ডেস্ক রিপোর্ট ॥ রাজনীতিতে পরিচিত এবং নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ধর্মভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ অনেক দল নির্বাচনে যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, ইসলামপন্থী রাজনীতিতে যে কয়টি দলের প্রভাব রয়েছে, তাদের বেশির ভাগ এখন পর্যন্ত ভোটে যাওয়ার ঘোষণা দেয়নি। এর মধ্যে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক ৪টি দল ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এর বাইরে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে রাজনীতিতে প্রভাব রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর। দলটি বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত নয়। এই ৫টি দলকে ইসলামপন্থী রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। অন্যদিকে ইসলামপন্থী যে কয়টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে, কার্যত ভোটের মাঠে দলগুলোর খুব একটা প্রভাব নেই। অতীতে সে দলগুলো থেকে সংসদ সদস্য হওয়ারও নজির খুবই কম।
নির্বাচন কমিশনে ৪৪টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত। এর মধ্যে ইসলামপন্থী দল ১১টি। যার ৭টি নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ওই দলগুলো হলো- বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, জাকের পার্টি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি।
কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক যে দুটি দল নির্বাচনে যাচ্ছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর। এখন তাঁর ছেলে আতাউল্লাহ হাফেজ্জী এই দলের আমির। আরেকটি দল ইসলামী ঐক্যজোটের প্রতিষ্ঠাতা হাফেজ্জী হুজুরের জামাতা প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনী। এখন তাঁর ছেলে আবুল হাসানাত আমিনী এই দলের চেয়ারম্যান। গত বৃহস্পতিবার রাতে দল দুটির শীর্ষ নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সাথে তাঁর গণভবনের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করেছেন।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও ইসলামী ঐক্যজোটের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, তারা ১০টি করে ২০টি আসন চেয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে তালিকা দিয়েছেন। তাদের মূল লক্ষ্য ৪টি আসন। এর মধ্যে ইসলামী ঐক্যজোট হাসানাত আমিনীর জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ), দলের যুগ্ম মহাসচিব আলতাফ হোসাইনের জন্য কুমিল্লা-২ (হোমনা-মেঘনা) আসন চাওয়া হয়। আর খেলাফত আন্দোলন দলের আমির আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর জন্য ঢাকা-২ (কামরাঙ্গীরচর, কেরানীগঞ্জ ও সাভারের একাংশ) ও মহাসচিব হাবিবুল্লাহ মিয়াজির জন্য ঢাকা-৭ (লালবাগ) আসন চাওয়া হয়।
একসময় কওমি মাদ্রাসা অঙ্গনে খেলাফত আন্দোলন ও ইসলামী ঐক্যজোটের ভালো প্রভাব ছিল। দলে ভাঙন, শীর্ষ নেতৃত্বের অবস্থান পরিবর্তনসহ নানা কারণে রাজনীতিতে এবং কওমি মাদ্রাসা অঙ্গনে দল দুটির আগের অবস্থা নেই। এ পর্যন্ত খেলাফত আন্দোলনের কেউ সংসদ সদস্য হতে পারেননি। ২০০১ সালে মুফতি আমিনী ইসলামী ঐক্যজোট থেকে সংসদ সদস্য হন বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। ২০১৪ সালে দলটি বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন বর্জন করে। ২০১৬ সালে ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপির জোট থেকে বের হয়ে সরকারের ঘনিষ্ঠ হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলটি ৪০ জন প্রার্থী দেয়। কিন্তু কেউ জেতেনি।
ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ। বিগত প্রায় প্রতিটি সংসদে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব ছিল। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামপন্থী রাজনীতিতে একটি অবস্থান করে নিয়েছে। রংপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ বিগত স্থানীয় সরকারের কিছু নির্বাচনে ভালো ভোট পেয়েছে।
ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ রেজাউল করিম ‘সরকারের পাতানো নির্বাচনে’ না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। চরমোনাইয়ের বার্ষিক মাহফিলে তিনি বলেন, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি না হলে নির্বাচনের নামে ফাঁদে পা দেবে না ইসলামী আন্দোলন।