ফিরে দেখা ২০২০ সাল
চাচার হাতে ভাতিজা, ভাইয়ের হাতে ভাই, বন্ধুর হাতে বন্ধু এবং বছর শেষে
দুলাভাই’র হাতে শ্যালিকা খুনের ঘটনা ছিল আলোচিত
চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা ২০২০ সালে বছর জুড়ে বালু, গাছ ও মাদক পাচার নিয়ে আলোচনায় থাকলেও চাচার হাতে ভাতিজা, ভাইয়ের হাতে ভাই, বন্ধুর হাতে বন্ধু এবং বছর শেষে দুলাভাইয়ের হাতে শ্যালিকা খূনের ঘটনা ছিল আলোচিত। বছর জুড়ে কমপক্ষে ১২টি খুনের ঘটনা ঘটলেও আলোচনায় ছিল আত্মীয়ের হাতে আত্মীয়ের খুনের এসব ঘটনা। আলোচনায় ছিল অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান ও জেল জরিমানা।
বিদায়ী বছরের ২ জুলাই উপজেলার কেউন্দা গ্রামে কবরস্থানের সীমানা পিলার নিয়ে ভাতিজা মিজান ও রমজানের চাচা জিতু মিয়া (৬৪) নিহত হয়। নিহত জিতু মিয়া গ্রামের হাজী আব্দুল হাকিমের ছেলে। ৮ জুলাই উপজেলায় আমু চা বাগানের খাসপাড়ায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে বড় ভাই ফজলু মিয়ার (৪৮) দায়ের কুপে ছোট ভাই বকুল মিয়া (৪৫) খুন হন। নিহত বকুল উপজেলার দেওরগাছ ইউনিয়নের ঝুড়িয়া গ্রামের। ২০ এপ্রিল উপজেলার গাজীপুর গ্রামে রেল লাইনে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে মারপিটের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে বন্ধু ফয়সলের হাতে অপর বন্ধু সজিব মিয়া (১৮) খুন হয়। ফয়সল গাজীপুর গ্রামের মৃত নুর হোসেনের ছেলে ও সজিব একই গ্রামের উস্তার মিয়ার ছেলে। তারা উভয়ই ভাল বন্ধু ছিল বলে এলাকাবাসী জানায়। সবগুলো ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে এবং পুলিশ আসামী গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। তবে ভাইয়ের হাতে ভাই, চাচার হাতে ভাতিজা এবং বন্ধুর হাতে বন্ধু খুনের এসব ঘটনা নিয়ে এলাকায় নানা আলোচনা ছিল বছর জুড়েই।
২০২০ সালের আরেক আলোচিত ঘটনার মধ্যে মাদক ব্যবসায়ীর হাতে প্রতিবাদকারী স্কুলছাত্র রাব্বি হত্যার ঘটনা। ২০ মে উপজেলার বগাডুবি গ্রামের পরিত্যক্ত রেললাইনের পাশে মাদক ব্যবসায়ীর এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে মারা যায় রাব্বি নামে এক স্কুল ছাত্র। সে মাদক পাচারে বাধা দিলে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী উপজেলার নয়ানী গ্রামের কামাল ও তার সহযোগিতা তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। নিহত রাব্বি উপজেলার বগাডুবি গ্রামের দিনমজুর ফিরোজ আলীর ছেলে। এ ঘটনায় ফুঁসে উঠে উপজেলার সুশীল সমাজসহ সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন ও আন্দোলন করে। পুলিশ প্রধান আসামী কুখ্যাত কামালকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠালে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এছাড়া ৫ ডিসেম্বর উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের লালচান্দ গ্রামের হিরন মিয়ার ছেলে সোহাগ মিয়া হত্যা, ১৬ ফেব্রুয়ারী উপজেলার সাতছড়ি চা বাগানের বাজার টিলায় খোকন সাওতাল (৩০) নামে এক চা শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা, ৯ মে উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে চালককে হত্যা করে পিকআপ ছিনতাইয়ের ঘটনাও ছিল আলোচিত। পুলিশের বিচক্ষণতায় অবশ্য পুলিশ এ হত্যা রহস্য বের করে এবং সকল ঘাতককে গ্রেফতার করে। এর বাইরে আরো কমপক্ষে ১০/১২টি হত্যার ঘটনা ঘটে।
বছরের শেষে আরেক আলোচিত ঘটনা ছিল দুলাভাইয়ের হাতে শ্যালিকা হত্যা। ২২ ডিসেম্বর উপজেলার শেখেরগাও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। দুলাভাই সোহাগ (৩০) কে পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে সে সকল ঘটনা স্বীকার করে এবং আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে।
তবে বছর জুড়ে মাদক ও বালু পাচার নিয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা গরম থাকলেও প্রশাসনের অর্ধশতাধিক অভিযানে ড্রেজার মেশিন পুড়িয়ে নষ্ট, হাজার হাজার ফুট পাইপ ভেঙ্গে নষ্ট এবং যুবলীগ নেতাসহ কমপক্ষে ২৫ জন বালু পাচারকারীকে জেল জরিমানা ছিল উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে উপজেলার দ্বারাগাও গ্রামে দুবার অভিযানে ৭০টি ড্রেজার মেশিন ও প্রায় ৫ হাজার ফুট পাইপ পুড়ে নষ্ট করা এবং যুবলীগ নেতা কাউসারসহ ৩ জনকে ১ বছর করে কারাদন্ড ছিল আলোচিত।
চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলী আশরাফ জানান, চুনারুঘাটে গত বছর যেসব হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে, এদের প্রায় অধিকাংশ ঘটনার আসামী গ্রেফতার হয়েছে এবং জেলহাজতে আছে। এছাড়া ক্লুলেস হত্যা মামলাগুলোরও তথ্য আমরা উদঘাটন করতে পেরেছি। বিশেষ করে সাতছড়িতে চালক এবং রানীগাও ইউনিয়নের যোগী টিলায় হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়েছে।
এ বিষয়ে সহকারি কমিশনার (ভূমি) মিল্টন কুমার পাল বলেন, বিগত বছরে অবৈধ ও নীতিমালা বহির্ভূত বালু উত্তোলন নিয়ে আমরা অতিষ্ঠ ছিলাম। সেই সাথে আমরা কোন আপোষ করিনি, অবৈধ বালুর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান ছিল ও থাকবে।