বর্ষাকালে শিম চাষে কৃষকের বাজিমাত
মোঃ মামুন চৌধুরী ॥ শীতকালীন সবজি শিম। অথচ বর্ষাকালে শিম চাষ করে বাজিমাত করেছেন কৃষক হাজী আব্দুস শহীদ। তিনি বাহুবল উপজেলার কামারগাঁও গ্রামে প্রায় ৩৩ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ করে এ সফলতা পান। শিম ক্ষেতে নিয়মিত পরিচর্যা করেন। তার ন্যায়, আরো কয়েকজন কৃষকও এ জাতের শিম চাষ করে সফলতা পেয়েছেন।
কৃষক হাজী আব্দুস শহীদ জানান, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ক্রিপার প্রদর্শনীতে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ করেন। গাছ থেকে শিম সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে যান। পাইকারের কাছে প্রতিকেজি শিম ১৭০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি করেন। গ্রীষ্মকালীন সিকৃবি-১ জাতের শিম বীজ এপ্রিল মাসে রোপণ করেন। শিম চাষে প্রায় ৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। জুন মাসের শেষ সময়ে গাছে গাছে শিম দেখা যায়। সেই শিম বিক্রি করে প্রায় ২০ হাজার টাকা এসেছে। অক্টোবর পর্যন্ত শিম উৎপাদন অব্যাহত থাকার কথা। ওই সময় পর্যন্ত আরও ১ লাখ টাকা শিম বিক্রি থেকে আসবে বলে তিনি আশা করছেন।
তিনি আরও জানান, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীমের সার্বিক পরামর্শে শিম চাষ করেন। এতে তিনি সফল হয়েছেন। তার শিম চাষ দেখে এলাকার অন্য কৃষকদের মাঝেও আগ্রহ দেখা দিয়েছে। তারাও গ্রীষ্মকালীন শিম চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
কৃষক হাজী আব্দুস শহীদের ছেলে আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, শিক্ষকতার পাশাপাশি সময় পেলেই শিম ক্ষেতে পরিচর্যা করেন। শিমে ভালো ফলন দেখে তিনি আনন্দিত। শিম চাষে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করায় তিনি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
স্থানীয় কৃষক মো. আরফান আলী বলেন, গ্রীষ্মকালীন সিকৃবি-১ জাতের শিম চাষ শুরু করেন হাজী আব্দুস শহীদ। শিম চাষে তিনি সফলতা পেয়েছেন। পাইকাররা এ শিম প্রতিকেজি ১৭০ থেকে ১৪০ টাকা দরে কিনে নিয়ে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন। তাই এ মৌসুমে আমিও ৩০ শতক জমি আবাদ করে এ জাতের শিম চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। আমি শিম বিক্রি করতে পারছি। অক্টোবর মাস পর্যন্ত শিম বিক্রি চলবে।
বাহুবল উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম জানান, উপজেলার নানা এলাকায় শীতকালে বিভিন্ন জাতের শিম চাষ হলেও গ্রীষ্মকালের জন্য উপযুক্ত হচ্ছে সিকৃবি-১ জাতের শিম। এই শিম গ্রীষ্ম ও বর্ষার আবহাওয়া সহিষ্ণু। মূলত এই শিম চাষে উপজেলার কামারগাঁও গ্রামে সফলতা পেয়েছেন হাজী আব্দুস শহীদ। তার দেখাদেখি মো. আরফান আলী, সমুজ আলী, আজগর আলী, নিজাম উদ্দিনসহ আরো অনেক কৃষক শিম চাষে সফল হচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, এখানকার উঁচু জমিতে কৃষকরা ধানসহ নানারকম সবজির আবাদ করেন। বর্তমানে আমার পরামর্শে একাধিক কৃষক সিকৃবি-১ জাতের শিমের আবাদ করেছেন। ভালো চাষের জন্য সবসময় পরামর্শ দিয়ে থাকি। ক্ষেতে ভালো ফলন হয়েছে। তারা দামও পাচ্ছেন ভালো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চিন্ময় কর অপু বলেন, বাহুবলে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ হতো না। বর্তমানে সেখানে শিম চাষ করছেন কিছু কৃষক। ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকরা দামও পাচ্ছেন ভালো। ভবিষ্যতে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ আরও বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।