স্টাফ রিপোর্টার ॥ মদনের হাওরে ঘুরতে গিয়ে ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকা ডুবে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের ৭ জন রয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছে আরো একজন। বুধবার সকালে এই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। মদন ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আহম্মেদুল কবির জানান, বুধবার সকালে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরশিরতা ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রাম, গৌরীপুর ও আটপাড়া উপজেলার তেলিগাতী গ্রাম থেকে ৪৮ জন উচিতপুর এসে নৌকা ভ্রমণে বের হন। নৌকাটি গোবিন্দশ্রী রাজালী কান্দা নামক স্থানে পৌঁছলে উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়ে বেলা ১২টার দিকে ডুবে যায়। এতে ১৮ জন নিখোঁজ হন এবং বাকিরা সাঁতরে কিনারায় উঠে আসেন। তিনি জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। ৩ ঘণ্টার অভিযানে ১৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী জানান, উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে ময়মনসিংহের একই পরিবারের ৭ জন। এরা হলেন- হাফেজ মাহফুজুর রহমান, ছেলে আশিফ, মাহমুদ মিয়া, ভাতিজি জুলফা, লুবনা, ভাতিজা জুবায়ের, মোজাহিদ ও সাইফুল ইসলাম রতন, জাহিদ, শামীম হাসান, শফিকুল, শহিদুল, ইসা মিয়া, আজহারুল, সামাআন, রেজাউল করিম ও হামিদুল। লাশ পরিবারের লোকজনের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম জানান, নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে সাত হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। পর্যটন এলাকায় প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নিখোঁজ রাকিবুলের পিতার আহাজারি : আমার বাবা কই গো,আমার পুত (পুত্র) কই গো, আমার বাজান কই? সবাইরে পাওয়া গেল আমার বাজান কই?। নেত্রকোনার মদন উপজেলার উচিতপুর হাওরে ঘুরতে এসে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ হাফেজ রাকিবুল ইসলামের (২৫) বাবা শফিকুল ইসলাম মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এভাবেই মদন থানা প্রাঙ্গণে পুত্র শোকে অঝোরে কাঁদছিলেন। এসয়ম তার কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। ছেলেকে হারিয়ে শফিকুল পাগল প্রায়। ছেলের মুখটা এক নজর দেখতে উদ্ধার হওয়া লাশগুলি ঘুরে ঘুরে বার বার দেখেন। সবাই তো যার যার বাড়িতে যাইতাছে আমি কি নিয়ে বাড়িতে যাইয়াম। ছেলেকে ফিরে পেতে এমন হাজারো আকুতি জানাচ্ছিলেন শফিকুল ইসলাম। ৫ আগস্ট ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকার কওমি মাদ্রাসা ও নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার তেলিগাতি ইউনিয়নের জামিয়া আরাবিয়া মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার শিক্ষক, হাফেজ ও শিক্ষার্থীসহ ৪৮ জনের একটি দল মদন উপজেলার মিনি কক্সবাজার হিসেবে পরিচিত উচিতপুর এলাকা ঘুরতে গিয়ে নৌকাডুবির কবলে পড়েন।
ডুবন্ত নৌকা থেকে ১৭ জনের মৃত দেহ ও ৩০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এতে নিখোঁজ রয়েছে হাফেজ রাকিবুল ইসলাম। সে ময়মনসিংহের সদর উপজেলার কোনাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। নিখোঁজ হাফেজ রাকিবুল ইসলামও একটি মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। মদন থানার তদন্ত ওসি স্বপন চন্দ্র জানান নিখোঁজ হাফেজ রাকিবুল ইসলামকে এখনো খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারের চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি।