নবীগঞ্জ প্রতিনিধি:- হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ কুর্শি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমেদ মুসার বিরুদ্ধে হতদরিদ্রদের সহায়তায় মাসিক ভিজিডির চাল আত্মসাত ও সঞ্চয়ের টাকা নিজের কাছে জমা রাখার অভিযোগ নিয়ে গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে এলজিআরডি মন্ত্রণালয় কর্তৃক চেয়ারম্যানকে কারন দর্শানো পত্রের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের সুষ্পষ্ট মতামত না থাকায় তা ফেরত পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গত ৪ জুন ২৩৯ নং স্বারকে জেলা প্রশাসক হবিগঞ্জের কার্যালয় থেকে একটি প্রতিবেদন এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। প্রেরিত প্রতিবেদনে চেয়ারম্যান মুসা কর্তৃক দেয়া জবাবপত্র যাচাই-বাছাই পূর্বক প্রতিবেদন প্রেরনের নিমিত্তে তা প্রেরনের নির্দেশনা দিয়ে জেলা প্রশাসক গত ৪জুন প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে মন্ত্রণালয়। এরই প্রেক্ষিতে গত ৫ জুলাই মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ ইফতেখার আহমদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত পত্রে চেয়ারম্যান মুছা কর্তৃক মন্ত্রনালয়ের দেয়া শোকজের জবাব যাচাই পূর্বক মতামত দেয়ার জন্য হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল হাসানকে নির্দেশ দেয়া হয়।
এদিকে, উপজেলা তদন্ত কমিটি কর্তৃক প্রেরিত প্রতিবেদনে মূল ঘটনা আড়ালের অভিযোগ নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। চেয়ারম্যান মুছা প্রবাসে থেকে কিভাবে উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে চাল উত্তোলন খাতায় স্বাক্ষর দেন এনিয়ে কর্ণপাত করেননি তদন্তকারী কর্মকর্তা নুসরাত ফেরদৌসী। উপজেলা প্রশাসনও এ বিষয়টি  খতিয়ে দেখেনি। বিভিন্ন সময়ে চেয়ারম্যান মুছার অনুপস্থিতে চলতি দায়িত্বে থাকা ইউপি সদস্য ফারছু মিয়া ও সামসুল ইসলাম বিধি মোতাবেক চাল উত্তোলনের খাতায় স্বাক্ষর দেয়ার কথা থাকলেও তাতেও স্বাক্ষর করেন চেয়ারম্যান মুছা। এঘটনাটি  প্রতিবেদনে কৌশলে আড়াল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। উপজেলা খাদ্য অফিস সূত্র এখবর নিশ্চিত করেছে ।
তাছাড়াও বে-আইনি ভাবে প্রায় দেড় বছরের সঞ্চয়ের টাকা নিজের পকেটস্থ করেন চেয়ারম্যান আলী আহমদ মুছা। এনিয়েও ধুম্রজাল তৈরী হয়। বিধি মোতাবেক এনজিও কর্মী সঞ্চয় উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত থাকাবস্থায় চেয়ারম্যান টাকা নিজের কাছে গচ্ছিত রাখার কোন বিধান নেই।
উল্লেখ্য, উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নে ১৭৫ জন ভিজিডি সুবিধাভোগী হতদরিদ্র লোকজনের মধ্যে চাল বিতরনে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে গত ২২ এপ্রিল প্রত্যুষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উত্তপ্ত হয় উপজেলার জনপদ। ২০ এপ্রিল মার্চ মাসের চাল বিতরণ করা হয়। চাল উত্তোলনের পর বিলম্বে বিতরণ নিয়ে কোন সদোত্তর দিতে ব্যর্থ হন চেয়ারম্যান মুছা। আত্মসাতের খবর ছড়িয়ে পড়লে তড়িঘড়ি করে চাল বিতরণের ব্যবস্থা করে গত ২২ এপ্রিল ভোর সাতটায় অজ্ঞাত স্থান থেকে তসক উল্লাহ অটো রাইসমিলের নাম সম্বলিত একটি ট্রাকে করে চাল নিয়ে ইউনিয়ন অফিসে প্রবেশকালে জনতার হাতে আটক হন চেয়ারম্যান মুছা। সরকারি গুদাম থেকে চাল নিয়ে আসার কথা বলে প্রশাসনের সহায়তায় মুক্ত হন চেয়ারম্যান মুছা। বাস্তবে ওই দিন খাদ্যগুদাম থেকে চাল নিয়ে আসা হয়নি। তাৎক্ষণিক সু-কৌশলে চেয়ারম্যান মুছা গত ৮ এপ্রিল খাদ্য গুদামের ছাড়পত্র দেখিয়ে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তিনি এ যাত্রায় পার পেয়ে যান বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। খাদ্য কর্মকর্তা নিজেই এখবর নিশ্চিত করেন। দৃশ্যমান ওই দুর্নীতি নিয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া প্রকাশ হয়। উপজেলা নির্বাহি অফিসার প্রাথমিকভাবে অনিয়মের সত্যতা সহ বিভিন্ন ভাবে মিডিয়ায় স্বীকার করলেও তদন্ত প্রতিবেদনে এর প্রতিফলন ঘটেনি। বা তাদের বিরোদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা গ্রহন করতে দেখা যায়নি। সার্বিক বিষয়ে গত ১২ ই মে ইউনিয়ন পরিষদ আইন ২০২০ এর ৩৪(৩৪)(খ) (ঘ) ধারায় দৃশ্যমান দুর্নীতি নিয়ে কেন চেয়ারম্যান আলী আহমদ মুছাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না জানতে চায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।