
১৫ বছর পর এলাকায় ফিরেছেন বিএনপির সভাপতি শান্তি
নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নবীগঞ্জ উপজেলার ভাটি অঞ্চলখ্যাত শাখোয়া এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে করগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল কুদ্দুছ সাগর ও ওয়াহিদ মিয়ার নেতৃত্বাধীন ‘সাগর বাহিনী’। এলাকায় সাগর বাহিনীর নেতৃত্বে একাধিক হত্যাকা-ের ঘটনা সংগঠিত হলে ভাটিঅঞ্চলের মানুষের কাছে সাগর বাহিনী আতঙ্কের নামে পরিণত হয়। দেশে পট-পরিবর্তনের কারণে সম্প্রতি একাধিক হত্যা মামলার আসামী ‘সাগর বাহিনী’র প্রধান আব্দুল কুদ্দুছ সাগর গ্রেফতার হলেও বাহিনীর অন্যতম সদস্য তিনটি হত্যা মামলার আসামী ওয়াহিদ মিয়াকে গ্রেফতারের দাবী উঠেছে।
জানা যায়- ২০০৯ সালের ১২ ডিসেম্বর দুপুরে উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের ছোট শাখোয়া মুড়ারপাটলি এলাকায় মিজাজুর রহমানের বাড়িতে ওই গ্রামের কুরুশ আলীর ছেলে আব্দুল কুদ্দুছ সাগর একই গ্রামের ওয়াহিদ মিয়ার নেতৃত্বে দুই শতাধিক লোক দেশীয়-অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় ফিকলের আঘাতে মিজাজুর রহমানের ভাতিজি ইছরাতুন নেছার দেড় বছরের ঘুমন্ত শিশু কন্যা তানিয়া আক্তার লিজা নিহত হয়। হত্যাকা-ের ঘটনায় ইছরাতুন নেছা বাদী হয়ে আব্দুল কুদ্দুছ সাগর ও ওয়াহিদ মিয়াসহ ২৬ জনকে আসামী করে নবীগঞ্জ থানায় মামলা নং- ২৬ দায়ের করেন। ২০১১ সালের ২৯ জানুয়ারি দুপুরে মুড়ার পাটলী এলাকার হাজী আশরাফ উদ্দিনের ছেলে মঈনুল হক শাখোয়া বাজারে নিজের মাছের আড়ৎ এ গেলে ‘সাগর বাহিনী’র অন্যতম সদস্য ওয়াহিদ মিয়ার নেতৃত্বে ৩৫-৪০ জন লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মঈনুল হকের উপর হামলা চালায়। মঈনুল হককে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় মঈনুল হকের ভাই সাহেব আলী বাদী হয়ে ওয়াহিদ মিয়াকে প্রধান আসামী করে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং জিআর ৪২/১১। ওই বছরের ৩ মার্চ ভোরে ওয়াহিদ মিয়ার নেতৃত্বে শতাধিক লোক ফিকলসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মুড়ার পাটলি গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে মো. মোহিত মিয়ার বাড়িতে হামলা চালায়। হামলায় ফিকলের আঘাতে মো. মোহিত মিয়ার ভাই ইউসুফ আলী নিহত হয়। এ ঘটনায় মুহিত মিয়া বাদী হয়ে ওয়াহিদ মিয়াসহ ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করে নবীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা নং-৩ দায়ের করেন। এছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগে ‘সাগর বাহিনী’র অন্যতম সদস্য ওয়াহিদ মিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তৎক্ষালিন সময় ‘সাগর বাহিনী’র অত্যাচারে করগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহাবুদ্দিন শান্তি এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। সর্বশেষ ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন তিনটি হত্যা মামলার আসামী ওয়াহিদ মিয়া। পরে দাপটের কারণে ওয়াহিদ ভাগিয়ে নেন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানের পদও। সম্প্রতি দেশে পট-পরিবর্তনের প্রায় ১৫ বছর পর এলাকায় ফেরেন করগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহাবুদ্দিন শান্তি। গত ২২ ফেব্রুয়ারি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নবীগঞ্জ থানার এসআই সুমন মিয়ার নেতৃত্বে একদল পুলিশ করগাঁও ইউনিয়নের শাখোয়া গ্রামের টুকের বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে মহাসড়কে নাশকতার মামলায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ‘সাগর বাহিনী’র প্রধান আব্দুল কুদ্দুছ সাগরকে গ্রেফতার করে। সাগরের গ্রেফতারের পর ‘সাগর বাহিনী’র অন্যতম সদস্য ওয়াহিদ মিয়াকে গ্রেফতারের দাবী উঠেছে সর্বত্র। ওয়াহিদকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন করগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহাবুদ্দিন শান্তি।
শাহাবুদ্দিন শান্তি বলেন- দীর্ঘদিন সাগর বাহিনীর নির্যাতনের কারণে এলাকা ছাড়া ছিলাম। আল্লাহর অশেষ কৃপায় স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর এলাকায় ফিরতে পেরেছি। সাগর বাহিনীর নির্যাতনে আমার আপন ভাই মঈনুল হক ও চাচাতো ভাই ইউসুফ আলী প্রাণ হারায়। তিনি অতি দ্রুত সাগর বাহিনীর অন্যতম সদস্য একাধিক হত্যা মামলার আসামী ওয়াহিদ মিয়াকে আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানান।
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ থানার ওসি মো. কামাল হোসেন বলেন- ওয়াহিদ মিয়া যদি দোষী হয়, তদন্ত সাপেক্ষে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।