স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা আতঙ্কের মধ্যেই বাংলাদেশে তিনজন আক্রান্ত রোগীর তথ্য প্রকাশ করেছে রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর। গতকাল আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে সংস্থাটি এ তথ্য প্রকাশ করে। প্রতিবেশী দেশগুলোতে এই রোগ ধরা পড়ার পর থেকেই দেশে করোনা রোগী থাকতে পারে বলে আলোচনা ছিল। চীনের উহান শহরে শনাক্ত হওয়ার ৬৯ দিনের মাথায় সরকার এই প্রথম করোনা রোগী চিহ্নিত হওয়ার ঘোষণা দিলো। আক্রান্তদের মধ্যে একজন নারী ও দুজন পুরুষ। তাদের দুজন ইতালি ফেরত। অন্যজন বিদেশ ফেরৎ আক্রান্ত একজনের পরিবারের সদস্য। এদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
এ তিনজন ছাড়াও আরো দুজনকে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। গতকাল বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) সম্মেলন কক্ষে ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে রেখে লক্ষণ-উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনজন রোগীই ভালো আছেন। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বলেন, ইতালি থেকে আসা দুজন ভিন্ন পরিবারের সদস্য। তবে তাদের একজন বাসায় আসার পর সে বাসাতেও একজন নারী আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি জানান, জ্বর ও কাশি নিয়ে এই তিন ব্যক্তি আইইডিসিআর-এ যোগাযোগ করেন। এরপর গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। শনিবার রোগটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। তাদের সংস্পর্শে থাকা চারজনকে পরীক্ষা করেছি। একজন পজেটিভ। বাকিরা নেগেটিভ হয়েছে। এছাড়াও আরো দুই ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তাদের বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে ব্রিফিংয়ে তিনি এজন্য সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন। বলেন, এখন পর্যন্ত তিনজন আক্রান্ত হয়েছেন। এতে করে সারা বাংলাদেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে এমন কিছু বলা যাবে না। স্কুল-কলেজ বন্ধ করার প্রয়োজন নেই। জনসমাগমের মধ্যে না যেতে পরামর্শ দেবো, বাসাতে থাকাই ভালো। তাদের শনাক্ত করা যায় এমন কিছু প্রশ্ন না করার আহ্বান জানান তিনি। রাস্তাঘাটে চলাফেরায় সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন তিনি। করণীয় বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে যতœবান হতে হবে। এজন্য গণমাধ্যমসহ দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। ঢাকার বাইরে ইউনিটগুলো হাসপাতাল করার প্রস্তুতি আমাদের আছে। এমনকি যদি একান্তই প্রয়োজন হয় তবে স্কুল কলেজ কমিউনিটি সেন্টারে হাসপাতাল দরকার হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই রোগে আতঙ্কিত হয়ে সবাইকে মাস্ক না পরার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেককে মাস্ক পরে ঘুরতে হবে এমন না। আক্রান্ত রোগী ও রোগীকে যিনি সেবা দিবেন তারা মাস্ক পরবেন। তবে আবারও তিনি সম্ভব হলে জনসমাগমপূর্ণ এলাকা, গণপরিবহন ইত্যাদি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, এখন পর্যন্ত উত্তরায় বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও মহাখালী সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য আইসোলেশন হিসেবে রাখা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১ লাখের উপরে আক্রান্ত হয়েছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজার ছাড়িয়েছে। এছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৬০ হাজার ১৯০ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বিশ্বব্যাপী অন্তত ১০৩টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। চীনের উহান শহরে গত বছরের ৩১শে ডিসেম্বর এই ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়। শুধু চীনের আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৬৯৬ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৯৭ জনের। চীনের পর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ১৩৪ এবং মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ইতালিতে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৮৮৩ এবং মৃত্যু হয়েছে ২৩৩ জনের। অপরদিকে, ইরানে এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ৮২৩ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ১৪৫ জন।