১৮ জুন কাক্সিক্ষত শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে ১৩ প্রার্থী প্রতিক নিয়ে মাঠে

মোঃ মামুন চৌধুরী ॥ শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়ন ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে পর্যায়ক্রমে পৌরসভা, থানা ও উপজেলা হয়েছে। এ উপজেলায় ১৮ জুন কাক্সিক্ষত নির্বাচন। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, মহিলা ও পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন নিয়ে মোট ১৩ প্রার্থী।
এরমধ্যে যারাই নির্বাচিত হবেন তারাই শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ইতিহাসে সাক্ষী হয়ে থাকবেন। এখানে প্রশ্ন কারা হচ্ছেন তৃণমূল জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। এনিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হবিগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের সাবেক নির্বাচিত সদস্য আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নূরপুর ইউনিয়ন পরিষদে টানা ৫ বার নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী বেলাল এবং হবিগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলী আহমদ খান।
এরমধ্যে আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী বেলাল আনারস এবং আলী আহমদ খান ঘোড়া প্রতিক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে লড়াই করছেন।
তাদের পাশাপাশি ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গাজিউর রহমান ইমরান (মাইক), বিএনপি নেতা সৈয়দ তানভীর আহম্মদ জুয়েল (চশমা), আওয়ামী লীগ নেতা বদরুল আলম দিপন (টিউবওয়েল), খন্দকার শফিক মিয়া সরদার (তালা), মোঃ আব্দুল মতিন মাস্টার (বই) ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পৌর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেরা সুলতানা হ্যাপী (কলস), মমতাজ বেগম ডলি (প্রজাপতি), রুবিনা আক্তার (ফুটবল), পারভিন আক্তার (হাঁস), মুক্তা আক্তার (পদ্মফুল) প্রতিক নিয়ে প্রচারণায় আছেন।
প্রার্থীরা প্রতিক নিয়ে উপজেলার স্থানে স্থানে গিয়ে প্রচারণা করছেন। ভোটাররাও প্রার্থীদের নিরাশ করছেন না। ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এ আশ্বাসে প্রার্থীরাও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে প্রশাসন তীক্ষè নজর রাখছে। তবে ভোটাররা উন্নয়নের স্বার্থে নিজেদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করতে চান। ভোটারদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য বের হয়ে এসেছে।
আওয়ামী লীগ মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল বলেন, আমি সব সময়ই জনগণের সাথে আছি। এলাকার মানুষের প্রয়োজনে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছি। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি। তারা আমাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। বর্তমান সরকারের আমলে শায়েস্তাগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়ন অব্যাহত রাখতেই তৃণমূল জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। আমি নির্বাচিত হয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই।
স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী আহমদ খান বলেন, একাধিকবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে মানুষের সেবা করেছি। সুখ দুঃখে পাশে থেকেছি। ভবিষ্যতেও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলাবাসীর সেবা করতে চাই। সেজন্যই প্রার্থী হওয়া।
স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী বেলাল বলেন, আমি ৫ বার নূরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম। জনগনের সেবা করে আসছি ছাত্রজীবন থেকেই। শায়েস্তাগঞ্জের বিভিন্ন উন্নয়ন ও দাবি নিয়ে আমি বিগত সময়ে জনগণের সাথে ছিলাম। বিগত উপজেলা নির্বাচনে শায়েস্তগঞ্জ যখন সদর উপজেলার সাথে ছিল তখন এই এলাকার ভোটাররা আমাকেই বেশী ভোট দিয়েছিলেন। আমি নির্বাচিত হলে শায়েস্তাগঞ্জকে মডেল উপজেলা হিসাবে রূপান্তর করব।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাজিম উদ্দীন বলেন, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নতুন। এ উপজেলায় ১৮ জুন নির্বাচন। নির্বাচন হবে শান্তিপূর্ণ। প্রার্থীরা প্রচারণা করছেন। আমাদের নজর রয়েছে। কোন প্রকারের অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না।
সূত্র জানায়, শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা, ব্রাহ্মণডোরা, নূরপুর ও শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়ন নিয়ে প্রায় সাড়ে ৩৯ বর্গ কিলোমিটার এ উপজেলার এরিয়া। লোক সংখ্যা দেড়লক্ষাধিক। ভোটার প্রায় ৪৫৬৪১ জন।
২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর বিকেলে হবিগঞ্জ নিউফিল্ডে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শায়েস্তাগঞ্জকে উপজেলা ঘোষণা দেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছিল না। হবিগঞ্জ সদর-লাখাই আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির ঐকান্তিক প্রচেষ্টা চালান। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিকারের সভায় এ প্রস্তাব অনুমোদন পায়।
২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর রবিবার শায়েস্তাগঞ্জ ভূমি অফিসের অস্থায়ী কার্যালয়ে অফিস করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম ফেরদৌস ইসলাম। এর আগে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ কর্তৃক কার্যালয়টি উদ্বোধন হয়। এরসাথে এ উপজেলার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৮ জুন বহুল কাক্সিক্ষত এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।