এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জ শহরের পুরাতন খোয়াই নদী উদ্ধারে আবারও কাজ করবে জেলা প্রশাসন। এ লক্ষ্যে নদীটির সৌন্দর্য্য বর্ধনে যা করা দরকার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা-ই করা হবে। গত রবিবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও শহরকে যানজট মুক্ত করণ, শায়েস্তাগঞ্জের স্প্রে পার্টি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ আরো বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আইন-শৃঙ্খলা সভায়।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক দেবী চন্দ দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে জানান, খোয়াই নদীর সৌন্দর্য্য বর্ধনে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যা যা করার দরকার সবই করা হবে। এ জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা কাজ করবো। আমরা চাই নদীটির প্রাণ ফিরিয়ে আনতে। উচ্ছেদ অভিযান কবে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন-যখন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে তখন সাংবাদিকদের জানানো হবে। এদিকে পুরাতন খোয়াই নদী দখল, ভরাট আর দূষণে বিপন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অনেক স্থানেই অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে এক সময়ের খরস্রোতা এ নদীটি।
হবিগঞ্জ শহরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ নদীটির অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করেন। কিন্তু মাত্র কিছু অংশ উচ্ছেদ করার পরই হানা দেয় কোভিড-১৯ ভাইরাস। এরপর থেমে যায় উচ্ছেদ। ৩ বছর উচ্ছেদ বন্ধ থাকার সুযোগে অনেক স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে ফের নদীটি দখলের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে উচ্ছেদ কার্যক্রম পুনরায় শুরু করাসহ সৌন্দর্য্য বর্ধনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে পরিবেশবাদীরা স্মারকলিপি দিয়েছেন। পরিবেশবাদী নেতারা বলছেন দখল, ভরাট ও দূষণে নদীটি ধ্বংস হওয়ার কারণে শুধু পরিবেশ বিপর্যয়ই নয়, ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই হবিগঞ্জ শহরের মানুষ জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েন। তাই অবিলম্বে পুরাতন খোয়াই নদীটিকে রক্ষা করার বিকল্প নেই। সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সবচেয়ে বড় বাধা পরিত্যক্ত এ খোয়াই নদী। মাছুলিয়া থেকে হরিপুর-নাতিরাবাদ হয়ে বগলাবাজার, মাছবাজার পর্যন্ত খোয়াই নদীর দৈর্ঘ্য ৫ কিলোমিটার। বর্ষা মৌসুমে শহরের বৃষ্টির পানি ধারণ ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় খোয়াই নদীর ভূমিকা অপরিসীম। এটি শহরের অন্যতম জলাধার। অথচ একটি স্বার্থান্বেষী মহল নদীটিকে অব্যাহতভাবে দখল করার কারণে এর শেষচিহ্নও মুছে যেতে চলেছে। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ দখল, ভরাট ও দূষণের কারণে খোয়াই নদীটি চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। শহরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে নদীর সীমানা নির্ধারণ করে উভয় তীরের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করে জেলা প্রশাসন। এ সময় নদী খনন, ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ সৌন্দর্য বর্ধনের একটি পরিকল্পনা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। অকাল বন্যার হাত থেকে কৃষি জমি ও বাড়িঘর বাঁচাতে একই পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত করা হয় খোয়াই নদীর রক্ষণাবেক্ষণও। যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের নাম দেয়া হয় ‘হবিগঞ্জ জেলার খোয়াই রিভার সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্প’। এর মাঝে শুধু পরিত্যক্ত খোয়াই নদীর প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৯৮ কোটি টাকা।