দলীয় নির্দেশ পেলে মেয়র পদে নির্বাচন করবেন জি কে গউছ

এসএম সুরুজ আলী ॥ আগামী ডিসেম্বর মাসে হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় খবর প্রচার হওয়ার পর আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের মেয়র প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রীয় হাই কমান্ডে লবিং শুরু করেছেন। বিশেষ করে নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী দলীয় মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে লবিং শুরু করে দিয়েছেন। পাশাপাশি অনেক প্রার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেসহ করোনা পরিস্থিতির কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অনেকটা নিরবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের কর্মী ও সমর্থকরা তাদের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে দলের মনোনয়ন না পেলে অনেকেই নির্বাচন থেকে সরে যাবেন বলে জানিয়েছেন। দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে ও দল নির্বাচনে গেলে তারাও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।
এবার হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান মেয়র মিজানুর রহমান মিজান, জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, পৌর আওয়ামীলীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সৈয়দ কামরুল হাসান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মর্তুজ আলী ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইংল্যান্ড প্রবাসী নুর উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল। বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির বর্তমান সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব জি কে গউছ, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম ইসলাম তরফদার তনু ও এনামুল হক সেলিমের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে তারা ৩ জন দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে চলবেন বলে জানিয়েছেন।
২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে কারাগারে থেকে মেয়র নির্বাচিত হন জেলা বিএনপির বর্তমান সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব জি কে গউছ। পরবর্তীতে জি কে গউছ মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করায় মেয়রের পদটি শূন্য হয়ে যায়। পরবর্তীতে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন মিজানুর রহমান মিজান। তবে এ নির্বাচনে বিএনপি’র দলীয় প্রার্থী না থাকলেও নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম ইসলাম তরফতার তনু। উপ-নির্বাচনে বর্তমান মেয়রের প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু।
আগামী পৌর নির্বাচনে অংশ গ্রহন নিয়ে বর্তমান মেয়র মিজানুর রহমান মিজানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে জানান, বিগত উপ-নির্বাচন জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়ে মূল্যায়ন করেছেন। আমি জনগণের রায়ে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়ে আওয়ামীলীগের মুখ উজ্জল করেছি। ১৪ বছর পর পৌরসভায় আওয়ামীলীগের বিজয় এনে দিয়েছি। যেহেতু বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে হবিগঞ্জ পৌরসভা মেয়র পদটি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিয়েছি। এরপর পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করার পাশাপাশি করোনাকালীন সময়ে পৌরসভার দরিদ্র অসহায় ও কর্মহীনদের বাসা-বাড়িতে গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিয়েছি। আশা করি সব কিছু বিবেচনা করে এবারের নির্বাচনেও জননেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দেবেন।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে জানান, পৌরসভা নির্বাচন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। করোনাকালীন সময়ে প্রতিদিন পৌরসভার দরিদ্র অসহায় ও কর্মহীন লোকজনদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছি। প্রতিদিন তৈরী খাবারও তাদের বাসা-বাড়িতে পৌছে দিয়েছি। আওয়ামী লীগের সকল আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহন করে যাচ্ছি। কখনও দলের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করিনি। রাজনৈতিক বিবেচনা ও রাজনৈতিকভাবে মূল্যায়ন করা হলেও আমি আশাবাদী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগের হাই কমান্ড আমাকেই দলীয় মনোনয়ন দেবেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে আমি নির্বাচন করবো। দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে যাবো না। পৌর আওয়ামীলীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে জানান, বিগত ২টি নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু মনোনয়ন পাইনি। এবারও দলীয় মনোনয়ন চাইবো। এবারও আশাবাদী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মূল্যায়ন করবেন। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সৈয়দ কামরুল হাসান জানান, ২টি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছি। কিন্তু মনোনয়ন পাইনি। বিগত উপ-নির্বাচনটি দলকে উন্মুক্ত করে দেয়ায় নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেছিলাম। এবারও দলীয় মনোনয়ন পাইবো। জননেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবো। অন্যথায় দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবো না। এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মর্তুজ আলী জানান, যেহেতু আওয়ামীলীগের একজন কর্মী অবশ্য দলীয় মনোনয়ন চাইবো। দলীয় মনোনয়ন পেলে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবো।
জেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও পদত্যাগকারী মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছ দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে জানান, বিগত নির্বাচনগুলোতে আমি ব্যক্তিগতভাবে অংশ গ্রহন করিনি। দলের সিদ্ধান্তে অংশ গ্রহন করেছি। আবারও দল থেকে আমাকে নির্বাচনে অংশ গ্রহনের নির্দেশ দিলে আমি দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে যাবো না। হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এনামুল হক সেলিম জানান, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিএনপি এ সরকারের অধিনে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো বয়কট করছে। বিএনপি নির্বাচনে গেলে এবং দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাকে নির্বাচন করার নির্দেশ দিলে আমি নির্বাচন করবো। অন্যথায় দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে যাবো না। এ ব্যাপারে জেলা বিএনপি নেতা এম ইসলাম তরফতার তনু জানান, বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে দলের হাই কমান্ডের কাছে দলীয় মনোনয়ন চাইবো। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবো।