সদ্য জন্ম নেয়া পুত্র সন্তানকে দেখতে চট্টগ্রাম থেকে গ্রামের বাড়ি আসেন আল আমিন

সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহীম ॥ এক মাস বয়সি নবজাতকসহ তিন শিশু সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত আল আমীনের স্ত্রী। অনাহার-অর্ধাহারে কাটছে তাদের দিন। জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া ১৫ হাজার টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রতিবেশিদের দয়ার উপর নির্ভর করে বেঁচে আছেন ৪ সদস্যের এই পরিবারটি। আল আমীন (৩০) বানিয়াচং উপজেলার কাগাপাশা ইউনিয়নের গুণই গ্রামের আয়ুব হোসেনের ছেলে।
তিন সন্তানের জনক আল আমীন পেশায় রাজমিস্ত্রী ছিলেন। ৩ সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে অভাব-অনটনের মাঝে দিন কাটছিল তার। পৈত্রিক সম্পত্তি বলতে একটি বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। এলাকায় কাজ না থাকায় অভাবের তাড়নায় আল আমীন চট্টগ্রামে রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। তার ৯ বছর ও ৬ বছর বয়সী দুই কন্যা এবং একমাস বয়সী এক পুত্র সন্তান রয়েছে। দুর্ঘটনার দুই সপ্তাহ আগে আল আমীনের এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। তাকে দেখার জন্য আল আমীন চট্টগ্রাম থেকে গ্রামের বাড়ি বানিয়াচং আসেন। সেখানে সপ্তাহখানেক থাকার পর ফের কর্মস্থলে ফিরে যেতে ১২ নভেম্বর রাত সাড়ে ১২টায় শায়েস্তাগঞ্জ থেকে ‘উদয়ন এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ওঠেন আল আমীন। রাত ৩টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। সকালে বাড়িতে তার মৃত্যুর খবর পৌঁছলে শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় চারপাশ। আল আমীনের বাড়িতে চলে শোকের মাতম।
এদিকে, তিন শিশু সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন নিহত আল আমীনের স্ত্রী ফুলবানু বেগম। অনাহার-অর্ধাহারে কাটছে তাদের দিন। ঘটনার পর হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হয় তার পরিবারকে। এছাড়া আর কোন সহযোগিতা পাননি বলে জানান ফুলবানু। ফলে অর্থ সংকটে খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটছে পরিবারটির।
আল আমীনের স্ত্রী ফুলবানু বলেন- স্বামী মারা যাওয়ার ২০ দিন আগে সিজারের মাধ্যমে আমার একটি পুত্র সন্তান হয়। এখন তিনি মারা যাওয়ার কারণে দুই অবুঝ মেয়ের মুখে খাবার তুলে দিতে পারছি না। খাবারের জন্য বাচ্চা দুটি কান্না-কাটি করে। এলাকার লোকজন মাঝে মধ্যে চাল-ডাল দেন। এগুলো দিয়েই দুই বাচ্চার মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দেই।
তিনি আরও বলেন- তিনি (আল আমীন) মারা যাওয়ার পর ১৫ হাজার টাকা পাইছিলাম। এগুলো উনার দাফন-কাপনেই শেষ হয়ে গেছে। আর কোন সহযোগিতা পাইনি।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন খন্দকার বলেন- জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে ১৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। আরও সহযোগিতার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া মন্ত্রী মহোদয়ের ঘোষণাকৃত টাকা এখনও আসেনি। আমরা নিহতদের যাবতীয় তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয় থেকে টাকা পাঠালেই তাদেরকে দেয়া হবে।