চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে দিশেহারা পরিবার ॥ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার ফুসফুস ছিদ্র হয়ে গেছে ॥ ধাপে ধাপে ১৫ থেকে ১৬ ব্যাগ রক্ত লাগবে তার

রায়হান উদ্দিন সুমন ॥ ব্রাক্ষণবাড়িয়ার কসবায় দুই ট্রেনের সংঘর্ষে গুরুতর আহত বানিয়াচঙ্গের সোহেল মিয়ার অবস্থা হঠাৎ করেই অবণতির দিকে যাচ্ছে। তার স্ত্রী নাজমা আক্তার ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। উভয়ের চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে তার পরিবার। এদিকে সোহেলের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় পঙ্গু হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে আইসিইউতে কোনো সিট না থাকায় বাধ্য হয়ে পরে ধানমন্ডির মাল্টি কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সেখানে আইসিইউ’র ৩ নাম্বার কেবিনে ভর্তি আছেন তিনি। ভর্তি থাকাকালীন অবস্থায় প্রতিদিন তাকে বি-পজেটিভ রক্ত পুশ করতে হচ্ছে। এরই মধ্যে ৮ ব্যাগ রক্ত প্রক্রিয়াজাত করে রক্তের সাদা সেল তার শরীরে পুশ করার কথা জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
গত শুক্রবার ঢাকা পঙ্গু হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন আহত সোহেলের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার ফুসফুস ছিদ্র হয়ে গেছে। ধাপে ধাপে ১৫ থেকে ১৬ ব্যাগ রক্ত লাগবে। এ অবস্থায় হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন করা তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। শুধুমাত্র তার জন্য প্রতিদিনি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।
কথা হয় পঙ্গু হাসপাতালে মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি সোহেলের স্ত্রী নাজমা আক্তারের সাথেও। তিনি জানান, ট্রেন দুর্ঘটনায় আমার একমাত্র মেয়েকে হারিয়েছি এর চেয়ে কষ্ট কি আর হতে পারে। এখন আমার পরিবারের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। আামাদের চিকিৎসার খরচ মেটাতে অনেক টাকা দরকার। আমরা কই পাবো এতো টাকা। দুর্ঘটনায় আহত সোহেলের একমাত্র ছেলে নাফিজের ডান হাত ভেঙ্গে গেছে। বেডের পাশে তাকে তার বাবার দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে দেখা গেছে। চিকিৎসাধীন রয়েছেন তার শাশুড়ি রেনু বেগমও। গুরুতর আহত নাজমার জন্যও একাধিক ব্যাগ রক্তের দরকার বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। একদিকে ট্রেন দুর্ঘটনায় সোহেলের আদরের মামনি আদিবা আক্তার সোহা মারা যায়। শোকে পাথর এই পরিবারটি এখন তাদের চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটাতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
ঢাকায় বসবাসরত বানিয়াচঙ্গের সাংবাদিক রুপক, আ’লীগ নেতা ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল, সাংবাদিক সাখাওয়াত কাওছার, লুৎফুর রহমান, অ্যাডভোকেট আশরাফ হোসেন তিতাস, নাজমুল হোসেনসহ আরো বেশ কয়েকজন তার চিকিৎসার দেখভাল করছেন। সার্বক্ষণিক তার অবস্থার আপডেট দিচ্ছেন তারা। পাশাপাশি সরকারি কোনো হাসপাতালে আইসিইউতে যাতে একটি সিট পাওয়া যায় সেই জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। দেশ বিদেশে অবস্থানরত বিশেষ করে আমেরিকার মিশিগানে প্রবাসী বানিয়াচংবাসীরা আহত সোহেল ও তার পরিবারের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন।
মানবিক দিক বিবেচনা করে বানিয়াচং গ্যানিংগঞ্জ বাজার ও বড়বাজার কাপড় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের পক্ষ হতে চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা আহত সোহেলের পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। আহত সোহেলের পাশে দাঁড়ানোর ফলে কিছুটা আশার আলো দেখা দিয়েছে তাদের মধ্যে। যদি সরকারি কোনো হাসপাতালের আইসিইউতে তাকে রেখে চিকিৎসা দেয়া হতো তাহলে তার পরিবার অনেকটা চিকিৎসার ব্যয়ভার থেকে রেহাই পেত বলে জানিয়েছেন শুভাকাঙ্খিরা।
এ ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে কথা হয় সূদুর আমেরিকার হারডন ভার্জিনিয়ায় অবস্থারত বানিয়াচঙ্গের কৃতি সন্তান মিনহাজ উদ্দিন শরীফ রাসেলের সঙ্গে। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, আহতদের চিকিৎসা সরকারিভাবে হবে এই ঘোষনা প্রধানমন্ত্রী দেয়ার পরও কেউ তার চিকিৎসার খোঁজখবর নিচ্ছে না, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। একটি ছোটখাট চাকরি করতো সোহেল। তার পরিবারের আর্থিক অবস্থাও ভালো নয়। তবে আমরা প্রবাসী মিলে তার চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা উত্তোলন করেছি। সেটা আজকালের মধ্যেই তার পরিবারের কাছে দেয়া হবে। অন্ততপক্ষে টাকার জন্য যাতে তার চিকিৎসা থেমে না থাকে সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি আমরা।
প্রসঙ্গত, গত ১১ নভেম্বর রাত ৩টার দিকে কসবা উপজেলার মন্দবাগ এলাকায় তুর্ণা নিশীতা ও উদয়ন এক্সপ্রেস এই দুই ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। এতে ১৬ জন নিহত ও প্রায় অর্ধশতাধিক যাত্রী আহত হন।