উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলো সাতছড়িতেই ধংস করা হবে ॥ অস্ত্র ও গোলাবারুদ ধ্বংস করতে সহায়তা করবে সেনাবাহিনী

আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশন এবং র‌্যাব এর একটি চৌকষ আভিযানিক দল হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে ১৩টি রকেট লাঞ্চার সেল, ১১টি চার্জার ও ১৩টি পাইপ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের গভীর জঙ্গল থেকে এসব অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
এদিকে ঢাকা থেকে একটি বোম ডিসপোজেল টিম ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে বলে র‌্যাব-৭ এর অপারেশন কর্মকর্তা এএসপি মোঃ মাশকুর রহমান জানিয়েছেন। তিনি জানান, উদ্ধারকৃত বিস্ফোরকগুলো খুব নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এগুলো আমরা অকুস্থলেই ধ্বংস করে যাবো। এসব অস্ত্র গোলাবারুদ ধ্বংস করতে সহায়তা করবে সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশন (সিলেট) এর অধীন ২১ ইঞ্জিনিয়ারিং কোর এর একটি বিশেষজ্ঞ দল। আজ রবিবার সকাল ১০টায় ঘটনাস্থলে এসব অস্ত্র গোলাবারুদ ধ্বংস করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
শনিবার দুপুরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জাতীয় উদ্যানের পূর্বদিকে কনিমুছড়া এলাকার দক্ষিণে প্রায় এক কিলোমিটার ভিতরে র‌্যাব সদস্য ও সেনা সদস্যরা সিভিল পোষাকে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তারা ঘটনাস্থলে অভিযান চালাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্র মতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর র‌্যাব-৭ একটি দল এবং সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের একটি টিম যৌথভাবে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ট্রেইল দিয়ে বনে প্রবেশ করে অভিযান শুরু করে। অভিযান চলে শুক্রবার সারাদিন এবং গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত। পুরাতন ঢাকা সিলেট মহাসড়কের কনিমুছড়া থকে প্রায় দেড় কিলোমিটার ভিতরে এ অভিযান চালানো হয়। গতকাল বিকেলেও অভিযান চলে।
গতকাল দুপুরে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মশিউর রহমান জুয়েল জানান, অভিযানে ১৩টি রকেট লাঞ্চার সেল, ১১টি চার্জার এবং ১৩টি পাইপ উদ্ধার করা হয়। এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ একটি নীল রংয়ের ড্রামে ভর্তি ছিল বলেও তিনি জানান।
গতকাল দুপুরে সাতছড়ি ঘুরে দেখা যায়, অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালাচ্ছেন। তারা সাংবাদিক পরিচয় জেনে এ প্রতিবেদককে এড়িয়ে যান। বার বার তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও তারা কিছু জানাতে চাননি। তবে সিভিল ড্রেসে থাকা একজন সেনাসদস্য জানান, আমাদের অভিযান চলছে। আমরা বিস্তারিত আপনাদের প্রেস ব্রিফিং করে জানাবো। তিনি জানান, বেশ কিছু এক্সক্লুসিভ পাওয়া গেছে। আমাদের সিও লেঃ কর্ণেল মশিউর রহমান আপনাদের জানাবেন।
এদিকে র‌্যাব-সেনাবাহিনীর এ অভিযানের খবরে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে আসা পর্যটকদের মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে। অনেকেই গতকাল পার্কে এসে অস্ত্র উদ্ধারের কথা শুনে ফেরত চলে যান।
এদিকে এ অভিযানের খবর পাওয়ার পর থেকেই চুনারুঘাট থানা পুলিশের একটি টহল পার্টি পার্ক এলাকায় টহল দিচ্ছে। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। তারা সতর্কাবস্থায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ নাজমুল হক।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে সাতছড়িতে ৪ দফায় ৬ বার অস্ত্র ও গোলাবারুদ পায় র‌্যাব। ১ জুন থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ দফায় ৩৩৪টি কামান বিধ্বংসী রকেট, ২৯৬টি রকেট চার্জার, ১টি রকেট লঞ্চার, ১৬টি মেশিনগান, ১টি বেটাগান, ৬টি এসএলআর, ১টি অটো রাইফেল, ৫টি মেশিন গানের অতিরিক্ত খালি ব্যারেল, প্রায় ১৬ হাজার রাউন্ড বুলেটসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করে র‌্যাব। ১৬ অক্টোবর থেকে ৪র্থ দফার ১ম পর্যায়ে উদ্যানের গহীনের অরণ্যে মাটি খুড়ে ৪র্থ দফায় ৩টি মেশিন গান, ৪টি ব্যারেল, ৮টি ম্যাগজিন, ২৫০ গুলির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ৮টি বেল্ট ও উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি রেডিও উদ্ধার করা হয়। ওই বছরের ১৭ অক্টোবর দুপুরে এসএমজি ও এলএমজি’র ৮ হাজার ৩৬০ রাউন্ড, ত্রি নট ত্রি রাইফেলের ১৫২ রাউন্ড, পিস্তলের ৫১৭ রাউন্ড, মেশিনগানের ৪২৫ রাউন্ডসহ মোট ৯ হাজার ৪৫৪ রাউন্ড বুলেট উদ্ধার করা হয়। এছাড়া এসএমজি’র ২০টি, এলএমজি’র ৫টি, এসএলআর-এর ৬টি, ত্রি নট ত্রি’র ৪টি, এমএমজি ২টি, পিস্তলের ২৯টি ও জি থ্রি’র ১২টিসহ মোট ৮০টি ম্যাগজিন, ৫টি ওয়াকিটকি ও উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি রেডিও সেট উদ্ধার করা হয়।
পরবর্তিতে ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আবারও সাতছড়িতে অভিযান পরিচালনা করে ১০টি হাই এক্সক্লুসিভ ৪০ এমএম অ্যান্টি-ট্যাংক রকেট উদ্ধার করা হয়।