অজ্ঞাত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া যুবতীর পরিচয় পাওয়া গেছে ॥ ঢাকা থেকে ফেরার পথে গার্মেন্টস কর্মী আকলিমা খুন হয়েছে

এসএম সুরুজ আলী ॥ মায়ের সাথে কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে মা-মেয়ের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘাতক বা ঘাতকরা মা-মেয়ের মধ্যে যোগাযোগটা চিরতরেই বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। মা পথ চেয়ে বসেছিলেন মেয়ে ঢাকা থেকে আসছে। কিন্তু মেয়ে আর আসেনি। এসেছে তার লাশ। মা কোন ভাবেই বিশ^াস করতে পারছিলেন না, তার মেয়ে আর পৃথিবীতে বেঁচে নেই।
বুধবার রাতে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণ রাজিউড়া গ্রামের পার্শ্ববর্তী ভেড়িখাল থেকে অজ্ঞাত অবস্থায় উদ্ধার করা যুবতীর (২৫) লাশের পরিচয় পাবার পর এসব তথ্য জানা গেছে।
নিহত আকলিমা আক্তার মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানার জাম্বুরাছড়ার হেলাল মিয়ার কন্যা। লাশ উদ্ধারের পর ছুরতহাল রিপোর্টে নিহতের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন থাকায় প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে আকলিমাকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যারহস্য উদঘাটন করতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, প্রায় ৬ বছর পূর্বে আকলিমাকে চুনারুঘাট উপজেলার উত্তর আমড়াখাই গ্রামের হৃদয় মিয়ার সাথে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পর আকলিমা পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। বর্তমানে তার ছেলের বয়স ৫ বছর। প্রায় এক বছর পূর্বে স্বামীর সাথে সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর আকলিমা ঢাকায় তার এক খালার বাসায় থেকে গার্মেন্টসে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিল। বুধবার সে তার খালার বাসা থেকে গার্মেন্টসে যাওয়ার কথা বলে বের হয়ে আর বাসায় ফিরে যায়নি। এদিকে বুধবার সকালে রাজিউড়া ইউনিয়নের ভেড়িখাল এলাকায় অজ্ঞাত লাশের সংবাদ পেয়ে সেখানে গিয়ে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। পরে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই সাইদুর রহমান লাশের ছুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন।
হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম (সদর সার্কেল) জানান, সুরতহাল রিপোর্টে আকলিমা আক্তারের গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তার শরীরে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনের জন্য আমরা অধিক গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি তদন্ত করছি। তিনি আরো বলেন- প্রাথমিকভাবে ধারণ করা হচ্ছে প্রেম সংক্রান্ত বিষয় নিয়েও এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।
নিহতের ভাই আমির আলী দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে জানান, ৬ বছর পূর্বে তার ছোট বোন আকলিমা আক্তারকে চুনারুঘাট উপজেলার উত্তর আমড়াখাই গ্রামে বিয়ে দেন। বিয়ের পর তার বোনের ঘরে ওসমান নামে এক ভাগ্নের জন্ম হয়। পারিবারিক কলহের জের ধরে এক বছর পূর্বে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর সে ঢাকাতে খালার বাসায় থেকে গার্মেন্টসে কাজ করতো। স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ ঘটলেও সন্তানের খোঁজ-খবর নিত স্বামী হৃদয় মিয়া। ঘটনার দিন ঢাকার বাসা থেকে বের হয়ে আকলিমা তার মাকে জানায় সে বাড়িতে আসছে এবং দুপুরে সে জানায় সে তখন নরসিংদী এসে পৌঁছেছে। নির্ধারিত সময়ে আকলিমা বাড়িতে এসে না পৌঁছলে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন আকলিমার মা। কিন্তু তখন তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। গতকাল সংবাদপত্রে ও ফেসবুকে আকলিমার লাশের ছবি দেখে তারা নিশ্চিত হন যে আকলিমা আর বেঁচে নেই। আকলিমার বড় ভাই আমির আলী হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে এসে বোনের লাশ সনাক্ত করেন। গতকাল লাশের ময়না তদন্ত শেষে ভাইয়ের কাছে লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ। গতকালই আকলিমাকে দাফন করা হয়েছে।