স্মৃতিচারণ
আব্দুল আউয়াল তালুকদার
সহ সভাপতি, হবিগঞ্জ সাহিত্য পরিষদ

ছোটবেলা থেকেই বইপড়া পত্রিকা, বই সংগ্রহ বিষয়ে করা আলাদা একটা অনুভূতি কাজ করত। আমার মরহুম পিতা আমাকে নানান সময়ে বইপত্র পত্রিকা, চিঠিপত্র সংগ্রহ করতে উদ্বুদ্ধ করতেন। আমি সুন্দরভাবে ঘুচিয়ে সংগ্রহ করে রাখতাম। বৃন্দাবন সরকারি কলেজে পড়াকালীন সময়ের হবিগঞ্জের সাহিত্য অঙ্গনের আলোকিত ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ সিরাজ হকের সান্নিধ্য পাই প্রাইমারি স্কুলে যখন পড়াশোনা করি তিনি তখন হবিগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছিলেন। আর প্রাইমারী স্কুলটি অধ্যক্ষ সিরাজ হকের পরিবারে দেওয়া জমিতে প্রতিষ্ঠিত ছিল। ১৯৯৮ সালের দিকে কথা বলছি। অধ্যক্ষ সিরাজ হকের সাথে দেখা হলেই শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করতেন। তিনি কিভাবে হবিগঞ্জ সাহিত্য পরিষদের ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন তাঁর ইতিহাস শুনাতেন আর মনে মনে আগ্রহ সৃষ্টি হত যদি আমাকে হবিগঞ্জ সাহিত্য পরিষদের সদস্য করতেন। পরবর্তীতে স্যারের সাথে হবিগঞ্জে বিভিন্ন সভাতে অংশ গ্রহন করি। অধ্যক্ষ সিরাজ হক আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের সভাপতি ছিলেন। তিনি আঞ্জুমানের সদস্য সংগ্রহ করা সভাতে অংশগ্রহন করা, আঞ্জুমানে ম্যাগাজিন বিতরণ করা, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে যোগাযোগ সহ সকল কাজে উপস্থিত থাকতাম। আমার উৎসাহ এবং আগ্রহ দেখে অধ্যক্ষ সিরাজ হকের সকল সাহিত্য কর্মে আমাকে সম্পৃক্ত করেন। অধ্যক্ষ সিরাজ হক তখন শায়েস্তাগঞ্জ সাবাসপুর গ্রামে বসবাস করতেন। স্যারের বাসা আর আমার বাসা কাছাকাছি। এর মধ্যে শায়েস্তাগঞ্জ এলাকা শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি যারা লালন ও চর্চা করেন তাদেরকে নিয়ে শায়েস্তাগঞ্জ সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ গঠন করেন। অধ্যক্ষ সিরাজ হক সভাপতি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। পরবর্তীতে হবিগঞ্জ সাহিত্য পরিষদের দপ্তর সম্পাদক মনোনীত করেন। হবিগঞ্জ সাহিত্য পরিষদের সাহিত্য পাঠের আসর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মমৃত্যু, নজরুলের জন্মমৃত্যু বার্ষিকী, জসীম উদ্দিন অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজন, ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা সংকলন বের করা, জাতীয় দিবস উদযাপন করা, গুণীজনকে সম্মানিত করা সাহিত্য সভা করা বইয়ের প্রকাশনা আয়োজন করা। হবিগঞ্জ সাহিত্য পরিষদের সকল সভা, সেমিনার আয়োজনে হবিগঞ্জ পৌরসভার মিলনায়তন, টাউন হল, জেলা ক্রীড়া সংস্থার মিলনায়তন, ডাঃ মোঃ জমির আলী সাহেবের বাসভবন। কবি জলিল উদ্দিন রইসের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দোতলায় অফিস ছিল এবং হবিগঞ্জ সাহিত্য পরিষদের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক তরফদার মুহাম্মদ ইসমাইল সাহেবের বাসভবন। হবিগঞ্জ সাহিত্য পরিষদের নজরুল ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মমৃত্যু বার্ষিকী অনুষ্ঠান হবিগঞ্জ শহরে নিয়মিত আয়োজন করা হত। অনেকই হিংসা করতেন তৎকালীন সময়ে যারা শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। এত অনুষ্ঠান প্রতি মাসে আয়োজন করা হত এবং হবিগঞ্জ সাহিত্য পরিষদের অনুষ্ঠানগুলো প্রাণবন্তভাবে আয়োজন করা হতো। আমাদের সব সময় একটা লক্ষ্য ছিল হবিগঞ্জ সাহিত্য পরিষদ যেন কোন রাজনৈতিক সংগঠনের মুখপাত্র না হয় সেই লক্ষ্যে সব সময় নিরপেক্ষ জায়গা থেকে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনকে আমন্ত্রণ দিয়ে আমাদের সকল কর্মকান্ড পরিচলনা করা হত। হবিগঞ্জে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের একটা প্লাটফর্ম ছিল হবিগঞ্জ সাহিত্য পরিষদ। কত ঝড় বৃষ্টি রজনী রাতে নজরুল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আলোচনা সভা হয়েছে। প্রাণবন্ত আলাপ আলোচনা শুনতে ভাল লাগত। উক্ত অনুষ্ঠানসমূহে হাজির থাকতেন সাবেক এমপি চৌধুরী আব্দুল হাই, আবু লেইছ মোঃ মুবিন চৌধুরী এডভোকেট আব্দুল মোছাব্বির এমপি এডভোকেট আতিক উল্লাহ, এনামুল হক মোস্তাফা শহীদ এমপি, এডভোকেট আবু জাহির এমপি, এডভোকেট আব্দুল মজিদ খান এমপি, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মেজর মুহাম্মদ আব্দুল মোকতাদির, অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ, প্রফেসর নিখিল রঞ্জন ভট্টাচার্য্য, কবি ও প্রাবন্ধিক এম এ রব, এডভোকেট সাইদুর রহমান, ব্যাংকার তাজুল ইসলাম, প্রফেসর নন্দলাল শর্মা, প্রফেসর এসএম ইলিয়াছ, প্রফেসর জাহান আরা খাতুন, জাহানারা আফছর, এডভোকেট মোছাদ্দেকা আক্তার নেলী, আলাউদ্দিন আহমেদ, তরফদার মুহাম্মদ ইসমাইল, অধ্যক্ষ সিরাজ হক, সৈয়দ তাহির আলী বশনী, সৈয়দ মোস্তাফা কামাল, সৈয়দ হাসান ইমাম, হোছাইনী চিশতী, সৈয়দ আব্দুল্লাহ, এডভোকেট শাহজাহান বিশ্বাস, পাথসারথি চৌধুরী, সুব্রত চক্তবর্তী, প্রফেসর হারুন মিয়া, প্রফেসর ইলিয়াছ বখত জালাল, এডভোকেট পূন্যব্রত চৌধুরী বিভু, এডভোকেট ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন, কবি শরদিন্দু ভট্রাচার্য টুটুল, কবি অপু চৌধুরী, সিদ্দিকী হারুন, রুমা মোদক, প্রভাষক গৌতম সরকার, প্রভাষক নাসরিন হক, আব্দুল মোতালেব মমরাজ, প্রাক্তন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী মমিন, ডাঃ মোঃ জমির আলী, এডভোকেট এসএম ইলিয়াছ, বাছিত চৌধুরী, তাহমিনা বেগম গিনি, মনসুর উদ্দিন ইকবাল এডভোকেট। হবিগঞ্জ সাহিত্য পরিষদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে কর্মকতারা যোগদান করে আমাদের সংগঠনকে আলোকিত করেছেন তাদের মধ্যে আনোয়ারুল ইসলাম শিকদার, মুজিবুর রহমান, মাহমুদ হাসান, আতাউর রহমান, মনীন্দ্র কিশোর মজুমদার, সাবিনা আলম, মাহমুদুল কবীর মুরাদ, জয়নাল আবেদীন, কামরুল হাসান, মনীষ চাকমা, ইশরাত জাহান, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম মোস্তাফা কামাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নজরুল গবেষক, মোহাম্মদ জাকির হোসেন, আমিনুল ইসলাম, জ্যোতি লাল কুরি, মোহাম্মদ আবদুর রউফ, আব্দুল ওয়াদুদ, দিলীপ কুমার বণিক প্রমুখ কর্মকর্তার নাম এই মুহূর্তে মনে পড়ছে। দিন যায় মাস যায় কত স্মৃতি মনের মধ্যে ভেসে ওঠে হবিগঞ্জ সাহিত্য অঙ্গনের পদচারণায় মুখরিত ছিল হবিগঞ্জ শহর। হবিগঞ্জ শহরে কত সুনামধন্য ব্যক্তি ছিলেন যাদের দাওয়াত দিলে তারা খুশী হতেন হাজির থাকতেন।
হবিগঞ্জ সাহিত্য পরিষদের সকল সভার উপস্থাপনার দায়িত্ব ছিল আমার উপর। অনুষ্ঠানে শেষ হলে কত লোকের বকা শুনতে হতো আর কত লোকের কাছে মাফ চাইতে হতো আজ এই পরিণত বয়সে এসে সেই দিনের স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। পুরানো দিনের স্মৃতিগুলো ভেসে বেড়াই। আর মনে মনে হাসি হবিগঞ্জ লোকজ সাহিত্য অন্যতম পুরাটা ব্যক্তিত্ব ও হবিগঞ্জ সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তরফদার মুহাম্মদ ইসমাইলের অনুষ্ঠানে উপস্থিত করার কৌশল শেখার মন্ত্র দেখে। পুরানো দিনের স্মৃতি প্রসঙ্গে মনে পড়ে একবার নজরুল রবীন্দ্রনাথ জন্ম জয়ন্তী অনুষ্ঠানে সুরবিতানে হবিগঞ্জের খুব ঝড় হলো সারা হবিগঞ্জ শহর অন্ধকার রাত ১১টা গিয়ে হাজির হলাম হবিগঞ্জের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সুব্রত চক্রবর্তী বাসায় এত রাতে দাদা আমাদের দুইজনকে দেখে বললেন এত রাতে সাহিত্য অনুষ্ঠানে কেউ দাওয়াত দিতে বৃষ্টি রাতে কেউ আসে? হবিগঞ্জ সাহিত্য পরিষদের কোন অনুষ্ঠান হলে আমি ও তরফদার মোঃ ইসমাইল ভাই দুই তিন দিন আমাদের হবিগঞ্জের বিশিষ্ট্য ব্যক্তিবর্গকে হাজির করার জন্য চেষ্টা ও যোগযোগ করে সভাগুলোতে উপস্থিত করতাম। তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতিযোগিতায় জেলা প্রশাসনের সহযোগিতার কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। নানা ভাবে প্রতিযোগিতার জন্য নানান সরঞ্জাম এবং উপস্থিতি করার বিষয়ে সহযোগিতা করতেন।