মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ ডিজিটালাইজেশনের পূর্ব শর্ত হলো শিক্ষা। শিক্ষা ছাড়া ডিজিটালাইজেশনের সুবিধা ভোগ করা সম্ভব নয়। তাই ডিজিটালাইজেশনের সুফল ভোগ করতে হলে দলিত জনগোষ্ঠীকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে চুনারুঘাটের আমু চা বাগানের বাসিন্দা চা-জনগোষ্ঠী ভূমি অধিকার ছাত্র-যুব আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মুখেশ কর্মকার বলেন- ডিজিটালাইজেশনের পূর্ব শর্ত হলো শিক্ষা। যাদের লেখাপড়া কম তাদের পক্ষে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করা সম্ভবপর নয়। আমাদের বাংলাদেশে ডিজিটাল চর্চা করার মতো এখনো এক টাইপ ছাড়া খুব একটি সুযোগ নেই। সেই ক্ষেত্রে যদি আমরা দলিত জনগোষ্ঠীকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পারি তাহলে আমাদের পক্ষে দলিত জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করানো কঠিন হয়ে পড়বে। একটি বিষয় লক্ষণীয় যে অনেক দলিত জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। সেই দলিত জনগোষ্ঠী নিজেদের মধ্যে আলোচনার সময় নিজেদের ভাষা ব্যবহার করে। পাশাপাশি অন্য সম্প্রদায়ের সাথে আলাপ করার সময় তাদের বাংলা ব্যবহার করতে হয়। ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করতে হলে ইংরেজি মাধ্যমের বিকল্প নেই। সেই ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ৩টি ভাষা আয়ত্ব করানো কঠিন কাজ। যেখানে সাধারণ স্কুল কলেজে পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রীরা ডিজিটাল যুগে প্রবেশে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে দলিত জনগোষ্ঠীকে এর আওতায় আনতে হলে অধিক শ্রম, মেধা ও অর্থের প্রয়োজন। সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং নিয়মিত পাঠদানের ফলে হয়তো তাদেরকে এ যুগে প্রবেশ করানো যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- আমাদের ডিজিটালের সংজ্ঞা ফেসবুক, গুগল, হোয়াটস্অ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার। এগুলো ব্যবহার করতে জানলে আমরা আমরা মনে করি আমরা ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করে ফেলেছি। বাস্তবে এই সমুদ্রে আমরা নিজেদের যাদের শিক্ষিত মনে করি তারাই কতটুকু জানি? আমরা সেই জাতি যারা ম্যাসেজ পাঠিয়ে আবার ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করি পেয়েছেন কি না। সমাজে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা মানুষজনকে যদি আমরা উন্নত করার পাশাপাশি দলিত জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে চাই তাহলে প্রথমে তাদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আওতায় এনে পরবর্তীতে কম্পিউটার সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। তাহলে হয়তো আগামীতে দলিত জনগোষ্ঠীকে এ যুগে প্রবেশ করানো সম্ভব। নতুবা যারা যে তিমিরে আছে তারা সেই তিমিরেই থেকে যাবে।
ডিজিটালাইজেশন ও দলিত জনগোষ্ঠী প্রসঙ্গে শায়েস্তাগঞ্জ জহুর চান বিবি মহিলা কলেজের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জালাল উদ্দিন রুমী বলেন- বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দলিতরা এখনো এমন পর্যায়ে পৌঁছেনি। ডিজিটালাইজেশনের সুফল পেতে আরো সময়ের প্রয়োজন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিক্ষিত সমাজও অনেক পেছনে পড়ে আছে। অনেকে অনলাইন অর্থাৎ ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম সম্পর্কে তেমন জানেন না। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে সময়ের প্রয়োজন। আর এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার যথেষ্ট আন্তরিক। আমরা সবাই আন্তরিক না হলে সরকার এককভাবে চেষ্টা চালিয়ে ডিজিটালাইজেশনের সুফল ভোগ করা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে আমাদেরও সহযোগিতার মনোভাব থাকতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে মানুষকে সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দলিত জনগোষ্ঠীর শিক্ষিত লোকজনকে কর্মের উপযোগী অর্থাৎ যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।
দলিতদের পিছিয়ে পড়া সম্পর্কে তিনি বলেন- দলিতরা অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল। নুন আনতে তাদের পান্তা ফুরায়। আয়ের সাথে তারা ব্যয়ের সমন্বয় করতে পারে না। তাই ডিজিটালাইজেশনের প্রতি তারা আগ্রহী নয়। তাই তাদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার বিষয়টিকেও প্রাধান্য দিতে হবে। বিষয়টিতে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে তা দূরীকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। তবেই ডিজিটালাইজেশনের সুফল ভোগ করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন- বাংলাদেশে বলতে গেলে আলোর গতিতে ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে। বাংলাদেশের সর্বত্রই ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া। দেশজুড়ে সরকার সাড়ে পাঁচ হাজার ডিজিটাল সার্ভিস সেন্টার স্থাপন করেছে। দেশজুড়ে ডিজিটাল ডাটা সেন্টার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির জন্য ইনকিউবেটর প্রোগ্রাম তৈরি করেছে। আর সরকারের এ সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দলিত জনগোষ্ঠীও এর সুফল ভোগ করবে।