স্টাফ রিপোর্টার ॥ লাখাই’র কৃষ্ণপুর গ্রামে পল্লী চিকিৎসকের অপচিকিৎসায় রোগী তৌহিদ মিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় লাখাই থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল সোমবার নিহতের স্ত্রী ফুল বানু বেগম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় আটককৃত কৃষ্ণপুর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক শংকর লাল রায়কে আসামী করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বাবুল সিংহ জানান, মামলার এজাহারে নিহত ফুল বানু বেগম উল্লেখ করেছেন তার স্বামী তৌহিদ মিয়া দীর্ঘদিন পায়ে ব্যথা অনুভব করছিলেন। এ কারণে তিনি হাটতে পারতেন না। বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা করানোর পরও তারা এর কোন সমাধান পাননি। রবিবার সকাল থেকে তৌহিদ মিয়া পায়ে প্রচন্ড ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন। এ অবস্থায় তার স্বজনরা কৃষ্ণপুরের পল্লী চিকিৎসক শংকর লাল রায়কে দেখানোর পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে অসুস্থ তৌহিদ মিয়াকে তার স্ত্রীসহ স্বজনরা শংকর লাল রায়ের চেম্বারে নিয়ে আসেন। তৌহিদ মিয়ার ব্যথা সরানোর একাধিক ইনজেকশন তার শরীরে দেন। সাথে আরও অতিরিক্ত ঔষধও সেবন করিয়ে দেন। ইনজেকশন ও ঔষধ সেবনের পর মুহূর্তের মধ্যে তৌহিদ মিয়া ছটফট করতে থাকেন। এক পর্যায়ে সে মাটিতে ঢলে পড়ে যায়। এর মধ্যে তার মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে নিহত তৌহিদ মিয়ার স্বজনরা লাখাই থানা পুলিশকে অভিযোগ করে এ ঘটনাটি জানানোর পর পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে এবং পল্লী চিকিৎসক শংকর লাল রায়কে আটক করেন।
সূত্র জানায়, আটকের পর নিহতের স্বজনদের মামলা দায়ের না করার জন্য বিভিন্ন মহলের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করা হয়। এরপর নিহতের স্বজনরা ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশ এ ধরণের অপচিকিৎসা প্রতিরোধের জন্য নিহতের স্বজনদের পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে নিহতের স্বজনরা মামলা দায়েরের প্রস্ততি নেয়। গতকাল সকালে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
পল্লী চিকিৎসক শংকর লাল রায়ের তেমন কোন লেখাপড়া নেই। তার বাবা এক সময় গ্রামে কবিরাজী ও হাতুরে ডাক্তার হিসেবে লোকজনদের চিকিৎসা করতেন। তার বাবার মৃত্যুর পর শংকর লাল রায় নিজে ডাক্তার হিসেবে পরিচয়ে চেম্বার খুলে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা শুরু করেন। তার চেম্বার এলাকার অধিকাংশ দরিদ্র পরিবারের লোকজন চিকিৎসা নেয়ার জন্য ভিড় লেগে থাকতো। এর মধ্যে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসায় বেশ কজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এসব রোগীর মৃত্যুর ঘটনা শংকর লাল রায় কোন সমঝোতার মাধ্যমে শেষ করেছেন আবার কোনটা এমনিতেই শেষ হয়েছে। এসব অপচিকিৎসা দীর্ঘদিন ধরে বীরদর্পে চালিয়ে কোটি কোটি টাকা মালিক হয়েছেন শংকর লাল রায়। এর মধ্যে মাধবপুর পৌরসভায় ২টি বিলাসবহুল বাসা ও ৪টি দোকান ক্রয় করেছেন তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে তার বাসা রয়েছে বলে জানা গেছে। নিজ এলাকায় সুন্দর বাড়িসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েছেন তিনি। অপচিকিৎসা চালিয়ে সম্পত্তির পাহাড় গড়লেও সাধারণ রোগীরা প্রতারণার শিকার হয়ে কেউ পল্লী চিকিৎসক শংকর রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেননি। হিন্দু অধ্যুষিত কৃষ্ণপুরসহ আশপাশের গ্রামের লোকজন যেন তার অপচিকিৎসার কাছে জিম্মি ছিলেন। গতকাল রবিবার তার অপচিকিৎসায় নাছিরনগর উপজেলার পুলিকুন্ডা গ্রামের তৌহিদ মিয়ার অকাল মৃত্যু হলো। তৌহিদ মিয়ার মৃত্যুর খবরে তার আত্মীয় স্বজনরা পল্লীচিকিৎসক শংকর লাল রায়ের চেম্বার ঘেরাও করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং তাকে গ্রেফতারের দাবি জানালে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এখন তারা পল্লীচিকিৎসক শংকর লাল রায়ের বিচার দাবি করছেন। এদিকে গতকাল হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতাল মর্গে নিহত তৌহিদ মিয়ার লাশের ময়না তদন্ত শেষে পুলিশ তার পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে। গতকাল বিকেলে তার পরিবারের লোকজন নিজ বাড়িতে নিয়ে লাশ দাফন করে। অপরদিকে আটক পল্লীচিকিৎসক শংকর লাল রায়কে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।