পাঠকের কলাম
আব্দুল আউয়াল তালুকদার
পাকিস্তানী সংগীত শিল্পী আতাহার আলী খানের একটি জনপ্রিয় গান “ভালোবাসা আমাদের জন্য যেমন জরুরী ছিল, তেমনি জরুরী ছিল আমাদের এই বিচ্ছেদও।” জনগণ অনেক আশা আকাক্সক্ষা নিয়ে ভালবেসে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। ১৯৪৯ সালে এই সংগঠনের জন্ম হয়। প্রতিষ্ঠাকালে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি ও শামছুল হক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন। ২০০৮ সালের পর থেকে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ তাল-মাতাল আচরণ শুরু করলো। সব জায়গায় দেখতাম অতি বাড়াবাড়ি, দেশের উন্নয়নের গতি ফিরে পাওয়ার জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড সরকার বাস্তবায়ন করতে থাকে। সব উন্নয়নে দুর্নীতি। আওয়ামী লীগের জন্য বড় ভুল ছিল সেদিন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ি নিয়ে যাওয়া, জোর করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার বিষয়টি জনগণ ভালোভাবে গ্রহন করেননি। অথচ এই ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়াকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধাপরাধী হিসাবে সকল অপরাধীকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। তিনি এজন্য সাধারণ ক্ষমা করেন যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করলে সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি হবে, দেখা দিবে নানান সমস্যা। আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে যুদ্ধাপরাধীর বিচার করায় মানুষের মধ্যে একটি চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি বাংলাদেশের জনগণ ভালোভাবে গ্রহণ করেননি। জনগণের মধ্যে নানান বিভক্তি জন্ম দেয়। ২০১৩ সালে মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বরে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশে হেফাজতে আলেম ওলামাদের সাথে আওয়ামী লীগ যে আচরণ করেছে তাতে জনগণ আওয়ামী লীগের বিপক্ষে চলে যায়। জনগণ দেখলো সরকার আলেমদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করেছে, বাংলাদেশের মানুষ তা ভালোভাবে গ্রহন করেননি। যে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা থেকেই গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, সেই আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন করে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করা শুরু করে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৪টি আসনে বিনা নির্বাচনে প্রশাসন ও পুলিশ বিজয়ী ঘোষণা করে দেশের জন্য লজ্জাজনক অধ্যায় শুরু করে। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রশাসন ও পুলিশ দিয়ে রাতে ভোট করা হয়। জনগণ ভোট দিতে পারে নাই। আমি নিজেও ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট দিতে পারি নাই। তারপর ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঐতিহ্যকে ধ্বংস করা হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উপর নিপীড়নমূলক মামলা মোকদ্দমায় জর্জরিত করে প্রতিহিংসা বাস্তবায়ন করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আরেকটি ভুল আত্মীয়করণ। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল সদস্য মাজারের খাদেমের মত দোকান খুলে বসেন। তারপর এমপি মন্ত্রীদের দুর্নীতি ও দুঃশাসন ছিল সীমাহীন, কেউ প্রতিবাদ করার মত অবস্থা ছিল না। আওয়ামী লীগ শাসনামলে বাংলাদেশের বিচার বিভাগকে ধ্বংস করা হয়েছে। সবসময় বলতাম বিচার বিভাগ ধ্বংস মানে বাংলাদেশের মানুষ অনিরাপদ। তাই হলো।
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালে শেখ হাসিনার নানান সময়ে স্বৈরাচারী আচরণ ও অতি কথাবার্তা দলের জন্য মারাত্মক হুমকী সৃষ্টি করে। দলের নিবেদিত নেতা-কর্মীদের বাধা দিয়ে তেলবাজ লোকদের সামনের সারিতে নিয়ে আসাতেই আওয়ামী লীগের মত জনপ্রিয় একটি দল জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। প্রতিবাদী হয় বাংলাদেশের জনগণ। জনগণ গত ৫ই আগস্ট কোটা আন্দোলনকে সামনে এনে সরকার পরিবর্তন করে দেয়। জনগণের ভালোবাসা নিয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ আবার জনগণের বিপক্ষে অত্যাচার ও অনাচার করার কারণে জনগণ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করে।
লেখক: আব্দুল আউয়াল তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক, হবিগঞ্জ নাগরিক কমিটি