নাগরিক ভাবনা ॥ নবনির্বাচিত মেয়রের কাছে প্রত্যাশা
মঈন উদ্দিন আহমদ ॥ সরকারি জায়গা অবৈধ দখল ভরাট ও বাসাবাড়ি নির্মাণের ফলে পানি নিস্কাশনের রাস্তা না থাকায় হবিগঞ্জ শহরের জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ। ফলে শহরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতোপূর্বে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিলেও নানা কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি। গত ২৪ জুন হবিগঞ্জ পৌরসভার উপনির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল হয়। দীর্ঘদিন বিএনপির দখলে থাকা পৌরসভার মেয়রের পদটি লাভ করেন নতুন মুখ আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ মিজানুর রহমান মিজান। তিনি পৌরবাসীর কল্যাণে নানা প্রতিশ্রুতি দেন। তার প্রতিশ্রুতির উপর আস্থা ও বিশ^াস রেখে পৌরবাসীও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে মিজানুর রহমান মিজানকে মেয়র নির্বাচিত করে। মিজানুর রহমান মিজান মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় পৌরবাসীর আশা আকাক্সক্ষা আরো বেড়ে যায়। প্রত্যাশা নতুন মেয়রের বলিষ্ট নেতৃত্বে হবিগঞ্জ পৌরবাসী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবেন।
হবিগঞ্জ শহরের সার্কিট হাউজ এলাকার বাসিন্দা হবিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাহী সদস্য কায়সার আহমেদ চৌধুরী জনি বলেন, জলাবদ্ধতা হবিগঞ্জ শহরের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। এছাড়াও রয়েছে ময়লা আবর্জনা ও অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা। যার ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাটে পানি জমে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অনেক এলাকায় আবার জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে বাসা বাড়িতে পানি প্রবেশ করে। ফলে ওই এলাকায় বসবাসকারীদের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। তাই নতুন মেয়রের কাছে প্রত্যাশা দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমেই তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শহরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। শুধু তাই নয় শহরের ভাঙ্গাচোরা রাস্তা মেরামত ও নির্মাণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন সর্বোপরি পরিকল্পিত নগরায়নের মাধ্যমে পৌরবাসীর আশা আকাক্সক্ষার প্রতি ফলন ঘটাবেন।
হবিগঞ্জ শহরের ঘাটিয়া আবাসিক এলাকার রাজেশ সরকার বলেন, বর্তমানে হবিগঞ্জ শহরের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা, তাছাড়াও রয়েছে অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও ময়লা আবর্জনা। শিশুদের বিনোদনের জন্য নেই কোন পার্ক। ফুটপাত রয়েছে অবৈধ দখলদারদের কবলে। তিনি নতুন মেয়রের কাছে প্রত্যাশা করেন দায়িত্ব গ্রহণের পর নবনির্বাচিত মেয়র শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে তার দেয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করবেন। এ ছাড়াও বিনোদনের জন্য পার্ক, অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে ফুটপাত উদ্ধার এবং বেওয়ারিশ কুকুর ও মশার উপদ্রব থেকে শহরবাসীকে উদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
হবিগঞ্জ শহরের ৯নং ওয়ার্ডের অনন্তপুর এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী মোঃ সেলিম নূর বলেন, শহরের জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্যা রয়েছে। নবনির্বাচিত মেয়র মিজানুর রহমান পৌরবাসীর সাথে পরামর্শক্রমে সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহন করবেন বলে প্রত্যাশা সেলিম নুরের। নিজ স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে পৌরবাসীর কল্যাণ হয় এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করতেও নবনির্বাচিত মেয়রের প্রতি আহবান জানান তিনি।
হবিগঞ্জ শহরের ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তরুণ ব্যবসায়ী মোঃ আলমগীর বলেন, একজন নাগরিকের প্রত্যাশা থাকে সহজে সেবা প্রাপ্তি। পৌর কর্মকর্তা কর্মচারিদের কাছ থেকে যাতে সহজেই একজন নাগরিক সেবা লাভ করতে পারেন তা নবনির্বাচিত মেয়র নিশ্চিত করবেন।
এছাড়া বারবার রাস্তা সংস্কারের ফলে রাস্তার উচ্চতা বাড়ছে এবং পাশর্^বর্তী বাসাবাড়ি নিচে যাচ্ছে। ফলে বৃষ্টি হলে বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করে পৌরবাসীকে পোহাতে হয় দুর্ভোগ। প্রত্যাশা এ বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখবেন নবনির্বাচিত মেয়র। তাছাড়া পৌরসভার হোল্ডিং ট্যাক্স পৌরবাসীর সক্ষমতার মধ্যে রাখা, ড্রেনের উপর স্ল্যাব নির্মাণ এবং বাসাবাড়ি ও দোকানপাটের ময়লা আবর্জনা ফেলতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ডাস্টবিন স্থাপন করতে নবনির্বাচিত মেয়র মিজানুর রহমান মিজানের প্রতি আহবান জানান।
শহরের আনোয়ারপুর বাইপাস রোডের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেন বলেন, বাইপাস এলাকায় শহরের যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা হয়। পথ চলতে গিয়ে দম বন্ধ হয়ে আসে। নবনির্বাচিত মেয়র শহরের ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার ব্যবস্থা কবেন এ প্রত্যাশা। তাছাড়া শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন, বিনোদনের ব্যবস্থা গ্রহণসহ একটি পরিকল্পিত আধুনিক ও নান্দনিক পৌরসভা গঠনে কাজ করবেন এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অনুপ কুমার দেব মনা বলেন, হবিগঞ্জ পৌরসভা একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও এর মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। নবনির্বাচিত মেয়র দলমতের উর্ধ্বে উঠে সততা ও নিষ্ঠার সাথে এর মানোন্নয়নে কাজ করবেন এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি মনে করেন নবনির্বাচিত মেয়র হবিগঞ্জ পৌরসভাকে যুগোপযোগী উন্নয়নের মাধ্যমে আরো অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবেন। রাস্তাঘাট, পানি নিস্কাশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করবেন। দলীয় লোকজনের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে যাতে পৌরবাসীর দুর্ভোগ না বাড়ে সে বিষয়টি সতর্ক দৃষ্টিতে দেখবেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, অতীতে হবিগঞ্জ শহরে অনেক পুকুর ছিল। কিন্তু আজ এর অধিকাংশই দখল হয়ে গেছে। ফলে পৌরবাসীর দুর্ভোগ বেড়েছে। নবনির্বাচিত মেয়র অবৈধ দখলে থাকা পুকুর, খাল পুনরুদ্ধার করে জনগণের উপকার হয় এমন সিদ্ধান্ত নেবেন। পৌরবাসীর দুর্ভোগ বাড়বে এমন কাজ বা সিদ্ধান্ত তিনি গ্রহণ করবেন না। সততার সাথে দুর্নীতি মুক্ত থেকে পৌরসভার কল্যাণে কাজ করবেন মিজানুর রহমান মিজান এ প্রত্যাশা তার।