কানাডা প্রবাসী স্ত্রীর কাছে ৫০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি ॥ টাকা না দেয়ায় স্ত্রীকে বেধড়ক মারপিট
স্টাফ রিপোর্টার ॥ যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতনের মামলায় হবিগঞ্জ ডিবি পুলিশের সাবেক ওসি মানিকুল ইসলামকে কারাগারে প্রেরণ করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার দুপুরে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ (অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক) মিজানুর রহমান ভূইঞা এই আদেশ দেন। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম শমিউল আলম। আদালতের পিপি রাশিদা সঈদা খানম জানান- ঘটনার সময় মানিকুল ইসলাম হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি (তদন্ত) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়াও পরবর্তীতে তিনি হবিগঞ্জ ডিবি পুলিশের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জানান, স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলেও দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন মানিকুল। তিনি গতকাল আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, মানিকুল ইসলাম মিথ্যা তথ্য দিয়ে ২০১৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রবাসী এক নারী চিকিৎসককে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তার স্ত্রী কানাডায় চলে যান। পরবর্তী সময়ে মানিকুলকে কানাডা নিয়ে যাওয়ার জন্য স্ত্রীকে চাপ দেন। এ পরিস্থিতিতে প্রায় এক কোটি টাকা খরচ করে মানিকুলের কানাডার ভিসার ব্যবস্থা করেন বাদীনি। পরে মানিকুল কানাডায় যেতে অস্বীকৃতি জানান এবং গুলশান থানায় তার পোস্টিংয়ের জন্য ৫০ লাখ টাকা চান। অর্থ দিতে বাদীনি অপারগতা জানালে মানিকুল তাকে বেধড়ক মারধর করেন। এ ছাড়াও মানিকুলের স্ত্রী মামলার এজাহারে অভিযোগ করেন, ২০১৭ সালের ১৮ জুন তিনি কানাডা থেকে বাংলাদেশে এলে তাকে বাবার বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে মানিকুল নিজের সঙ্গে আনা একটি কালো রঙের গাড়িতে তোলেন। গাড়ি বিমানবন্দর থেকে কিছু দূর যাওয়ার পর মানিকুল আবারও তার কাছে ৫০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। তিনি তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে মানিকুল তার হাতে থাকা ওয়্যারলেস ও মোবাইল দিয়ে বাদীনিকে নাকে ও মুখে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন এবং পায়ের বুট দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে ডান পায়ের সব আঙুল থেঁতলে দেন। এতে তার নাক ও মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণ হয় ও কানের পর্দা ফেটে যায়।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, একপর্যায়ে মানিকুল তার পাসপোর্ট, ক্রেডিট কার্ড, পাঁচ ভরি স্বর্ণালংকার এবং পাঁচ হাজার কানাডিয়ান ডলার ছিনিয়ে নেন। গাড়িটি রাত সাড়ে ১০টার দিকে নবীগঞ্জ থানার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আউশকান্দি হিরাগঞ্জ বাজারে পৌঁছালে মানিকুল আবার তার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন। ওই সময় তার চিৎকারে পাশ দিয়ে যাওয়া একটি গাড়ি তাদের গাড়িটিকে আটকায়। এ সময় মানিকুল বাদীনিকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান। তখন উপস্থিত স্থানীয় জনতা বাদীনিকে রক্তাক্ত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান এবং তাৎক্ষণিক নবীগঞ্জ থানা পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু মানিকুল হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি (তদন্ত) পদে কর্মরত থাকায় নবীগঞ্জ থানা পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি।