রামকৃষ্ণ মিশনে হবে কুমারী পূজা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শারদীয় দুর্গোৎসবের আজ মহাঅষ্টমী। দেখতে দেখতে ষষ্ঠী, সপ্তমী পেরিয়ে দুর্গাপূজো মহাষ্টমীতে পদার্পণ করল। এই দিনটি নবরাত্রির অষ্টম তিথি। অষ্টমী তিথিতে মা দুর্গা পূজিত হন দেবী মহাগৌরী রূপে। শারদীয়া মহাষ্টমী তিথির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই দিন সকাল থেকে বাঙালির ঘরে ঘরে অষ্টমীর অঞ্জলী দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। পুরোহিতের সাথে সাথে মন্ত্র পাঠ করে ভক্তরা দেবীর চরণে ফুল, বেলপাতা অর্পণ করে। মহাষ্টমীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ হল ‘কুমারী পূজা’। যেখানে একজন বালিকাকে দেবী দুর্গারূপে পূজা করা হয়। এরপর অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিস্থলে করা হয় সন্ধিপূজা। সকালে অঞ্জলি প্রদান, কুমারী পূজা ও রাতে সন্ধিপূজার মধ্যে দিয়ে মহাঅষ্টমীর পূজা হয়ে থাকে।
১৯০১ সালে স্বামী বিবেকানন্দ কলকাতার বেলুড় মঠে প্রথম কুমারী পূজা শুরু করেন। সেই থেকেই প্রতিবছর বেলুড়ে মহা ধুমধাম করে এই পুজোর প্রথা চলে আসছে। যেখানে একজন বালিকাকে দেবী দুর্গারূপে আরাধনা বা পূজা করা হয়। যেসব বালিকারা বয়:সন্ধিতে পৌঁছায়নি এদিন সকালে তাদের দেবীরূপে পুজো করা হয়। ১৬টি উপকরণ দিয়ে পূজার সূত্রপাত হয়। শুরুতেই কুমারী মা-কে শুদ্ধ করে তাঁর চরণযুগল ধুয়ে তাঁকে বিশেষ অর্ঘ্য প্রদান করা হয়। অর্ঘ্যের শঙ্খপাত্রকে সাজানো হয় বেল পাতা, আতপ চাল, চন্দন, পুষ্প ও দূর্বাঘাস দিয়ে। দেবীর গলায় পরানো হয় পুষ্পমাল্য। এরপর অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাস- এই পাঁচ উপকরণ দেওয়া হয় ‘কুমারী’ পূজাতে। মহাষ্টমীর সন্ধ্যায় ১০৮টি প্রদীপ জ্বালিয়ে সন্ধিপূজা করা হয়। পুরাণ মতে, দেবী দুর্গা আবির্ভূত হন অষ্টমী ও নবমী তিথির মিলনক্ষণে, দেবী চামুন্ডা রূপে। চন্ড ও মুন্ড নামক দুই ভয়ানক অসুরকে এই সন্ধিক্ষণে বধ করেছিলেন দেবী। সন্ধি কথার অর্থ হল ‘মিলন’। অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমী তিথির শুরুর ২৪ মিনিট, মোট ৪৮ মিনিটের মধ্যে শেষ করতে হয় সন্ধিপুজো। এই দুই তিথির মহামিলনের সময়কে ‘মহাসন্ধিক্ষণ’ বলা হয়। মা দুর্গার সন্ধি পুজোয় ১০৮টি পদ্মফুল এবং ১০৮টি প্রদীপ উৎসর্গ করতে হয়। এই দু’টি ছাড়া মায়ের পুজো অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
হবিগঞ্জের রামকৃষ্ণ মিশনে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কুমারী মায়ের পূজার আয়োজন করা হয়েছে। এদিকে সুষ্ঠুভাবে কুমারী পূজা সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
অঞ্জলি ঃ অষ্টমী মানেই কিন্তু পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া নতুন জামাকাপড় পড়ে। স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্রে ঠাকুরের সামনে বসুন। এবার হাতে ফুল নিন ও তিনবার পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র পড়ে ঠাকুরের চরণে তা প্রদান করুন। এবার প্রণাম মন্ত্র বলে অঞ্জলি প্রদান শেষ করুন।
সন্ধি পুজো ঃ এটি দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। মূলত অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিস্থলে অর্থাৎ অষ্টমী শেষ হবার ২৪ মিনিট ও নবমী শুরু হবার ২৪ মিনিট এই সময়ের মধ্যে এই পূজা হয়। এই সময়ে মূলত দেবী চামুন্ডার পূজা করা হয়। এই পূজাতেই ১০৮টি পদ্মফুল দেবীকে উৎসর্গ করা হয়। এর মূলে রামায়ণের কাহিনী আমরা সবাই জানি। রাবণ বধের জন্য রাম ১০৮ পদ্ম দিয়ে দেবীর পূজা করেন ও তারপর রাবণ নিধন হয়। সেই সূত্রেই এই সন্ধি পূজা করা হয়। দেবীর সামনে নানা রকম খাদ্যদ্রব্য কাঁচা অবস্থায় এবং রান্না করা ভোগ হিসাবেও রাখা হয়। ১০৮টি মাটির প্রদীপ দেবীর সামনে জ্বালানো হয়। কোনো কোনো জায়গায় এই দিন বলিও দেওয়া হয়। বলি হিসাবে পশুবলি নিয়ে অনেক নিষেধাজ্ঞা জারি আছে বলেই আখ, চালকুমড়ো এইসব বলি হিসাবে প্রদত্ত হয়।