সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন
এসএম সুরুজ আলী ॥ আগামী ডিসেম্বরে হবিগঞ্জ, নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর ও শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে। ডিসেম্বরে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই সময়ে হবিগঞ্জ জেলার ৫টি পৌরসভাসহ দেশের প্রায় আড়াইশ পৌরসভায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ লক্ষ্যে ইসি সচিবালয়কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গত রবিবার ইসি’র সভায় এই নির্দেশনা দেয়া হয়।
নির্বাচনকে সামনে রেখে হবিগঞ্জ পৌরসভায় এখনো জোরালোভাবে কোন মেয়র প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে নামেননি। তবে সামাজিক ও দলীয় বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহন করে নিজেদের প্রার্থীতা জানান দিচ্ছেন। অনেকেই দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য কেন্দ্রে লবিং করছেন। বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিল প্রার্থীরা বিল বোর্ড, পোস্টার, কর্মীসভার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা করছেন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হবিগঞ্জ পৌরসভার পদত্যাগকারী মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছকে বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে দাবি জানিয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন অনেকে। যদিও জি কে গউছ পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহন করবেন এমন কোন কথা দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে বলেননি। কিন্তু দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে প্রার্থী হওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে জি কে গউছের একটি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের পরিস্থিতি বিবেচনা করবে তিনি প্রার্থী হবেন কি না? দলের হাই কমান্ড যে সিদ্ধান্ত দেবে তিনি মেনে নেবেন। এছাড়াও নির্বাচনে অংশ গ্রহন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছেন হবিগঞ্জ জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম। তিনি করোনা পরিস্থিতিতে হবিগঞ্জ পৌরসভায় সামাজিক কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছেন। পৌরসভার বাহিরেও তিনি সামাজিক কর্মকান্ড করছেন। আতাউর রহমান সেলিমও এবারের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বরে নির্বাচনে আতাউর রহমান সেলিম আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র মিজানুর রহমান মিজান অংশগ্রহন করেন। নির্বাচনে কারাগারে থেকে জি কে গউছ মেয়র নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে পদত্যাগ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জি কে গউছ জাতীয় ঐক্যফন্টের প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। মেয়রের পদত্যাগের কারণে পৌরসভার মেয়র পদটি শূন্য হয়। পরবর্তীতে উপ-নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহন না করায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতিক নৌকা নিয়ে পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন মিজানুর রহমান মিজান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সৈয়দ কামরুল হাসান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মর্তুজ আলীও অংশগ্রহন করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এম ইসলাম তরফদার তনু উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন।
এবারের নির্বাচনে শোনা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান মেয়র মিজানুর রহমান মিজান, জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সৈয়দ কামরুল হাসান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মর্তুজ আলী। বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক সেলিম, এম ইসলাম তরফদার তনুর নাম শোনা যাচ্ছে। পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে আগামী মাস থেকে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করবেন বলে অনেক প্রার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
এদিকে নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে পৌরসভাগুলোর বর্তমান পরিষদের মেয়াদ, নির্বাচন আয়োজনে কোনও জটিলতা আছে কি-না এসব সার্বিক তথ্য চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি সচিবালয়। দুয়েকদিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হবে বলে ইসির সংশ্লিষ্ট শাখা সূত্রে জানা গেছে। পাশাপাশি নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কমিশন মাঠ প্রশাসনের মাধ্যমে পৌরসভাগুলোর মেয়াদসহ অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে তিনশ’ পৌরসভা রয়েছে। এদের মধ্যে ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর একযোগে ২৩৪টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া অন্যান্য পৌরসভাগুলোর ভোট গ্রহণের মেয়াদ অনুযায়ী বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বরে যে পৌরসভাগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তার বেশিরভাগের মেয়র ও কাউন্সিলররা পরের বছর (২০১৬ সাল) জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারি মাসে শপথ নেন। আর ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই হিসেবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে এসব পৌরসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আইন অনুযায়ী পৌরসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে ভোটগ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন শুরু হয়। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের মতো সব পৌরসভার ভোট একদিনে অনুষ্ঠিত হবে। পৌরসভাগুলো মধ্যে সদর এলাকা হওয়ায় ইভিএমের ব্যবহার বাড়ানো হবে। কমিশন সভায় সেই প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতি বাড়লে ইভিএমের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ইসি সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর ২৩৪টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করে ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ করা হয়। এবারও ওই তালিকা ধরে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। মাঠপর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে ইসি সচিবালয়। ইতোমধ্যে পৌরসভার বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ, প্রথম সভার তারিখ ও জনপ্রতিনিধিদের শপথগ্রহণের তারিখ সংগ্রহ করে কমিশনে পাঠাচ্ছেন বিভিন্ন জেলার নির্বাচন কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলা থেকে ইসি সচিবালয় এই তথ্য সংগ্রহ করেছে। ডিসেম্বরে সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, জগন্নাথপুর, দিরাই, সিলেটের জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জ, মৌলভীবাজার সদর, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, বড়লেখা, হবিগঞ্জ পৌর, নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর ও শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।