তাহমিনা বেগম গিনি

স্মৃতির ঝাপিতে ক-ত স্মৃতি। এই পড়ন্ত বেলায় এসে অনেক স্মৃতি হারিয়ে গিয়েছে কিন্তু কিছু কিছু স্মৃতি কখনোই হারাবার নয়। আজ এমন কিছু স্মৃতি নিয়ে আমার এই ফরমায়েসি লেখা। সম্পাদকের অনুরোধেই লিখতে বসেছি।
৪৪ বছর আগের ঘটনা। মাস ছিল অক্টোবর। বাংলা মাস ছিল কার্তিক। তখন খুলনা সুদূরই ছিল। একটি মাত্র বাস ঢাকা-খুলনা যাতায়াত করতো। নাম ছিল যাত্রিক। ঢাকা এসে এক রাত থাকতে হতো তার পরদিন ট্রেনে শায়েস্তাগঞ্জ। অতঃপর হবিগঞ্জ, পুনরায় বানিয়াচং। সে কি দুর্গম যাত্রা। প্রেম করার সময় কোনোদিন ভেবেছিলাম না কোথায় যাচ্ছি। প্রেমে পড়লে সবার মত হয়তো বলেছিলাম, ‘তুমি গাছতলায়, যেখানেই রাখো না কেন রাজি আছি। শুধু তোমার কাছে, সাথে থাকতে চাই’। হা-হা-হা এখন হাসি পায়। কি বোকা মেয়েরা! বর্তমান সময়ের মেয়েরা আরো বোকা আমার মত। আমাদের প্রেম কাহিনী হবিগঞ্জবাসী কম বেশি সকলেরই জানা আমার মনে হয়। না হলে গোপালগঞ্জের মেয়ে বানিয়াচং আসার কথা নয়। প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তার বড় মেয়ে ছিলাম। নানা বাড়ি দাদা বাড়ির বড় নাতনি ছিলাম। অত্যন্ত ভাল মেয়ে হিসেবে খুব আদরনীয় ছিলাম। ভাল ছাত্রী ছিলাম। পঞ্চম, অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছি। অনার্সে ৪র্থ স্থান লাভ করেছি। মাস্টারসে সপ্তম স্থান পেয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে পাশ করেছি। গান বাদে, ছবি আঁকা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা, উপস্থিত বক্তৃতা, আবৃত্তি, অভিনয় সব শাখায় প্রচুর পুরস্কার পেয়েছি। শিশু শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রথম স্থান লাভ করে উত্তীর্ণ হয়েছি। শুধুমাত্র খেলাধুলা করিনি অনেক রোগা ছিলাম। বাবার চাকুরীর সুবাদে বড় বড় শহরে বড় বড় বাড়িতে থেকেছি। বাবুর্চি, সুইপার, সেন্ট্রি, গাড়ি, টেলিফোন জন্ম থেকে দেখেছি। খুব সুন্দর শৈশব কাটিয়েছি আমি। কিশোরী থেকে লেখার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ছোটদের পাতায় হাতে আঁকা ছবি, লেখা ছাপা হয়েছে। কলেজ জীবনে উঠতে উঠতে রাজনীতিতে জড়িয়েছি। ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী ছিলাম। মতিয়া চৌধুরী, মনি সিং, মজাহার সাহেবদের সাথে অনেক মিটিং মিছিল করেছি। আমাদের সময় ভি.পি (ডাকসুর) ছিলেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। ৭০ সালে পুলিশের গ্রেফতারী পরোয়ানার জন্য ৩ মাস আত্মগোপনে ছিলাম। ছাত্র জীবনেই যে শহরে থেকেছি সেই শহরের অনেক জেলা কমিটিতে ছিলাম। আমার রাজনীতির জন্য আমার সরকারি চাকুরিজীবী পিতাকে বহুবার নিগৃহীত হতে হয়েছে। এর মাঝে স্থানীয় অনেক সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছি। এলো মুক্তিযুদ্ধ। পিতাকে ধরে নিয়ে গেলো পাকিস্তানী মিলিটারী। আমরা পরিবারসহ আত্মগোপনে। গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছি। এর জন্য আমাদের অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। শুধু পালিয়ে বেড়িয়েছি গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে।
তখন রাজাকার, জামাত, আল-বদরের চেহারা স্বচক্ষে দেখেছি। এর মাঝেও কিন্তু আমার প্রেম ছিল। সেই নবম শ্রেণি থেকে অদেখা প্রেম ছিল যার সাথে ঘর করছি, যাকে এখনো অনেক ভালবাসি, যার হাত ধরে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চলতে চাই তার সাথে। এক জীবনে আর কত কি লাগে। সবাই হয়তো ভাবছেন পরিবার কি এসব করতে কোন বাঁধা দেয়নি। অবশ্যই বাঁধা এসেছে। প্রথম বাঁধা দিয়েছেন আমার প্রিয় পিতা। প্রেমের খবর তখন জানা ছিল না কারো। কিন্তু রাজনীতির বাইরে যাওয়া ছেলেদের সাথে মেলামেশা। প্রবল বাঁধা- কিন্তু আমার সৌভাগ্য আমি সকলের কাছে একটু আলাদা ব্যবহার সারা জীবনই পেয়েছি। শিক্ষকের কাছে প্রচুর আদরণীয় ছিলাম ভাল মেয়ে এবং ভাল ছাত্রীর জন্য। রাজনীতি তখন করতো ভাল ছাত্রছাত্রীরাই। কিন্তু আমার মা ছিলেন অন্য রকম। রোকেয়া সাখাওয়াত মেমোরিয়ালের ছাত্রী ছিলেন তিনি। সুন্দরী ছিলেন, সুন্দর গান গাইতে পারতেন, অনেক সাজুগুজু করতেন, গল্পের বই পড়তেন, পাকা রাঁধুনী ছিলেন। সেই সময় যত ¯্রােতের বিপরীতে আমি চলেছি তার একমাত্র সহায়ক ছিলেন আমার “মা”। এত কথার অবতারণা করার একমাত্র কারণ আমি কোথা থেকে কোথায় এসেছি। প্রেম আমার জীবনে দীর্ঘ ৯/১০ বছরের। কেমনে হলো কেমনে চলল এটা উহ্যই থাক। শামসুন নাহার হলের ১১৩নং রুমের আবাসিক ছাত্রী ছিলাম আমি। সুদীর্ঘ প্রেমের জীবনে দু’জনের সাক্ষাত হয়েছে অনার্স ১ম বর্ষে পড়ার সময়। চিঠিই ছিল যোগাযোগের ভরসা। হাজার হাজার চিঠি এখনো আছে সুরক্ষিত। বাবা যখন জানতে পারলেন চিঠি সেন্সর হতো। কিন্তু এত লম্বা চিঠি জীবনে কেউ কোনোদিন লিখিনি- “ভালবাসি”। বিবাহযোগ্য কন্যাকে বিবাহ দেওয়ার জন্য আত্মীয়-স্বজন উঠেপড়ে লাগলেন। ঘোষণা দিলাম চোখ বন্ধ করেই, “তাকে ছাড়া আর কাউকে নয়”। প্রেমে সব কিছু অন্ধ হয়ে যায়। আমার অত্যন্ত প্রিয় মামা, চাচা, নানা, বাবা, সবাই অবাক হয়ে ভাবলেন তাদের সবচেয়ে ভাল মেয়েটি এ কি কাজ করেছে। যা তাদের ভাবনার অতীত ছিল। শুধুমাত্র মা আর ভাই-বোনেরা পাশে দাঁড়ালো। প্রেমিক বেচারাকে আরো দুঃসহ যন্ত্রণা পোহাতে হয়েছে। তার কথা সেই বলবে। আমার জীবনের এত কথা লেখার কারণ হলো আমি কোথা থেকে কোথায় এসে পড়েছিলাম। তারপর আজ এই অবস্থানে এসেছি।
কার্তিকের এক সকালে মা, বাবা সব আত্মীয়-স্বজনকে পিছনে ফেলে যখন শায়েস্তাগঞ্জের ট্রেন স্টেশনে নামলাম নতুন বউ হয়ে তখনো ভাবিনি সামনে আরো কি অপেক্ষা করছে আমার জন্য। হবিগঞ্জের বনানী রেস্ট হাউসে মনে হয় সাময়িক বিশ্রাম নিয়েছিলাম। হবিগঞ্জের নদীর ঘাটে যাওয়ার রাস্তায় পা দিয়ে চোখ ফেটে কান্না আসছিল। শুধু ভাবছিলাম এ কোথায় এলাম। জীবনে এমন শহর দেখিনি। এক রাত গ্রামে থাকিনি। ঈদ পার্বনে দাদির বাড়ি গিয়েছি একটি রাতের জন্য। আমার বাবা এ বিয়ে মন থেকে চাইছিলেন না। আমি উনার সবচেয়ে আদরের মেয়ে ছিলাম তিন বোনের মাঝে। মা’র চেয়েও বাবা আমার প্রিয়। বার বার বাবার কথা মনে পড়ছিল আর কান্না পাচ্ছিল। তখন বর্ষাকাল ছিল। নদীর কোন ঘাট ছিল না। এত কাদা। নৌকায় করে যেতে হবে, নদীতে পানিও নেই। জীবনে নৌকায় চড়িনি কোনোদিন। সকালে নৌকায় উঠে সন্ধ্যায় যেয়ে শ^শুরবাড়ির ঘাটে পৌঁছালাম। একেবারে অজোপাড়া গাঁ। ৪৪ বছর আগের বানিয়াচং-এর অবস্থা একবার ভাবুন। সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন ভাষা, ভিন্ন খাবার, ভিন্ন মানুষ, লাইট, পাকা বাথরুম নেই, মাটির ঘর, টিনের চাল যা আমার জন্য একেবারে অপরিচিত। শুধুমাত্র একজনকেই চিনি- যার হাত ধরে এসেছি। তবে আমার মাকে কৃতিত্ব দিতে হয়- আমাদের বোনদের তিনি এমনভাবে মানুষ করেছেন যেন সব অবস্থাতেই মানিয়ে নিতে পারি। বই ছাড়া যে মেয়েটি জীবনে কিছু চিনত না, যার জীবন সাহিত্য, তুলি, রঙ, লেখাঝোকা, বই দিয়ে মোড়ানো ছিল শামসুন নাহার হলের, বিশ^বিদ্যালয় কলা ভবনের মিষ্টি বাতাস যাতে তখন ছুঁয়ে যাচ্ছিল (কারণ এম.এ পরীক্ষার ১৫ দিন পর বিয়ে হয়) এমন একটি মেয়ে শিক্ষাবঞ্চিত, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, ধর্মপ্রাণ গ্রামে এসে, মাটির ঘরে থেকেছে, উঠোন ঝাড়– দিয়েছে, ধান সেদ্ধ করেছে, হ্যারিকেন পরিস্কার করেছে, আশে পাশে প্রতিবেশিদের সাথে মিলেমিশে থেকেছে, শাশুড়ির নির্দেশে কোথাও বেড়াতে গেলে নিনজা মার্কা বোরকা পড়ে রিক্সায় উঠে, রিক্সার চারিদিকে শাড়ি দিয়ে পেছিয়ে, ছাতা মেলে ধরে তবে গিয়েছে। একটি বছর এভাবে আমি থেকেছি শ^শুরালয়। তবে আমার ভাসুর, দেওর, শাশুড়ি যারা আমাকে ভালবেসেছেন, ¯েœহ দিয়েছেন, শহরের মেয়ে সম্পর্কে তাদের যে ভ্রান্ত, ভীত ধারণা ছিল তা বদলে গিয়েছিল। এখনো বানিয়াচং-এর পুরনো মানুষ এসব কথা জানে। কারণ জমির আলীর এত উচ্চশিক্ষিত, শহুরে বিশ^বিদ্যালয় (আর কেউ ছিল না) পড়–য়া বউকে এক বছর পর্যন্ত দূর-দূরান্ত থেকে মহিলারা দেখতে আসতেন। সুমন যখন আমার গর্ভে পাঁচ মাস তখন আমার রেজাল্ট বের হলো। জানলাম স্ট্যান্ড করেছি। কিন্তু তখনতো আমার জীবন অন্যরকম। সুমন হলো সিলেট ওসমানীতে। তারপর এলাম সুজাতপুরে। ডা. সাহেবের প্রথম চাকুরীস্থল। সব জায়গাতেই আমার অনেক কিছু লেখার আছে। যা মেয়েদের জানা দরকার। কিন্তু কাগজে স্থান সঙ্কুলান হবে না। তবে একটা কথা লিখতেই হয়। যখন সুজাতপুর তখন জনাব আলী কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন জনাব আলী এমপি। উনি সুজাতপুরে আসেন আমাকে উনার কলেজে নেবার জন্য। সুমন ছোট আরো পারিবারিক ঝামেলা কেউ রাজী হলেন না। কিন্তু এমপি মহোদয় কয়েক বছর পর্যন্ত আমার নামটি উনার কলেজে রেখেছিলেন। সুজাতপুর পুরো এলাকাতেই ডা. সাহেব অনেক জনপ্রিয় ছিলেন। এখনও মানুষেরা প্রচুর সম্মান করেন। হানিফখান উচ্চ বিদ্যালয়ের গভর্ণিং বডির অনুরোধে কয়েক মাস আমি নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্র অবৈতনিকভাবে পাঠদান করাই। আজো অবাক হই যখন অনেক বয়স্ক কেউ রাস্তাঘাটে হঠাৎ করে পায় হাত দিয়ে সালাম করে বলে আপনি আমাদের পড়িয়েছিলেন। ওখানে চার বৎসর চাকুরীর পর আমরা চলে যাই সৌদিআরবের তায়েফে। ডা. সাহেব সরকারিভাবে ওখানের কিং ফয়সল শিশু হাসপাতালে চাকুরীর নিয়োগ পান। সে জীবন অন্যরকম। এও এক ইতিহাস। তবে এতটুকুন বলতে পারি আমার যা শিক্ষা, যা ভালত্ব, সবটুকুন ব্যয় করেছি দুই ছেলেকে মানুষ করতে, আর পরিবারকে সাজাতে। সৌদি আরবে প্রচুর বার আল্লাহর ঘর, নবীজীর রওজা মোবারক দর্শন করেছি, হজ¦ করেছি, ওমরাহ করেছি। ওখানে খুব ভাল ছিলাম। ছেলেদের পড়াশুনার জন্য চলে আসতে হলো দেশে। আমি আসার দু’বছর পর ডা. সাহেব চলে এলেন। ততদিনে সুমন ডাক্তারী পড়ছে, ছোটন আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে আইএসসি পড়ে। কোনোভাবেই ডা. সাহেবকে রাজী করাতে পারলাম না ঢাকা বা সিলেটে স্থায়ী নিবাস গড়তে। উনার একটাই কথা- পরিবারের কাছে থাকবেন, দেশের মানুষের সেবা করবেন। দেশের মানুষের সেবা করার মনোবৃত্তি উনার আজীবনের। ছাত্র অবস্থায়, বিদেশে, দেশে এর বহু প্রমাণ আমি পেয়েছি। বহু ঝগড়া, বিবাদ, মান-অভিমান কিছুতেই উনাকে আমরা ফেরাতে পারলাম না। উনি হবিগঞ্জকেই বেছে নিলেন। তারপর তো সবারই জানা হবিগঞ্জ শহরের শ্যামলীতে বাড়ি বানিয়ে আমার স্থায়ী আগমন। তখনো হবিগঞ্জ পাজামা টাউন। দেখার মত বেড়ানোর মত কিছুই ছিল না। লেখাঝোকা সবকিছু আমার জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে প্রায় বিশ বছর। এই বিশ বছরে হয়নি আমার একটি অক্ষর লেখা- সমস্ত সময়টা ব্যয় করেছি শ^শুরবাড়ি, পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, সংসার সর্বোপরি ছেলেদের মানুষ করার পেছনে। তখন মনে হতো আমি কি পেলাম। আমার বান্ধবীরা তখন উচ্চপদে চাকুরীরত। সেই সময় মনে হয় ডা. সাহেবেরও মনে হলো আমি বড্ড একা। তাই একদিন ছোট ভাই সাংবাদিক হারুনকে সবকিছু বলে বলেছিলেন, ‘তোমার ভাবীকে কোনো সংগঠনের সাথে মিলিয়ে দাও। হারুন আমাকে তখন রুমা, রুখসানা জামান চৌধুরী, জাহানারা আফসার এদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। বলেছিল ‘ভাবী আবার লিখেন। আমাদের পত্রিকায় লেখেন”। ওই শুরু। আস্তে আস্তে আবার শুরু করলাম। অনেক কিছুর সাথে জড়াতে লাগলাম। নিয়মিত কলাম লিখতে শুরু করলাম। পাঠক গ্রহণযোগ্যতা পেলাম। আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘এলোমেলো’ প্রকাশে হারুন আমাকে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করলো। সাহিত্য পরিষদে যোগ দিলাম। এরপর আমাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় নাই। প্রশাসনে আমাকে সাদরে গ্রহণ করলেন জেলা প্রশাসক আতাউর রহমান কানন। উনিও সাহিত্যিক ছিলেন। আমার ছেলেরা ডাক্তার হয়ে হবিগঞ্জে ফিরে এলো। ডা. সাহেব যথারীতি তার সেবা তার নীতিতে এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন। যে হবিগঞ্জ শহরকে দেখে একদিন আমার চোখে পানি এসেছিল আজ গর্ব করে বলছি সেই হবিগঞ্জ শহরকে ছেড়ে এখন আমার একটি দিনও কোথাও ভাল লাগে না। এর আলো, বাতাস, পানি, ভাল, মন্দ, মানুষজন সব আমার অতি আপন। আমি অনেকের কাছে থেকে অনেক সম্মান পেয়েছি, আমিও সবাইকে যথাযোগ্যভাবে সম্মান, আদব, ¯েœহ করে থাকি। শুধু আমি নই- আমার পরিবারের সবাই। হবিগঞ্জের ভালোতে এখন আমি উৎফুল্ল হই, মন্দে কষ্ট পাই, অনেক কষ্ট পাই। মনে হয় হবিগঞ্জ আমার প্রাণের শহর। আর বানিয়াচং-এর কথা কি বলব। যখন দেখি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মেয়েদের তখন গর্বে বুকটা ভরে ওঠে। বানিয়াচঙ্গে আমার বাড়ি, বাগান বাড়ি এখন। লাইট, টিভি, ফ্রিজ, এসি সবই আছে। প্রতি মাসে যখন রাস্তা দিয়ে গাড়ি করে বাড়ি যাই গর্বে বুকটা ভরে যায়। আমার বাবার বাড়ির সব আত্মীয়-স্বজন বার বার হবিগঞ্জ বানিয়াচং বেড়াতে আসতে চায়। আগে আমাকে বলতো- ‘আপু তুমি এখানে থাকো কি করে’ এখন তারাই এসে থাকতে চায়। হবিগঞ্জের মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ তারা আমাকে অনেক আপন করে নিয়েছে, সেই গোপালগঞ্জের মেয়ে এখানে বউ হয়ে এসে আমিও বলব- খুব ভাল আছি সকলকে নিয়ে। আমার স্বামী, ছেলে সবাই একবাক্যে হবিগঞ্জের সেবা করতে সদা তৎপর। তারপরও কিছু ব্যক্তি কেন যেন বিরূপ আমাদের প্রতি। সবাই ভালবাসবে তা তো হয় না। তারপরও তাদের কাছে আমার একটাই প্রশ্ন আমার পরিবারের কোনো ব্যক্তি কি তাদের প্রতি খারাপ আচরণ করেছে বা ক্ষতি করেছে? আমার পরিবার ভাল ছাড়া কারো কোনো ক্ষতি করেনি। বউ হয়ে এসেছি ৪৪ বছর। মা, বাবা, ভাই, বোন সব হারিয়েছি। এখানেই আমার স্থায়ী ঠিকানা হবে আমি জানি। আমি এখন যেমন আছি সবার হৃদয়ে তেমনি আমৃত্যু থাকতে চাই। গোপালগঞ্জ রাতইল ঘোনাপাড়া গ্রামের মেয়ে নয় একজন হবিগঞ্জবাসী হয়ে যেন আমি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারি। হবিগঞ্জ জেলাসহ হবিগঞ্জবাসী সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি। হারুন আমার পুরো লেখাটি ছাপাবার জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। অন্য লেখায় তোমাদের নতুন পত্রিকা সম্পর্কে লিখবো। দুই ছেলেকে নিয়ে এসেছিলাম হবিগঞ্জে। এখন আমরা দশ জন। পুত্রবধূদ্বয় ডা. রোজিনা রহমান হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজে কর্মরত, ডা. সুমাইয়া জামান সিলেট নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজে কর্মরত। একমাত্র রাজকন্যা আমার রাজ্যের পূণ্য- বি.কে.জি.সি’র ছাত্রী। আতিফ নাসিফ সিলেট স্কলার্স হোমের ছাত্র। রাজাবাবু মাত্র বয়স ২ মাস। ডা. সুমন, ডা. আব্দুল্লাহ দুই পুত্র। সবাই এখন হবিগঞ্জ নিবাসী। বাড়ি বানিয়াচং। আমার পরিবারের জন্য সবাই দোয়া করবেন।
শেষ কথা বলতে চাই-

“মোর নাম এই বলে পরিচিত হোক
আমি তোমাদেরই লোক”।