হাজার ৫৮৭ ভোট। আওয়ামী লীগের অপর বিদ্রোহী প্রার্থী হবিগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সৈয়দ কামরুল হাসান (জগ) প্রতিক নিয়ে পেয়েছেন ৮৮৫ ভোট। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মর্তুজ আলী পেয়েছেন চামচ প্রতিক নিয়ে পেয়েছেন ৩৯০ ভোট। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম ইসলাম তরফদার তনু মোবাইল ফোন প্রতিক নিয়ে পেয়েছেন ১ হাজার ৪৭ ভোট। ৪৭ হাজার ৮২০ জন ভোটারের মধ্যে নির্বাচনে মোট ২১ হাজার ১১৭ জন ভোট প্রদান করেন। নির্বাচনে ৪৪.২% ভোট কাস্টিং হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় জেলা নির্বাচন অফিসের হলরুমে ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার মোঃ খোরশেদ আলম। ফলাফল ঘোষণার সময় নবনির্বাচিত মেয়র মিজানুর রহমানের সমর্থকরা আনন্দ উল্লাস করেন। নির্বাচনে পৌরসভার ২০টি কেন্দ্র এক যোগে সকাল ৯টা থেকে ইভি পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল ৫টায় শেষ হয়। এরপর কেন্দ্রগুলোতে ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে ১০ মিনিটের মধ্যেই ভোটের ফলাফল প্রার্থীদের এজেন্টদের কাছে দিয়ে দেন প্রিজাইডিং অফিসার। নির্বাচন অফিসে বেসরকারি ফলাফল ঘোষণার আগেই ফলাফল জেনে যান প্রার্থী ও তার সমর্থকরা। পরে উল্লাস করে তারা বেসরকারি ঘোষণার পূর্ণাঙ্গ ফলাফল আনতে জেলা নির্বাচন অফিসে ছুটে যান। সেখানে ফলাফল ঘোষণার পর সেখান থেকে বিজয় মিছিল নিয়ে বাড়িতে ফিরেন নেতাকর্মীরা।
এর আগে সকালে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ভোটাররা কেন্দ্রগুলোতে জড়ো হন। সরেজমিনে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উমেদনগর সরকারি প্রাথমিক ও উমেদনগর শাহজালাল সুন্নীয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, নারী পুরুষ ভোটাররা ভোট দেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। ঘড়ির কাটায় সকাল ৯টা বাজার সাথে সাথে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ভোটাররা দীর্ঘদিন পর লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট প্রদান করেন। সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত শহরের রামচরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, সওদাগর কৃষ্ণধন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় কেন্দ্রলোতে ভোটারদের উপস্থিতি খুব কম। ভোটাররা লাইনে না দাঁড়িয়ে ভোট দিতে পেরেছেন। বেলা ৩টার দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু নিরদায়মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভিতরে প্রবেশ করলে নৌকার সমর্থকরা এগিয়ে এলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা হয়। এ সময় হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা’র নেতৃত্বে একদল পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি সামাল দেন। এর পরপরই মেয়র প্রার্থী মিজানুর রহমান মিজান ঘটনাস্থলে এসে তাঁর কর্মী সমর্থকদের শান্ত করেন। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। দুপুর ১টার দিকে সপরিবারে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো: আবু জাহির। তিনি ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেয়া সহজ বলে জানান। নতুন ভোটার হিসেবে ভোট দেন সংসদ সদস্যের ছেলে ইফাত জামিল। তিনি ভোট দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে সকল নির্বাচনেই ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহারের আহ্বান জানান। বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শনকালে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বলেন- অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। রিটার্নিং অফিসার খোরশেদ আলম জানান, ইভিএম এর মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচন উপহার দিতে পেরেছি। এজন্য প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিকসহ সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
উল্লেখ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে গত বছরের ২৮ নভেম্বর পৌরসভার মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জি কে গউছ। এরপর উক্ত পদটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন পৌরসভার প্যানেল মেয়র দীলিপ দাস।