মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছেন শায়েস্তাগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছেন শায়েস্তাগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ। তাদেরকে নিয়ে শায়েস্তাগঞ্জের জনগণ সকল সময়েই গর্ববোধ করেন। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে রয়েছেন- রণবীর পাল চৌধুরী, মোঃ আব্দুল কবির, গৌর প্রসাদ রায়, প্রাণেশ দত্ত, মোঃ সাবেদ আলী, মোঃ শফিকুর রহমান, সুনীল কুমার দেব রায়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রণবীর পাল চৌধুরী শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার দাউদনগর বাজারের প্রয়াত ডাঃ গিরিন্দ্র কুমার পাল চৌধুরীর দ্বিতীয় পুত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে ঢাকা থেকে বাড়িতে চলে আসেন। ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী শায়েস্তাগঞ্জে প্রবেশ করলে তিনি বাই সাইকেলে চড়ে ভারতের খোয়াই শহরে গিয়ে পৌঁছান। সেখান থেকে আগরতলা গিয়ে ত্রিপুরার তদানীন্তন গভর্ণর বালেশ্বর প্রসাদের সহ-ধর্মিনী উমা প্রসাদের সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুটিং স্কুল প্রতিষ্ঠা করে প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে প্রশিক্ষক কেভি সিং এর পরিচালনায় লেবুছড়া ক্যাম্পে গেরিলা ট্রেনিং গ্রহণ শেষে ৩নং সেক্টরের অধীন সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন এজাজ আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে মাধবপুরের তেলিয়াপাড়াসহ অসংখ্য সফল অপারেশনে অংশ নেন।
মোঃ আব্দুল কবির। শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার সাবাসপুরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম। ১৯৭১ সালে দেশ মাতৃকার টানে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন। প্রথমে তিনি ভারতের বাঘাইবাড়ি ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৩নং সেক্টরের অধীন সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন এজাজ আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি একজন খাঁটি দেশ প্রেমিক। স্বাধীনতা পরবর্তী তিনি সমাজ সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। নিজ খরচে শায়েস্তাগঞ্জের সাবাসপুরে জহুর চাঁন বিবি মহিলা কলেজ এবং হবিগঞ্জ শহরতলীর আনন্দপুরে কবির কলেজ নামে দুটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও এলাকায় কয়েকটি মসজিদ নির্মাণসহ নানা সামাজিক কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন।
গৌর প্রসাদ রায় শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার পুরানবাজার এলাকার স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ব্রজেন্দ্র লাল রায়ের পুত্র। তিনি ১৯৭১ সালে ভারতের আগরতলা কংগ্রেস ভবনে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য নাম লেখান। তিনি ৩নং সেক্টরের অধীন সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন এজাজ আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে কোম্পানী কমান্ডার লেঃ ওয়াকিউজ্জামানের অধীন প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে মনু নদীর তীর, নয় মৌজা, চাতলাপুর, ভিওপি, টেংরাবাজার, রাজনগর, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিশ্বনাথ, মোগলাবাজারসহ অসংখ্য স্থানে যুদ্ধরত ছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধা প্রাণেশ দত্ত প্রয়াত প্রভাত দত্তের পুত্র। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি সপরিবারে শায়েস্তাগঞ্জ ছেড়ে ভারতের আগরতলায় চলে যান। সেখানে তিনি প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখেন। দেশ স্বাধীনের পর পুনরায় শায়েস্তাগঞ্জে ফিরে আসেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সাবেদ আলী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরের সেনা সদস্য ছিলেন। তিনি শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নুরপুর ইউনিয়নের মরহুম সোহরাব আলীর জ্যেষ্ঠ পুত্র। তিনি মেজর কেএম সফিউল্লার নেতৃত্বে পরিচালিত ৩নং সেক্টরের অধীনে সাব সেক্টর কমান্ডার লেঃ হেলাল মোর্শেদের নেতৃত্বে পরিচালিত মেডিকেল কোরে যোগদান করেন। ক্যাম্পে আগত যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আহতদের সেবা দিয়ে নিজেকে নিয়ে যান এক অনন্য উচ্চতায়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শফিকুর রহমান শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার দক্ষিণ বড়চর গ্রামের মরহুম আঃ নুরের পুত্র। তিনি ১৯৭১ সালে ভারতে সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন আব্দুল মতিনের ক্যাম্পে গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে সরাসরি গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন।
মুক্তিযোদ্ধা সুনীল কুমার দেব রায় শায়েস্তাগঞ্জের বড়চর গ্রামের প্রয়াত শচীন্দ্র দেব রায়ের পুত্র। তিনি ভারতের আসাম তেজপুর ট্রেনিং সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২নং সেক্টরের অধীনে সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর এটিএম হায়দারের নেতৃত্বে কুমিল্লা, আখাউড়া ও ভৈরবের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে অংশ নেন। তার ভাই সুনীল দেব রায়ও একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
এ ছাড়া শায়েস্তাগঞ্জের আরও অনেক বীর সেনানী দেশ মাতৃকার টানে জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়ে অসামান্য অবদান রাখেন।