হাসপাতালে লাশের পাশে মায়ের আহাজারি ॥ নিহতের মা আয়েশা বেগম বললেন, বান্ধবীদের বাড়িতে পরিকল্পিত ধর্ষণের শিকার হয়েছে ইয়াসমিন। ধর্ষণের পর বান্ধবীদের সহযোগীরা ইয়াসমিনকে রাস্তায় ফেলে রেখে দুর্ঘটনার নাটক তৈরি করেছে। অথচ ইয়াসমিনের চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নাকে রক্ত লেগে আছে

এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মনতলা এলাকায় ইয়াসমিন আক্তার (১৪) নামের কওমি মাদ্রাসার এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে। মেয়েটির মায়ের দাবি তাকে ধর্ষণ করে ঘাতকরা দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়েছে। চিকিৎসক বলছেন ময়না তদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলা যাবে না, মেয়েটি কিভাবে মারা গেছে। নিহত ইয়াসমিন আক্তার মনতলা ইসলামিয়া মহিলা মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী এবং মেরাসানী গ্রামের মৃত নুর হোসেন একমাত্র সন্তান।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মেরাসানী গ্রামের মৃত নুর হোসেন স্ত্রী ও এক কন্যা সন্তান রেখে ৮ বছর পূর্বে মারা যান। মৃত্যুর পর থেকে তার স্ত্রী আয়েশা বেগম তার শিশু কন্যা ইয়াসমিন আক্তারকে নিয়ে আত্মীয় স্বজনদের সহযোগিতায় জীবন যাপন করছেন। এর মধ্যে তার কন্যা ইয়াসমিন মনতলা ইসলামিয়া মহিলা মাদ্রাসায় ৮ম শ্রেণীকে উঠে। গত শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে মনতলা রেলস্টেশন এলাকার ইয়াসমিনের ৩ বান্ধবী এসে তাকে তাদের বাড়িতে বেড়ানোর কথা বলে নিয়ে যায়। পরদিন শনিবার সকাল ৭টার দিকে ইয়াসমিনের মা খবর পান ইয়াসমিন রাস্তায় পড়ে আছে। তিনি সেখানে গিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের সহায়তায় মেয়েকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্মরত চিকিৎসক ইয়াসমিনকে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নিতে বলেন। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর কর্মরত চিকিৎসক ইয়াসমিনকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরে ইয়াসমিনের লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায় পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে পুলিশ মায়ের কাছে ইয়াসমিনের লাশ হস্তান্তর করে। মেয়ের লাশ পাওয়ার পর থেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা আয়েশা বেগম। হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের সামনে তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘ও মা, তুমি আমারে কই থুইয়া গেলা? ও মাই, তুমি কই গেলা? আমি কই যাইতাম? আমি কী করতাম, কিতা না? ও মাই, আমি কিতা করতাম?
আয়েশা বেগম জানান, বান্ধবীদের বাড়িতে পরিকল্পিত ধর্ষণের শিকার হয়েছে ইয়াসমিন। ধর্ষণের পর বান্ধবীদের সহযোগীরা ইয়াসমিনকে রাস্তায় ফেলে রেখে দুর্ঘটনার নাটক তৈরি করে। অথচ ইয়াসমিনের চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নাকে রক্ত লেগে আছে।
‘আমার মাইয়ারে তো জিতা (জীবন্ত) নিছে তিন মাইয়া। অহন আমার মাইয়া আধামরা পাইছি। অহন আমি তো মাইয়া চাই। আমার তো দুনিয়াত আর কেউ নাই। আমি মাইয়া চাই। আমি বিচার চাই। বিচার চাই। আমার কেউ নাই। আমি বাচ্চা নিয়া দুঃখ-কষ্ট কইরা খাইছি। আমার বাচ্চা নিয়া কিভাবে ওরা এ রকম করল? আমি বিচার চাই।’ বলছিলেন আয়েশা বেগম।
তবে যোগাযোগ করা হলে মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন বলেন, আমাদেরকে জানানো হয়েছে মেয়েটি রাস্তায় বান্ধবীদের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় আহত হয়ে মারা গেছে। হাসপাতালেও দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যু লেখা হয়েছে। শনিবার বিকেলে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে।
লাশের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শামীমা আক্তার জানিয়েছেন, মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার আগ পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলা যাবে না মেয়েটি কিভাবে মারা গেছে।