হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ শায়েস্তাগঞ্জে জমি দখলসহ পুলিশ ও প্রশাসনের অসহযোগিতার অভিযোগ এনেছেন নারী বীরমুক্তিযোদ্ধা মোছা. ফাতেমা বেগম। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন। এসময় তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি সমতা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মহলুল সুনাম মহল্লার স্থায়ী বাসিন্দা বীরমুক্তিযোদ্ধা মোছা. ফাতেমা বেগম লিখিত বক্তব্যে বলেন, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার জগন্নাথপুর মৌজার জেএল নং-১৫৬, খতিয়ান নং-৯৪, দাগ নং-১২০ এর মোট ২২ শতক জমির মধ্যে ১১ শতক জমি ১৯৯৩ সালে রহমত আলী, পিতা সিদ্দিক আলী মহলুল সুনাম এর কাছ থেকে ক্রয় করি। ক্রয় করার পর থেকে অদ্যাবধি ভোগ দখল করে আসছিলাম। কিন্তু সম্প্রতি আমাদের মহল্লার প্রভাবশালী ব্যক্তি তজিম উল্লাহ ও তাহির মিয়ারা আমার ক্রয়কৃত জমি দখল করে ফেলেছেন। এতে আমি বাধা দিলে দখলদাররা আমাকে প্রাণে হত্যার হুমকি দেয়।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমাদের মহল্লার প্রভাবশালী ব্যক্তি তজিম উল্লাহ গং ও তাহির মিয়া গং মহলুল সুনাম শায়েস্তাগঞ্জ কর্তৃক আমার ক্রয়কৃত জমি দখল করে রাখায় এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আপনাদের এখানে নিয়ে এসেছি।
এসময় তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ১৯৭১ সালে দেশ মাতৃকার টানে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। এখন আমি বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছি। শরীরও অসুস্থ। তবে আপনাদের সামনে যা বলতে এসেছি, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার জগন্নাথপুর মৌজা, জেএল নং-১৫৬, খতিয়ান নং-৯৪, দাগ নং-১২০ মোট মোয়াজি ২২ শতকের মধ্যে ১১ শতক ভূমি বিগত ০৬/০১/১৯৯৩ ইং সালে রহমত আলী, পিতা সিদ্দিক আলী মহলুল সুনাম এর কাছ থেকে ক্রয় সূত্রে মালিক আমি। এখানে বাড়ি নির্মাণ করে ভোগ দখল করে আসছি। উক্ত জায়গার ১ শতক জমি ইতিপূর্বে আমার প্রতিবেশি আব্দুর রহিম এর স্ত্রী রহিমা খাতুন গং জোরে দখল করে প্রতিবেশি তজিম উল্লাহ ও তাহির মিয়ার কাছে বিক্রি করে দেয়। তজিম উল্লাহ ও তাহের মিয়া (মামা-ভাগনা) ১ শতক সহ আমার দখলে থাকা জায়গা থেকে আরো আনুমানিক ৩ হাত জাগয়া জোরে দখল করে ঘর নির্মাণ ও রাস্তা তৈরি করে। আমি বাধা দিলে তারা আমাকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। আমি তাৎক্ষণিক বিষয়টি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে অবগত করে বিচার প্রার্থী হই। কিন্তু তারা এলাকার বিচার শালিস মানে না। পক্ষান্তরে আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
গত ১৬/৪/২০২৩ইং তারিখে রাত আনুমানিক ১০.৩০ ঘটিকায় সময় জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে উল্লেখিত ব্যক্তিগণ আমাকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে এবং অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ করে। ২৬/০৪/২০২৩ইং তারিখে সকাল আনুমানিক ১১ ঘটিকার সময় তারা আমার জায়গাতে মাপযোগ করতে যায়। আমি এগিয়ে গেলে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দেয়। আমি প্রাণনাশের ভয়ে পালিয়ে আসি। এসব ঘটনার পর আমি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত হবিগঞ্জ এ মামলা দায়ের করি। দরখাস্ত মোকদ্দমা নং- ৩৯০/২০২৩। পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালত অফিসার ইনচার্জ শায়েস্তাগঞ্জ থানাকে নালিশা ভূমিতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ প্রদান করলে শায়েস্তাগঞ্জ থানার এসএসআই মোঃ ইকবাল হোসেন ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৪৪ ধারা জারি করেন। পরবর্তীতে গত ০৮/০৯/২০২৩ইং তারিখে বিকাল আনুমানিক ৫.৩০ ঘটিকায় তারা ১৪৪ ধারা আইন ভঙ্গ করে ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করে। আমি গিয়ে দেখি তাহির মিয়ার ভাগনা আজিজ উল্লাহ একজন রাজমেস্তুরীর সহকারী নিয়ে কাজ করছে। আমি ১৪৪ ধারা ভঙ্গের কারণ জিজ্ঞাস করলে তাহির মিয়ার স্ত্রী ফুলেছা বেগম, তার ছেলে সাহাব উদ্দিন সুজন গং আমাকে মারতে উদ্যত হয়। আমি ভয়ে বাসায় ফিরে যাই এবং শায়েস্তাগঞ্জ ইউএনও ও শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি সাহেবকে ফোনে বিষয়টি অবগত করি।
উক্ত দাগের মোট মোয়াজি ২২ শতক জায়গা পরিমাপ করার জন্য হবিগঞ্জ আদালতে মামলা মামলা চলমান। তাছাড়া তজিম উল্লার জায়গার উপরে অগ্র মামলা জারি রয়েছে এবং আমি তজিম উল্লার দলিলের সমপরিমান টাকা আদালতে জমা দিয়েছি। যা আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। কিন্তু আজ আমি অসহায় হয়ে সাংবাদিকদের কাছে এসেছি।