ভূয়া পরোয়ানা সৃষ্টি করে নিরীহ লোককে হয়রানী
স্টাফ রিপোর্টার ॥ শায়েস্তাগঞ্জের অলিপুর শিল্প এলাকায় জাল জালিয়াতি ও ভূয়া দলিল তৈরি করে নিরীহ লোকজনের সম্পদ দখল ও হয়রানী করে আসা চক্রের অন্যতম সদস্য জসিম উদ্দিন আহমেদকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। সোমবার বিকেলে র‌্যাব-৯ শায়েস্তাগঞ্জ ক্যাম্পের একটি অভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। ওইদিনই বিকেলে তাকে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হলে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি দিলীপ কান্ত এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জসিম উদ্দিন আহমেদ উপজেরার ব্রাহ্মণডুরা গ্রামের মৃত কুকু মিয়ার ছেলে। এর আগে এ ঘটনায় সৈয়দ ফোরকান আলী নামে এক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে শায়েস্তাগঞ্জের অলিপুর শিল্প এলাকায় প্রতারণা ও জাল জালিয়াতি করে আসছে একটি চক্র। এমনকি আদালতের সিল ও দস্তখত জাল করে নিরীহ লোকজনের নামে ভূয়া ওয়ারেন্ট সৃষ্টি করে হয়রানীও করে থাকে চক্রটি। ওই চক্র অলিপুর এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক মা হোমিও হল এন্ড লাইব্রেরীর স্বত্ত্ব¡াধিকারী এস এম সফিকুল ইসলাম টনু নামে এক ব্যক্তিতে ভূয়া পরোয়ানা সৃষ্টি করে পুলিশের মাধ্যমে তাকে গ্রেফতার করিয়ে কারাগারে প্রেরণ করলে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। পরে আদালতে ওয়ারেন্টটি জাল প্রমাণ হওয়ায় হবিগঞ্জের সাবেক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন সফিকুল ইসলাম টনুকে জামিন দিলে তিনি হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আমল আদালত-১ এ একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তে ঘটনার সাথে জড়িত ব্রাহ্মণডুরা গ্রামের মৃত কুকু মিয়ার ছেলে জসিম উদ্দিন আহমেদ, কেশবপুরের মৃত আবু আলী চৌধুরী ওরপে মধু মাস্টারের ছেলে জামাল চৌধুরী ও সুরাবই গ্রামের ছমির আলীর ছেলে সৈয়দ ফোরকান আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে ২ অক্টোবর দুপুরে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফখরুল ইসলাম ওই ৩ জনের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট এর আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দায়রা ৫১৭/২১ নম্বরের একটি মামলার পরোয়ানায় গ্রেফতার করা হয় সফিকুল ইসলাম টনুকে। পরে হবিগঞ্জের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার পক্ষে জামিন চাইলে ভারপ্রাপ্ত বিচারক জাকির হোসাইন খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ওই নাম্বারের কোন মামলাই নেই বরগুনা আদালতে। পরে তাকে জামিন প্রদান করেন বিজ্ঞ বিচারক। সফিকুল ইসলাম টনু জামিনে মুক্তি পেয়ে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় খবর নিয়ে জানতে পারেন তিনি গ্রেফতার হওয়ার আগে জসিম, জামাল ও ফোরকান থানায় গিয়ে বরগুনা থেকে একটি ওয়ারেন্ট এসেছে কিনা তার সন্ধান করে। এর মাঝে জসিম উদ্দিনের পক্ষে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সফিকুল ইসলাম টনু তার পক্ষে কাজ করেননি বলে শত্রুতা ছিল। জামাল ও ফোরকান তার সহযোগী ছিল। এ সূত্র ধরে সফিকুল ইসলাম টনু হবিগঞ্জের সাবেক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে মামলা দায়ের করলে বিজ্ঞ বিচারক হবিগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমানকে তদন্তের আদেশ দেন। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফখরুল ইসলাম তদন্তকারী অফিসারকে তলব করেন। তদন্তকারীর উপস্থিতিতে শুনানী শেষে পুনরায় বিস্তারিত অনুসন্ধান করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য একই অফিসারকে আদেশ প্রদান করেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান বরগুনা আদালত থেকে তথ্য যাচাই ও বিস্তারিত অনুসন্ধান শেষে জসিম, ফোরকান ও জামালের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে বিজ্ঞ বিচারক ৩ জনের নামে ওয়ারেন্ট এর আদেশ দেন। এ মামলা দায়েরের কারণে আসামীরা মামলার বাদী সফিকুল ইসলাম টনুকে হামলা করে গুরুতর জখম করে। এমনটি ওয়ারেন্ট আদেশ হওয়ার পরও আত্মসমর্পণ না করে আসামীরা অলিপুর এলাকায় প্রকাশ্যে চলাফেরা করে। জসিম উদ্দিন আহমেদ ও সৈয়দ ফোরকান গ্রেফতার হলেও এখনও পলাতক রয়েছে জামাল নামে অপর আসামী।
মামলার বাদী এস এম সফিকুল ইসলাম টনু বলেন, আসামীরা মাঠ পর্যায়ে সীল, স্বাক্ষর নকল ও ভূয়া নামজারী সৃষ্টি করে জাল দলিলের মাধ্যমে প্রতারণা করে আসছে। অলিপুর এলাকার অনেক নিরীহ লোকজনকে তারা হয়রানী করে আসছে ওই চক্রটি। এ চক্রের প্রধান জসিম। তার নেতৃত্বে একটি চক্র সেখানে কাজ করছে। সে নিরীহ লোকজনের জমি নিজের নামে অথবা অন্য কারও নামে রেজিস্ট্রি করে প্রতারণা করে আসছে। আমাদের মতো নিরীহ লোকজন তাদের কারণে বারবার নিগৃহীত ও নির্যাতিত হচ্ছে। এখন প্রমাণ হয়েছে অপরাধী যত বড়ই হোক কেউ আইনের উর্ধে নয়। আর কেউ তার অপরাধ ঢেকে রাখতে পারে না।
বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহ ফখরুজ্জামান জানান, এক সময় ভূয়া ওয়ারেন্ট সৃজন করে অনেক নিরীহ লোকজনকে হয়রানী করা হতো। এখন অনেক আধুনিকায়নের পরও এ ধরনের হয়রানী দুঃখজনক। উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্তৃক তদন্তে রহস্য উদঘাটন হওয়ার পর আসামীরা বাদীকে জখম করেছে। পরোয়ানা নিয়ে প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে। এখন দুইজন গ্রেফতার হওয়ায় অপরাধীরা ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকবে।