এক মাসে সাবরেজিস্ট্রি অফিসে ৮৮ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় ॥ মানুষের হয়রানী বন্ধ করেছেন সাব-রেজিস্ট্রার
নুর উদ্দিন সুমন ॥ করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাঝেও চুনারুঘাট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এক মাসে ৮৫৪ টি দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। এতে সরকার ৮৮ লাখ ৫১ হাজার ৯৮ টাকা রাজস্ব পেয়েছে। এদিকে বদলে গেছে সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রমও। কর্তৃপক্ষের দাবি এক সময় অনিয়ম, দুর্নীতি থাকলেও এখন আর সেই অবস্থা নেই।
সাব রেজিস্ট্রি অফিস মানেই দুর্নীতির আখড়া এবং দালালদের অভয়ারণ্য যুগ যুগ ধরে এমনি ধারনা প্রতিটি মানুষের। ঘুষ ছাড়া সাব- রেজিস্ট্রি অফিসের কোনো ফাইল নড়া-চড়া করে না, অধিকাংশ ভূক্তভুগী মানুষের এমনই বক্তব্য। উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসার প্রদীপ কুমার বিশ্বাস যোগদান করার পর থেকে সাব রেজিস্ট্রি অফিস দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহনের মাধ্যমে, ঘুষ দুর্নীতিমুক্ত অফিস মনোরম পরিবেশ গড়ে তুলেছেন প্রদীপ কুমার বিশ্বাস। দলিল লেখক সমিতির নেতাকর্মীরা বলছেন বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার আসার পর থেকেই অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। আগের তুলনায় বাড়ছে রাজস্বও। সাব রেজিস্ট্রি অফিসে একান্ত সাক্ষাতে কথা হয় দলিল করতে আসা ওয়াহিদুল ইসলাম এবং রাজু মিয়ার সাথে তারা বলেন, এক সময় সাব রেজিস্ট্রি অফিস মানেই ছিল ঘুষের কারখানা। দীর্ঘদিন পরে হলেও বর্তমান সময়ে সে অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। এখন মানুষ এসে হয়রানি মুক্তভাবে কাজ করছে। আমরাও দলিল করেছি সরকারি নির্ধারিত ফিতে। অতিরিক্ত কোন ফি কাউকে দিতে হয়নি। দলিল লেখক নেতা আলহাজ্ব মুহিদুল ইসলাম বলেন, বিগত সময়ের তুলনায় আমূল পরিবর্তন ঘটেছে অফিসের। সাধারণ মানুষ দলিল করতে এসে সরকারি নির্ধারিত ফিতেই তা করতে পারছে। নেই কোন দালালদের তৎপরতাও। আমরা সাব রেজিস্ট্রারের সমন্বয়ে সাব রেজিস্ট্রি অফিসকে মডেল অফিস হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করছি। সপ্তাহে এখানে প্রায় দেড়শতাধিক দলিল হচ্ছে। সাধারণ মানুষ কাউকে ঘুষ দেয়া ছাড়াই দলিলের কাজ সম্পূর্ণ করছেন। উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার যোগদানের পর থেকে তিনি দুর্নীতিমুক্ত অফিস ঘোষণা করে সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। সরাসরি কর্মচারীদের সার্বক্ষনিক কার্যক্রমে নজরদারি করেন তিনি। এই দপ্তরের বিভিন্ন কার্যক্রমে তদারকির মাধ্যমে, জনভোগান্তি ও কমিয়ে এনেছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, অফিসের প্রবেশ মুখে দৃষ্টিনন্দন বাহারী সব কাঁচা ফুলের বাগান। বিভিন্ন রঙ-বেরঙের ফুলের এ বাগান থেকে ছড়াচ্ছে ফুলের সৌরভ। মনোরম সব ফুলের সৌরভে মন মাতিয়ে তুলছে কর্মকর্তা কর্মচারীসহ প্রতিদিন আসা শত শত মানুষের। প্রতিষ্ঠানের এমন মন জুড়ানো দৃশ্যটি পাশ দিয়ে যাওয়া যে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রদীপ কুমার বিশ্বাস তার নিজ উদ্যোগে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার আঙ্গিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন। করেছেন বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসার স্থান এবং ফুলের বাগান সাজানো হয়। এছাড়া মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে অফিস আঙ্গিনায় লাগানো হয়ে বিভিন্ন ঔষধী ও ফলজ গাছ।
অফিসে দলিল রেজিস্ট্রি কাজে আসা একাধিক ব্যাক্তি জানান, সকল কাগজপত্র ঠিক থাকলে কোনরকম টাকাপয়সা ঘুষ দেয়া ছাড়া আমরা দ্রুততর সময়ে সেবা পাচ্ছি। আমরা সেবা পেয়ে উপকৃত। আগে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রারের সাথে দেখা করতে পারতাম না, এখন প্রদীপ সাবের সাথে দলিল সংক্রান্ত যে কোন সমস্যায় সরাসরি কথা বলে সমস্যা সমাধান করতে পারছি, দাঁড়িয়ে আমাদের ঘন্টার পর ঘন্টা অবস্থান করতে হয় না। এখন অফিসে ব্যাংকও রয়েছে, এতে আমাদের কষ্ট অনেকটা লাঘব হয়েছে। এছাড়া ৫/৬ মাসের মধ্যেই মিলছে রেজিস্ট্রিকৃত জমির মূল দলিল। আর একদিনেই অবিকল দলিলের নকল এবং যেকোনো সালের দলিল তল্লাশির ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। অবিশ্বাস্য হলেও বাস্তবে এমন গ্রাহক সেবা মিলছে চুনারুঘাট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। এক সময় দলিলের নকল এবং দলিল তল্লাশির জন্য মাসের পর মাস ঘুরতে হতো সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। সাব-রেজিস্ট্রি অফিস মানেই ছিল দুর্ভোগ আর কষ্টের জায়গা। তবে এখন বদলে গেছে পুরাতন সব চিত্র। বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার প্রদীপ কুমার বিশ্বাস আসার পর পুরো সাব-রেজিস্ট্রি অফিসকে একটি শৃংখলার মধ্যে নিয়ে এসেছেন। তার হাত ধরেই বদলে যায় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম।
সাব রেজিস্ট্রার প্রদীপ কুমার বিশ্বাস বলেন, আমি যোগদানের পর হতে এ এপর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার দলিল করেছি, সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল করতে আসা সাধারণ মানুষ যেন কোন ভাবেই হয়রানির শিকার না হয় সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। সার্বক্ষণিক এ বিষয়ে নজরদারি করা হচ্ছে। কোন অভিযোগ ফেলেই সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আমি মনে করি অতীতের তুলনায় অফিসের কার্যক্রমের আমুল পরিবর্তন হয়েছে। পাশাপাশি রেকর্ড পরিমাণ বাড়ছে সরকারের রাজস্বও।