সচেতনতা

তোফাজ্জল সোহেল
সারাদেশের মানুষ আজ কাল কাটাচ্ছেন চরম আতঙ্কের মধ্যে, কে কখন জ্বরে আক্রান্ত হন। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশে আশঙ্কাজনকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু জ¦র। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বা এডিস মশা নিধনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থাও নজরে পড়ছে না। অন্যদিকে সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে বেড়েই চলেছে রোগীর ভিড়।
বর্ষা মৌসুম এলেই এডিস মশার উৎপাত বাড়ে। সবাই জানেন এডিস মশা ডেঙ্গু জ্বরের বাহক। সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বর ছড়িয়ে যাওয়ায় হবিগঞ্জবাসীও আতঙ্কে ভুগছেন। এমতাবস্থায় নাগরিক হিসেবে আমাদের কিছু করণীয় ও দায়-দায়িত্ব এসে পড়ে। সারাদেশের মতো হবিগঞ্জেও ডেঙ্গু জ¦র ধরা পড়েছে অনেকের। অনেককে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা অথবা সিলেটে প্রেরণ করা হয়েছে। তাই এ পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
নিজ নিজ জায়গা থেকে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করতে হবে। তাই আসুন আমরা নিজ দায়িত্বে কিছু কাজ সম্পন্ন করি ও অন্যকে তা করতে আহ্বান জানাই ঃ
§ নিজের ঘরের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা নিজেকেই করতে হবে। ছাদে বা ঘরের ভেতরে যে কোন স্থানে, বাথরুমের বালতি, গাছের টব, ফ্রিজের ট্রে, থালা-বাসন ধোয়ার স্থানে জমা পানি রাখা যাবে না। জমে থাকা পানি পরিস্কার রাখতে হবে। এগুলো নিজেদেরকে মেনে চলতে হবে।
§ বাড়ির আশপাশে ছোট জায়গায় পানি জমতে দেয়া যাবে না কোথাও। নিজের ঘর, বাড়ির ভেতর এবং নিকটতম ঝোপঝাড় পরিস্কার রাখতে হবে। মশা যেহেতু অনুমতি নিয়ে ঘরে ঢুকে না-কামড়ায় না, তাই বাইরের মশাও প্রবেশ করতে পারে। এজন্য রাস্তাতেও ডাবের খোসা, পানির বোতল বা অন্য কিছুতে পানি জমে থাকতে দেখলে নিজে দায়িত্ব নিয়ে ফেলে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
§ মনে রাখতে হবে ডেঙ্গু জ¦রের হাত থেকে বাঁচতে হলে এডিস মশা নিধন তথা “সামাজিক আন্দোলন” গড়ে তুলতে হবে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজটি করতে হবে সমন্বিতভাবে। এখানে প্রশাসন, চিকিৎসক, জনপ্রতিনিধি, সেবামুলক প্রতিষ্ঠান, নাগরিক সমাজ, বিএনসিসি, স্কাউট এদের সম্পৃক্ত করতে হবে। এই শহরে অনেক সামাজিক-সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও উন্নয়ন সংগঠন রয়েছে। শহরকে ডেঙ্গুজ্বরের ঝুঁকিমুক্ত রাখতে তথা পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তুলতে ওই সংগঠনগুলো নিজ নিজ এলাকায় কাজ করতে পারে। এছাড়া স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনাক্রমে ছাত্র-শিক্ষকদের মশা ও ডেঙ্গু বিষয়ক তথ্য প্রচারের কাজে নিয়োজিত করা যেতে পারে।
§ শুধুমাত্র ডেঙ্গু আতঙ্কের জন্য নয়, যে কোন রোগ-বালাই থেকে মুক্ত থাকতে এবং স্বাস্থ্যকর জনপদ গড়ে তোলার জন্য নগরের পুকুর-জলাশয়গুলোকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা বাঞ্ছনীয়। এই শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অনেক পুকুর-জলাশয়, পুরাতন খোয়াই নদীর বেঁচে থাকা নানা স্থানে ঝোপঝাড় কচুরিপানাসহ নানানরকম আবর্জনা বিদ্যমান। দায়িত্বশীল সংগঠন-প্রতিষ্ঠানকে এসব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় ভূমিকা রাখতে হবে।
§ জ¦র হলে অবহেলা করা যাবে না। ঔষধ খেলে জ¦র ভালো হয়ে যাবে, এ জাতীয় ভাবনা যে কারো জন্য ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। জ¦র হলে ডাক্তার দেখাতে হবে। অন্তত ডেঙ্গু হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে নিতে হবে। জ¦রের সময় চোখের পেছনে ব্যথা, বমি বমি ভাব হওয়া, হাড়ের জয়েন্ট বা মাংসপেশীতে ব্যথা, শরীর ব্যথা, চামড়ায় লালচে দাগ, ঘাম দিয়ে জ¦র ছেড়ে দেওয়ার পর আবার জ¦র আসা, মাথা ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে কাছের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
পুনরাবৃত্তি করছি, ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। কোনো অবস্থাতেই কেউ যেনো অবহেলা করে ঘরে বসে না থাকেন। যেকোনো ধরণের জ¦র হোক না কেনো জ¦র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
তোফাজ্জল সোহেল
সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ পরিবেশন আন্দোলন (বাপা), হবিগঞ্জ শাখা ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার।