জালাল আহমেদ
বই পত্রিকা ম্যাগাজিন পড়ার অভ্যাস আমার বিসিএস পরীক্ষায় সাফল্যের পেছনে অপরিসীম অবদান রেখেছে

আমার নিজের আউট বই পড়ার চাহিদা মেটাতো পাবলিক লাইব্রেরী আর নীলক্ষেত থেকে কেনা বই। ভারতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের লাইব্রেরী, রাশিয়ান কালচারাল সেন্টার লাইব্রেরীও ভালো ছিল। আমি যখন আমার বই এর পুরনো সংগ্রহের দিকে তাকাই তখন আমার ১৯৭৮-১৯৮২ সালে কেনা বইয়ের মান দেখে নিজেই অবাক হয়ে যাই যে তখন কি করে এমন মানসম্পন্ন, বিশেষ করে ইংরেজী বইগুলো কিনেছি। এটা ছিল নিজেকে সারভাইভাল এর জন্য পুশ করা এবং সেটা করতে আমি সক্ষম হয়েছিলাম বলেই মনে করি। নিউমার্কেটের বইয়ের দোকানগুলোতেও প্রচুর ঘুরে বেড়াতাম আর কখনো কখনো সেখান থেকেও বই কিনতাম। বইয়ের দোকানে এতো ঘুরেছি যে ঘরে বসেই আমি নিউমার্কেটের কোন বইয়ের দোকানের কোন তাকে কোন বই আছে তা বলে দিতে পারতাম। স্টেডিয়াম মার্কেটে ম্যারিয়েটা নামে একটা চমৎকার দোকান ছিল। মফঃস্বল ব্যাকগ্রাউন্ড এর জন্য আমার ইংরেজী ছিল দুর্বল, লোক প্রশাসনের সব বই ইংরেজীতে, মূলতঃ আমারিকান বই। তাই টিকে থাকার জন্য ইংরেজী জানা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে। আমি যেহেতু পড়তে ভালোবাসি এবং ভালোবাসি ক্রিকেট তাই সেই ভালোবাসাকেই ইংরেজী ভাষাকে জানার কাজে ব্যবহার করা সহজ ছিল। তখন দুটো ভালোমানের ভারতীয় সাপ্তাহিক খেলার পত্রিকা ছিল, স্পোর্টসওয়ার্ল্ড ও স্পোর্টসস্টার, আমি এই দু’টোই নিয়মিত কিনে পড়তে শুরু করলাম। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত নিয়মিত এই দুটো খেলার পত্রিকা ও সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকা পড়ার অভ্যাস আমার জীবন গঠনে অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। আব্বার পাঠানো মাসিক বরাদ্দের অর্ধেকই আমি খরচ করতাম বই, পত্রিকা ও ম্যাগাজিন কেনার পেছনে। আমার বিসিএস পরীক্ষায় সাফল্যের পেছনে এসবের অবদান অপরিসীম।
কলেজের টেবিল টেনিস খেলা ঢাকায় এসেও ছেড়ে দেইনি। খেলতাম টিএসসিতে, ক্যান্টিনের ডানপাশের রুম দু’টির একটিতে টেবিল ছিল, ওখানে। এখানে প্রায় সময়ই ইফতেখার সঙ্গী হতো। এর পেছনেই টিএসসির সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতাম। টিএসসিতে চমৎকার একটা বইয়ের দোকান ছিল। আজিমপুর সরকারি কলোনীতে যেহেতু থাকতাম সেখানকার কম্যুনিটি সেন্টারেও টেবিল টেনিস খেলতাম। তখনকার জাতীয় চ্যাম্পিয়নসহ একাধিক জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড় সেখানে খেলতে আসতেন। দাবা খেলতাম এবং একাধিক জাতীয় দাবার প্রাথমিক রাউন্ডে অংশ নিয়েছি এবং অংশগ্রহনই ছিল সাফল্য! তখন ফুটবল ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। আমি ঢাকার ফুটবল অনুসরণ করি ১৯৭৩ সাল থেকে। ১৯৭৪ সালে সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলে নিউইয়র্কের “কসমস” ফুটবল ক্লাবে যোগদান করার পর খেলতে আসলেন কোলকাতায়। সে খেলার ধারাবিবরণী শুনি রেডিওতে। ১৯৭৪ এ ঢাকা লীগে চ্যাম্পিয়ন হয় আবাহনী আর তখন থেকে আবাহনী ক্লাবকে সাপোর্ট করা শুরু করি। ফলে ঢাকায় এসে আবাহনী ক্লাব দেখতে যাই। মাঠে আবাহনীর খেলা থাকলে নিয়মিত দেখতে যেতাম। ফুটবল এবং ক্রিকেট দুটো খেলাই সমান উৎসাহে দেখতাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অনুসরণ করতাম রেডিও রীলে শুনে আর পূর্বোল্লিখিত দু’টি ইংরেজী খেলার ম্যাগাজিনতো ছিলই। এমন কি আমি যখন সিভিল সার্ভিসে জয়েন করেছি তখনো আবাহনী-মোহামেডান খেলা দেখার জন্য খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকা চলে এসেছি।
একই ভাবে প্রতিবছর বই মেলাতেও চলে এসেছি যেখানেই থাকিনা কেন। সেই বই কেনার অভ্যাস আজীবন রয়ে গিয়েছে। তখনো দৈনিক পত্রিকা বলতে ইত্তেফাক, চাচার বাসায় রাখতো আজাদ, সংবাদও মানসম্পন্ন দৈনিক ছিল। নিয়মিত পত্রিকা পড়তাম বিশেষ করে উপসম্পাদকীয় কলামগুলো মন দিয়ে পড়তাম। তখনকার প্রতিষ্ঠিত কলামিস্টদের কারো কারো সঙ্গে দেখাও করেছি। ইত্তেফাক ও আজাদ দুই পত্রিকাতেই উপসম্পাদকীয় কলাম লিখতেন খন্দকার আব্দুল হামিদ, লেখার মুগ্ধ পাঠক হিসেবে উনার আজিমপুরের বাসাতে গিয়েছিলাম। উনার মেয়ে ওয়াহিদা হামিদ কিছুদিন আমাদের সংগে লোক প্রশাসন বিভাগে পড়েছেনও। সদ্য প্রয়াত রাহাত খানের বাসায়ও গিয়েছি কয়েকবার এবং উনার সংগে যোগাযোগ অক্ষুন্ন ছিল। মানসিক গঠনের জন্য সঠিক পঠন পাঠন জরুরি, জরুরি সঠিক পরামর্শেরও। আমার ক্ষেত্রে হয়তো তার অসুবিধা ছিল না। তবে চোখ কান খোলা রাখলে সহজ পথ অনুসরণ করা কারো জন্যই কঠিন নয়। আমার মামাতো ভাই অধ্যাপক মোঃ গোলাম কিবরিয়া তখন অর্থনীতি বিভাগে পড়তেন ও মহসীন হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন, তাঁর রুমে যেতাম প্রায়ই। বাণিজ্য অনুষদে পড়তেন ফিরোজ খান বাবলু ভাই, থাকতেন স্যার এএফ রহমান হলে, তাঁর কাছেও রেগুলার যেতাম। তাঁদের পরামর্শ অনেক ক্ষেত্রেই কাজে লেগেছে। তবে যত যাই হোক ব্যক্তিগত কারণে আমি ক্লাশের পড়ায় কিছুটা পিছিয়ে পড়েছিলাম। যে কোন কিছুতে মাঝামাঝি থাকার একটা ক্ষমতা আমার ছিল কিন্তু চেষ্টা দিয়ে এগুনোর যে বিষয়টা তাতে খামতি ছিল। ফলে প্রথম বর্ষের এক বিষয় বা দ্বিতীয় বর্ষের দুই বিষয়ের ফলাফল আশানুরুপ হয়নি। এইচএসসি’র ফলাফলে সৃষ্ট প্রত্যাশার চাপও একটা বিরুপ প্রভাব ফেলে। এই প্রত্যাশার চাপ মোকাবিলা করা এবং লেগে থাকা দুটোই একটা ইতিবাচক মানসিকতার বিষয় এবং এখন এটা বুঝা যায় যে অনেক সময় প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও এক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। এখনকার তরুণ তরুণীরা এসব ক্ষেত্রে অনেক বেশি সচেতন এবং এ সংক্রান্ত সুযোগ সুবিধাও এখন অনেক বেশী। যে কোন পরীক্ষার জন্যই দীর্ঘ পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি এখন সময়ের দাবী। ১৯৮২ এর শুরুতে এসে মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে বছরের প্রথম কোয়ার্টারেই আমাদের অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা হবে।