পায়ের সমস্যার কারণে জাতীয় মহিলা পার্টি হবিগঞ্জ জেলা সভাপতি রাবিয়া খাতুনের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে
এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জের রাজনীতিতে নারী নেতৃত্বের মধ্যে রাবিয়া খাতুন একজন। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির সহযোগি সংগঠন জাতীয় মহিলা পার্টি হবিগঞ্জ জেলা সভাপতি। তিনি হবিগঞ্জ শহরের পুরাতন হাসপাতাল সড়কের আব্দুল আহাদ খানের স্ত্রী। জাতীয় পার্টি ও এর অঙ্গ সংগঠনের সকল সভা-সমাবেশে তার সরব উপস্থিতি ছিল। পাশাপাশি তিনি একটি বিমা কোম্পানীতে চাকুরী করতেন। কিন্তু হঠাৎ করে তার পায়ের তলায় হালকা একটু পঁচন দেখা দেয়। প্রথম দিকে প্রাথমিক চিকিৎসা করেন। কিন্তু পায়ের সমস্যা আরও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন। সেখানেও এর কোন সমাধান হয়নি। চিকিৎসার এক পর্যায়ে চিকিৎসক পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন তার ডায়াবেটিকস বেশি যে কারণে পায়ে পঁচন ধরেছে। পায়ের ওই সমস্যার সমাধান পেতে চিকিৎসার কমতি ঘাটতি রাখেননি তিনি। হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে তিনি চাঁদের হাসি হাসপাতালের এক ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করান কিন্তু সমাধান হয়নি। পরবর্তীতে ওই চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকা বারডেম হাসপাতাল গিয়ে ভর্তি হন। বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাকালে রাবিয়া খাতুন যখন অজ্ঞান ছিলেন তখন চিকিৎসকরা তার স্বজনদের পা কেটে ফেলার পরামর্শ দেন। এক পায়ের অপারেশনের প্রস্তুতি নেয়া হয়। এর মধ্যে রাবিয়া খাতুনের জ্ঞান ফিরে। জ্ঞান ফেরার পর যখন তিনি জানতে পারেন তা পা কেটে ফেলা হবে। তখন তিনি পা কেটে ফেলতে বাঁধা দেন। এ সময় তিনি চিকিৎসকদের কাছে তাকে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান। পরবর্তীতে পায়ে আর অপারেশন করাননি। সম্প্রতি রাবিয়া খাতুনের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, তার পা পঁচে ফুলে গেছে। পায়ে ব্যান্ডেজ করা অবস্থায় এ প্রতিনিধিকে দেখে তিনি রান্নাঘর থেকে ধীরে ধীরে হেঁটে ড্রয়িং রুমে আসেন। তিনি এ প্রতিনিধিকে তার রাজনৈতিক জীবন ও পারিবারিক জীবনের ইতিহাস খুলে বলেন।
রাবিয়া খাতুন জানান, ১৯৯৪ সালে হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। এরপর তার বিয়ে হয় পুরাতন হাসপাতাল সড়কের আব্দুল আহাদ খানের সাথে। আব্দুল আহাদ খানের গ্রামের বাড়ি বানিয়াচঙ্গ উপজেলার ইকরাম গ্রামে। তার শ^শুর ভূমি অফিসে চাকুরী করতেন। তিনি তার সন্তানদের জন্য শহরে বাড়ি নির্মাণ করে গিয়েছিলেন অনেক বছর পূর্বে। বিয়ের কয়েক বছর পর তার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় রাবিয়া সংসার চালানোর জন্য মেঘনা লাইফ ইনসুরেন্স কোম্পানীতে চাকুরী নেন। চাকুরীর পাশাপাশি তিনি ১২/১৩ বছর প্রাক্তন ব্যাংকার বদর উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা মরহুমা নুর জাহান খানমের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। এরপর তিনি মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর পাশাপাশি জাতীয় পার্টির সহ-মহিলা বিষক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। রাজনীতি করা অবস্থায় তিনি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশান এরশাদ, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত জিএম কাদেরসহ কেন্দ্রীয় অনেক নেতার সাথে সাক্ষাত করেছেন তিনি। রাবিয়া খাতুন জানান, আমি ছোটবেলা থেকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রাজনৈতিক আদর্শকে পছন্দ করতাম। তিনি বলেন- পল্লীবন্ধু এরশাদ দেশের উন্নয়নে যে কাজ করেছেন পরবর্তীতে আর কোন সরকার সেই উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারেনি। তিনি নারী নির্যাতন ও বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ আইন করেছেন। গ্রামগঞ্জের উন্নয়নে রাস্তাঘাট, কালভার্ট নির্মাণসহ সর্বস্তরে উন্নয়নে বলিষ্ট ভূমিকা রেখেছেন। এ জন্য তার দলের সাথে যুক্ত হই। নুর জাহান খানম মারা যাওয়ার পর আমাকে জাতীয় মহিলা পার্টির সভাপতি ও রতœা বেগমকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। পরবর্তীতে আমরা দু’জন একই সংগে দলের সকল কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছি। এর মধ্যে ডেমোক্রেসী ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ আয়োজিত কর্মশালায় অংশ নিয়েছি।
রাবিয়া খাতুন বলেন- হবিগঞ্জে যারা জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে রয়েছেন, তাঁরা সমাজের প্রতিষ্ঠিত ও ভাল মানুষ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আলহাজ¦ আতিকুর রহমান আতিক, সাধারণ সম্পাদক শংকর পাল। কোথাও কোন সভা হলে জেলা জাপার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাকে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান করেন। তারা সাথে সাথে মিটিংগুলোতে উপস্থিত হতেন। দলকে সুংগঠিত করার জন্য তিনি আন্তরিকভাবে কাজ করছেন বলে জানান। এক সময় আমাদের মহিলাদের জড়ো করে সভা করতে অনেকটা কঠিন হতো। এখন সভা-সমাবেশ করলে মহিলাদের দাওয়াত করলেই চলে আসেন। মহিলা পার্টিকে সুসংগঠিত করতে আমরা কয়েকটি ইউনিটের কমিটি গঠন করেছি। তবে একটা বিষয় সত্য যে, অনেকেই যেদিকে ক্ষমতা থাকে সেদিকে থাকতে চান। মহিলারাও এর বাইরে নন। সরকারি দলের মহিলা সংগঠন করা যতটা সহজ বিরোধীদলে মহিলা সংগঠন করা ততটা সহজ নয়। পায়ে সমস্যা হওয়ার পর থেকে রাজনীতির কর্মকান্ডে তেমন অংশগ্রহণ করতে পারছেন না রাবিয়া খাতুন। ঘরে বসে টেলিভিশন দেখছেন। টেলিভিশনের সংবাদগুলোতে যখন দেখেন তার নেতা পল্লীবন্ধু এরশাদ অসুস্থ তখন তার খুব কষ্ট হয়। রাবিয়া খাতুন সব সময় দোয়া করেন তার নেতা এরশাদ যেন সুস্থ থাকেন। ভবিষ্যতে হবিগঞ্জের নারীরা যেন রাজনীতিতে আরো অগ্রসর হন এই প্রত্যাশা করেন রাবিয়া।