শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত বিনির্মাণে করণীয় শীর্ষক আলোচনায় হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা

শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়তে হলে অবশ্যই প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন শেষ করতে হবে। প্রযুক্তির সুফল ভোগ করতে হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ আমাদেরকে স্বপ্ন দেখতে হবে আমরা ডিসি, এসপি, অধ্যক্ষ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হব। আমাদেরকে সবসময় বাবা, মা, শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করতে হবে। অবসর সময়ে খেলাধুলা করতে হবে। কারণ খেলাধুলায় শরীরের শক্তি বল বাড়ে। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অনেকে স্মার্টনেস জাহির করতে ধুমপান করে থাকে। সিগারেট দিয়ে সে যাত্রা শুরু হয়। আর সিগারেট হচ্ছে সকল মাদকের মা-বাবা। তাই আমাদেরকে বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের সিগারেটকে ঘৃণা করতে হবে। কারণ যারা মাদকাসক্ত হয় তারা মাদক ক্রয়ের টাকার জন্য প্রথমে বাবা-মা’র পকেট, ড্রয়ার থেকে টাকা চুরি শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা ঘরের হাড়ি পাতিল থেকে শুরু করে অন্যান্য জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে তা বিক্রি করে যে টাকা পায় তা দিয়ে মাদক গ্রহণ করে। যখন এ পথও তার বন্ধ হয়ে যায় তখন সে ঘরের বাহিরে চুরি ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ে। ফলে একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়। তাই আমাদেরকে মাদককে ঘৃণা করতে হবে। পাশাপাশি জঙ্গিবাদকেও ঘৃণা করতে হবে। একশ্রেণির চতুর ব্যক্তি শিক্ষার্থীদের ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গিবাদের দিকে ধাবিত করে। এ থেকে সব সময় নিজেকে নিরাপদ রাখতে হবে। কেউ এ রকম করার চেষ্টা করলে তা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে হবে। হবিগঞ্জ নাগরিক কমিটির উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত বিনির্মাণে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা (বিপিএম পিপিএম-সেবা) এসব কথা বলেন।
হবিগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য চৌধুরী আব্দুল হাইর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আউয়াল তালুকদারের পরিচালনায় শনিবার মাধবপুরের জগদীশপুর জেসি হাই স্কুল এন্ড কলেজে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় তিনি আরো বলেন, বাল্য বিয়ে একটি সামাজিক ব্যাধি। এটি পারিবারিক অশান্তি থেকে শুরু করে একটি নিষ্পাপ জীবনকে অতি সহজেই বিনষ্ট করে দিতে পারে। বাল্য বিয়ের ফলে একটি অপরিণত মেয়ে নতুন সংসারে গিয়ে নিজেকে সে পরিবেশে সহজে মানিয়ে নিতে পারে না। ফলে পারিবারিক অশান্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে তা বিবাহ বিচ্ছেদে গড়ায়। বিবাহ বিচ্ছেদের পর পিত্রালয়ে ফিরে এসেও সে নানা অপবাদের শিকার হয়। এক পর্যায়ে সে সকল যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এটি কখনো আমাদের কাম্য নয়। যে মেয়েটি আজ আত্মহত্যা করলো তাকে যদি অপরিণত বয়সে বিয়ে দেয়া না হতো তাহলে সে ভাল ম্যানেজার হতো। সমাজের কল্যাণে সে অবদান রাখতে পারতো। তাই আমাদেরকে বাল্য বিয়ে থেকে দূরে থাকতে হবে। কোথাও বাল্য বিয়ে আয়োজনের খবর পাওয়া গেলে তা সাথে সাথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ জনপ্রতিনিধিদের জানাতে হবে। সামান্য এ সচেতনতাবোধ একটি জীবনকে বাঁচাতে পারে। বাল্য বিয়ের কুফল সম্পর্কে সবাইকে অবগত করতে হবে। আর ইভটিজিংকে অবশ্যই না বলতে হবে। হবিগঞ্জ একটি বৈচিত্রময় জেলা। এ জেলায় হাওর, বাওড়, চা বাগান, পৃথিবী বিখ্যাত রিসোর্ট, আগর বাগান, সেগুন বাগান, রাবার বাগান, জাতীয় উদ্যান, প্রাকৃতিক গ্যাস, শিল্পকারখানাসহ নানা সম্পদ রয়েছে। তাই এ জেলাকে নিয়ে গর্ব করা যায়। কিন্তু এ জেলার একটি দুর্নামও রয়েছে, আর তা হল দাঙ্গা। এ জেলার মানুষ সামান্য কারণে দাঙ্গায় লিপ্ত হয়। তাই এই জেলাকে নিয়ে আমাদের গর্ব করতে হলে অবশ্যই দাঙ্গা পরিহার করতে হবে। সবশেষে তিনি মোবাইল ভাইরাস থেকে দূরে থাকতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান জানান।
সভায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বার্ড কুমিল্লার পরিচালক মিজানুর রহমান, শাহজালাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর সিরাজুল হক, বৃন্দাবন সরকারি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর ইকরামুল ওয়াদুদ, সরকারি মহিলা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর জাহানারা খাতুন, চৌমুহনী খুরশেদ হাই স্কুল এন্ড কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ তপন কুমার ধর, শ্রীমঙ্গল বিটিআরআই’র প্রাক্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কামরুল হাসান, সিলেট কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ সায়েম আহমেদ, বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সহকারি অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ্র দেব, মাওলানা আছাদ আলী ডিগ্রি কলেজের সহকারি অধ্যাপক মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডি’র গবেষণা সমন্বয়ক এস এম আরাফাত, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মমিন, জগদীশপুর জেসি হাই স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৈয়দ মোদরেকুল হোসাইন। এ ছাড়াও স্কুলের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন কাজী কামাল উদ্দিন, গৌরি বণিক। শুরুতেই পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা মোজাম্মেল। গীতা থেকে পাঠ করেন পন্ডিত রাম শেখর ভট্টাচার্য্য। অনুষ্ঠানের শুরুতে হবিগঞ্জ নাগরিক কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল হান্নানের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ ও দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এছাড়া মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন মাওলানা সালেহ উদ্দিন।
আলোচনা সভায় বক্তাগণ বলেন, শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়তে হলে অবশ্যই প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন শেষ করতে হবে। প্রযুক্তির সুফল কুফল উভয় দিক আছে। শুধু প্রযুক্তির সুফল ভোগ করতে হবে। আর কুফলগুলো পরিত্যাগ করতে হবে। বক্তাগণ শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার না করার আহবান জানান। শুধু তাই নয় সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে হলে নিজে মাদক থেকে দূরে থাকার পাশাপাশি অন্যকেও মাদক থেকে দূরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানানো হয়। বক্তাগণ বলেন, মানুষের সম্ভাবনা হচ্ছে ট্রেনের মত। যা ছেড়ে দিলে ধরা যায় না। পরবর্তী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তাই অপেক্ষা না করে সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে। জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশের মাধ্যম হলো বই। তাই উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়তে শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বই ভাল করে পড়ার পরামর্শ দেন বক্তারা।