স্টাফ রিপোর্টার ॥ নারী ঘটিত অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ও অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের আজাদকে হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সমিতির এক বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোঃ বদরু মিয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল হাসান শরীফের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তারা বলেন, বহিস্কৃত দুই আইনজীবীর অসামাজিক কর্মকান্ডে সমিতির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। প্রথমে তাদের সংগঠন থেকে শোকজ করা হয়। শোকজের সন্তোষজনক জবাব না দেয়ায় গঠনতন্ত্র মোতাবেক তাদের বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই বহিস্কারের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর করা হবে।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল হাসান শরীফ দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে জানান, সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ও অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের আজাদের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বহিস্কার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোঃ বদরু মিয়া বদরু জানান, অভিযুক্ত দুই আইনজীবীর বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারীর অভিযোগ রয়েছে। প্রাথমিকভাবে তা প্রমাণিত হয়েছে। সংগঠনের সদস্য হয়ে সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের বহিস্কার করা হয়েছে।
এর পূর্বে নৈতিক স্খলনের অপরাধে অ্যাডভোকেট আবুল কালামকে গোপায়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে অব্যাহতি দিয়েছে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ। ১৯ জানুয়ারি হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরী সভায় তাকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাশপাশি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জানুয়ারি শুক্রবার দুপুরে বোরকা পড়া এক মহিলাকে নিয়ে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের তৃতীয় তলার এপিপির রুমে দরজা বন্ধ করে একান্ত সময় কাটান এপিপি আবুল কালাম। বিষয়টি কোর্ট পুলিশের নজরে আসলে তিনি বিষয়টি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে অবগত করেন। খবর পেয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ নুরুল হুদা চৌধুরী ঘটনাস্থলে আসার আগেই আবুল কালাম ওই মহিলাকে রিক্সায় তুলে দেন। বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ নুরুল হুদা চৌধুরী এপিপি আবুল কালামকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে তিনি অশোভন আচরণ করেন। এ সময় মোটর সাইকেলযোগে অ্যাডভোকেট আবুল কালাম দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট বিষয়টি হবিগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশকে অবগত করেন। পুলিশ শুক্রবার রাত ১০টায় হবিগঞ্জ শহরের মোহনপুর এলাকা থেকে অ্যাডভোকেট আবুল কালামকে গ্রেফতার করে। অপরদিকে অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের আজাদ ওরফে উজ্জল শহরতলীর জালালাবাদ-নোয়াগাঁও এলাকার বাসিন্দা। তিনি হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজের এক ছাত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন। ওই সম্পর্কের সূত্র ধরে মেয়েটিকে বিয়ের আশ^াস দিয়ে ধর্ষণ করেন আবুল খায়ের আজাদ। পরবর্তীতে বিয়ে না করায় মেয়েটি তার বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করে। এ ছাড়া অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের আজাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের ও তা প্রমাণিত হয়। এতে সমিতির ভাবমূর্তি ও গৌরবহানি করার জন্য তাকে গঠনতন্ত্র বহিস্কার করা হয়েছে।