বিশেষ কওে হবিগঞ্জসহ সিলেট বিভাগের মানুষ চরম দুর্ভোগে
এম,এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ থেকে ॥ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মধ্যে তীব্র যানজট। ৩ ঘন্টার রাস্তা ১২ ঘন্টায়ও পার হওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে সিলেট বিভাগের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। শুক্রবার নবীগঞ্জ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে যেতে সময় লেগেছে ৮ ঘন্টা। যেখানে ২ ঘন্টায় যাওয়ার কথা। এদিকে মহাসড়কে টানা দুই দিন ধরে দীর্ঘ যানজট চলছে। হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি গোল চত্বর থেকে শায়েস্তাগঞ্জ গোলচত্বর। শায়েস্তাগঞ্জ থেকে মাধবপুর এবং সরাইল বিশ্বরোড মোড় ও শাহবাজপুর সেতু হয়ে হবিগঞ্জের মাধবপুর এলাকা পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকায় গত বুধবার ভোর ছয়টা থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত যানজট দেখা গেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ যানজট হচ্ছে শায়েস্তাগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে আশুগঞ্জ পর্যন্ত। এছাড়া ঢাকা যাওয়ার পথে নরসিংদী মাধবদী, কাচপুর ও নারায়ণগঞ্জ বিশ্বরোডে যানজট রয়েছে।
শুক্রবার যানজটের বিষয়ে বাংলাদেশের আলোচিত ইসলামি বক্তা মুফতী গিয়াস উদ্দিন তাহেরী বলেন, আমি যানজটের মধ্যে পুরো এক রাত আটক ছিলাম। আমাদের ঢাকা সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ থেকে নবীগঞ্জ আউশকান্দি ও শায়েস্তাগঞ্জ মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৫/৭ ঘন্টা যানজট থাকে, এই বিষয়টি দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তিনি বলেন, পরিকল্পনা ছাড়াই মহাসড়কের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে তাই প্রতিদিন যানজট হচ্ছে। মহসড়কের নির্মাণ কাজে বড় আকারের গর্ত ও কোন ডাইব্রেশন না থাকায় এ যানজটের প্রধান কারণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিনে গত দুই দিন দেখা গেছে, মহাসড়কের নির্মাণ কাজের বিভিন্ন অংশে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের কয়েকটি স্থান বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড গোল চত্বর ও শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রীজ এলাকা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জায়গাটি অতিক্রম করার জন্য চালকদের অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে।
ফলে দূরপাল্লার যানবাহন মহাসড়কের গোলচত্বর এলাকায় এসে থেমে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর সেখানে গর্তে যানবাহন আটকে যাচ্ছে, কোনোটি আবার বিকল হয়ে পড়ছে। ঢাকা থেকে সিলেটগামী পণ্যবাহী একটি ট্রাককে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি টোল প্লাজা, শায়েস্তাগঞ্জ গোল চত্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড গোলচত্বর এলাকায় বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
স্থানীয় লোকজন জানান, বুধবার দিবাগত রাত থেকে মহসড়কের যানজট সৃষ্টি হয়। শুক্রবার ভোর ছয়টার পর থেকে যানজট বাড়তে থাকে। বিকেল পর্যন্ত নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি থেকে শায়েস্তাগঞ্জ থেকে মাধবপুর, আশুগঞ্জ গোলচত্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের বিস্তৃতি ঘটে।
গত দুই দিনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কে যানজট ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে।
নবীগঞ্জ উপজেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহ শামীম আলম বলেন, শত শত নারী-পুরুষকে হেঁটে গন্তব্যে ছুটতে দেখা গেছে। গতকাল দিনভর মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কম চলাচল করতে দেখা গেছে। হবিগঞ্জসহ নবীগঞ্জ, বাহুবল,সহ সিলেট বিভাগের দূরপাল্লার যানবাহনের হাজারো মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
সিলেট থেকে ঢাকাগামী পণ্যবাহী নবীগঞ্জের ট্রাকচালক আমির হোসেন বলেন, ‘রাত ২টায় ছিলাম চান্দুরা আর এখন বেলা ১১টায় আছি বিশ্বরোড এলাকায়। মনে হচ্ছে আমরা কারও কাছে জিম্মি হয়ে আছি। একটু জায়গা ঠিক করে ড্রাইব্রেশন করে দিলে আমরা ভালো করে চলতে পারি, কিন্তু তা হচ্ছে না।’
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা হানিফ বাসের চালক রহিম আলী বলেন, ‘আমাদের কপাল খারাপ। না হলে মাসের পর মাস ধইরা এইখানে এ দশা কেন অইবে! এইখানে আসলেই আমাদের ঝামেলা অয়।’ “আইলাম রাতে অখন দুপুর ১২টা বাজে যাত্রীদের নিয়া বসে আছি। কত কষ্ট কওয়া যায় না ভাই”
এব্যাপারে শেরপুর হাইওয়ে থানার ওসি দেওয়ান আবু তাহের বলেন, আমরা এসব যানজট রোধে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেই। আমার এলাকা নবীগঞ্জে খুবই কম যানজট হয়।
শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, আমার এলাকায় যানজট হয় মুল মহাসড়কের ব্রীজগুলো নির্মাণের জন্য কাজ চলছে তাই। আমরা যানজট নিরসনে সব সময় কাজ করছি।
সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ভোর ছয়টা থেকে রোডে আছি। এখন পর্যন্ত কিছু খাই নাই। পা ফুলে গেছে। কিছুক্ষণ পর পর গর্তে যানবাহন আটকে যাচ্ছে। এক একটি যানবাহন ওঠাতে ৫ থেকে ১০ মিনিটও সময় লাগে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি মহাসড়কটিকে যানজটমুক্ত রাখতে। কিন্তু পারছি না। কয়েক দিন পরপর ইট দিয়ে গর্ত ভরাট করেছি। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি।
সড়ক ও জনপথ (সওজ), জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কের ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে ৬ লেনে উন্নীতকরণ কাজ ধীরগতিতে চলছে ৫ বছর ধরে। ৫ আগস্টের পর কাজের গতি আরও কমে যায়।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের সিলেট অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন বলেন, সেতু ও কালভার্টগুলো পরিকল্পনা করেই তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন হয়তো শ্রমিক সংকটের কারনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ ধীরগতিতে হচ্ছে। আমরা দ্রুততম সময়ে ব্রীজ ও কালভার্ট নির্মান কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। নির্মান কাজ চললে জন দুর্ভোগ সামান্য কিছ হয় এটাই স্বাভাবিক। আমরা এখনও সর্বোচ্চ ১৫% কাজ করেছি। আমরা কাজের গতি বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা পেয়েছি। কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে কাজ চলমান রয়েছে।