আদালতে স্বামী-স্ত্রী’র স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
যুদ্ধাপরাধ মামলায় কারাগারে থাকা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মধু মিয়ার পুত্র হাফিজুল ইসলাম ও হাবিব এ মামলার আসামি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ শহরের চাঞ্চল্যকর ফুসকা কর্মচারী নিজাম উদ্দিন হত্যা মামলায় আটক আমেরিকা প্রবাসী স্বামী-স্ত্রী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরকীয়া প্রেমিক নিজাম আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। আর এ বিষয়টি কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমল-১ আদালতে স্বামী-স্ত্রী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন। জবানবন্দি শেষে স্বামী-স্ত্রীকে বিজ্ঞ বিচারক হবিগঞ্জ জেলা কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।
সূত্র জানায়, নিজাম হত্যা মামলার প্রধান আসামি আমেরিকা প্রবাসী, হবিগঞ্জ শহরের নিউ মুসলিম কোয়ার্টার এলাকার বাসিন্দা মৃত কুদরত উল্লার পুত্র মোঃ হানিফ উল্লা (৩৫) ১২ বছর আগে শ্যামলী এলাকার রোমানা আক্তারকে (৩০) প্রেমের মাধ্যমে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তাদের কোলজুড়ে দুটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। এর মাঝে ১০ বছরের এক সন্তান (প্রতিবন্ধী) ও ৫ বছরের আরেকটি সন্তান আছে। হানিফ উল্লা কয়েক বছর আগে আমেরিকা চলে যান। স্বামীর অনুপস্থিতে তার স্ত্রী রোমানা আক্তার মাধবপুর উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের ইমাম উদ্দিনের পুত্র, হবিগঞ্জ শহরের কলেজ রোডের ঢাকা ফুসকা হাউজের শ্রমিক নিজাম উদ্দিন (২৫) এর সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। প্রায়ই তারা গোপন অভিসারে মিলিত হতেন। প্রায় ১ মাস আগে হানিফ উল্লা দেশে আসেন। ১৭/১৮ দিন আগে রোমানার সাথে নিজামকে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করেন হানিফ। এক পর্যায়ে উভয়কে শাসিয়ে দেয়া হয়। এরপরও তারা পরকীয়া সম্পর্ক চালিয়ে যায়। তখন হানিফ উল্লা ও অন্য আসামিরা নিজামকে হত্যার পরিকল্পনা করে। গত ১২ মার্চ রাত ৯টার দিকে নিজামকে রোমানার মাধ্যমে ফোন করে ডেকে আনা হয় একটি গ্যারেজে। সেখানে হানিফ উল্লাসহ অন্য আসামিরা তাকে হত্যা করে লাশ গুম করার চেষ্টা করে। তাছাড়া, রোমানা তার প্রেমিক নিজাম উদ্দিনকে আপন করে পেতে আমেরিকা নেয়ার স্বপ্ন দেখায়। সে অনুযায়ী পাসপোর্টও করায়। ভিসা পাইয়ে দিতেও চেষ্টা করে। আর এ প্রলোভনই নিজামের কাল হয়ে দাঁড়ায়। হত্যার পর পরই হানিফ উল্লা ও রোমানা বাচ্চাদের নিয়ে আমেরিকা চলে যাওয়ার চেষ্টাকালে বিমানবন্দর থেকে ইমিগ্রেশন পুলিশ গত মঙ্গলবার তাদের আটক করে। আটকের পর গত বুধবার তাদের হবিগঞ্জ নিয়ে আসা হয় এবং সদর থানা পুলিশ তাদেরকে নিয়ে বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে এবং হত্যায় ব্যবহৃত জিনিসপত্র উদ্ধার করে।
হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি মোঃ মাসুক আলী জানান, নিজামের হত্যা রহস্য উদঘাটন হয়েছে। আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। অন্য আসামী ধরতেও পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। অচিরেই সকল আসামি ধরা পড়বে।
প্রসঙ্গত, নিজাম উদ্দিন হত্যার ঘটনায় তার পিতা বাদি হয়ে গত ১৫ মার্চ উল্লেখিত আসামীসহ বানিয়াচং উপজেলার বিথঙ্গল গ্রামের যুদ্ধাপরাধ মামলায় কারাগারে থাকা সাবেক চেয়ারম্যান মধু মিয়ার পুত্র হাফিজুল ইসলাম ও হাবিবকে আসামি করে মামলা করেন।