রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেফতার করায় পুলিশ সুপার আক্তার হোসেনকে শ্রমিকদের ধন্যবাদ
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক জয়নাল স্বীকার করে যে, সে ঋণগ্রস্ত হয়ে সিএনজি ছিনতাই করে। কিন্তু চালক রোমান আলী তাকে আঘাত করায় রাগান্বিত হয়ে সে রোমানকে হত্যা করে লাশে আগুন ধরিয়ে দেয়
স্টাফ রিপোর্টার ॥ বানিয়াচংয়ে সিএনজি চালক শাহ রোমন আলী (২২) হত্যা মামলার প্রধান আসামি জয়নাল মিয়া (২২) কে চাঁদপুর থেকে আটক করেছে পুলিশ। সেই সাথে রোমন আলীর ছিনতাইকৃত সিএনজিসহ হত্যাকাজে ব্যবহৃত দা ও ছোরা উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এমন একটি চাঞ্চল্যকর হত্যার রহস্য উন্মোচন করায় পুলিশ সুপার আক্তার হোসেনকে সিএনজি শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে।
পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন জানান, গত ৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টার দিকে সুজাতপুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর থেকে নিহত রোমান আলীর পুড়ে যাওয়া লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তার মা রহিমা বেগম বাদি হয়ে বানিয়াচং থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ বিভিন্ন সোর্স ও মোবাইল ট্যাকিয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হয় বানিয়াচং উপজেলার সুজাতপুর আদিত্যপুর গ্রামের মৃত ইউনুস মিয়ার পুত্র জয়নাল মিয়াসহ ৩-৪ জন রোমান মিয়াকে হত্যা করে সিএনজি নিয়ে যায় এবং আলামত নষ্ট করতে লাশ পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করে। সিএনজি নিয়ে যাবার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার অদূরে গ্যাস শেষ হয়ে যাওয়ায় তা রেখে তারা আত্মগোপন করে।
পুলিশ সুপার আক্তার হোসেনের নির্দেশে বানিয়াচং সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ রঞ্জন দেবের তত্ত্বাবধানে বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ দেলোয়ার হোসেন, ওসি তদন্ত আবু হানিফ ও সেকেন্ড অফিসার অমিতাভ তালুকদারসহ একদল পুলিশ সাড়াশি অভিযান চালিয়ে গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিকালে চাঁদপুর জেলার কাচুয়া গ্রামে শ^শুর বাড়িতে লুকানো অবস্থায় জয়নাল মিয়াকে আটক করে। এ সময় সে পুলিশের কাছে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। তার তথ্য অনুযায়ী সিএনজিটি সরাইল থেকে উদ্ধার করা হয়। সেই সাথে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ১টি দা ও ২টি ছুরি জব্দ করা হয়। এরকম একটি হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়ন ১৩১৯ এর সভাপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন, দক্ষিণ বানিয়াচং সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি আশিক মিয়া, শ্রমিক ইউনিয়নের দক্ষিণ আঞ্চলিক শাখার সভাপতি জিল্লুর রহমান জিলু, সাধারণ সম্পাদক মোঃ জসিম মিয়াসহ অর্ধশতাধিক নেতৃবৃন্দ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এসে পুলিশ সুপার আক্তার হোসেনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। সেই সাথে মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতার করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য দাবি জানান।
এ সময় পুলিশ সুপার বলেন, চোর, ছিনতাইকারী ও খুনীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে। ৫ দিনের মাথায় রহস্য উন্মোচন হয়েছে। এর সাথে জড়িত সকলকেই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, আটক জয়নাল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। সে জানায় অভাব অনটনের কারণে ঋণগ্রস্ত। ঋণের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে কয়েকজনকে নিয়ে রোমান আলীকে হত্যা করে সিএনজিটি নিয়ে যায়। সেই সময় রোমান আলীও তাকে একটি আঘাত করলে সে রাগান্বিত হয়ে হত্যা করে লাশ আগুনে পুড়িয়ে আলামত নষ্ট করার চেষ্টা করে। অন্যদিকে রোমান আলী এক বছর আগে বিয়ে করে। তার ২২ দিনের একটি শিশু সন্তান রয়েছে। রোমান আলীকে হারিয়ে তার মা ও স্ত্রী বার বার মুর্চা যাচ্ছেন। এরকম একটি ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।