এসএম সুরুজ আলী ॥ বন্ধুর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করায় হবিগঞ্জ দারুচ্ছুন্নাত আলীয়া মাদ্রাসার এক ছাত্রকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের প্রেমিকা, বন্ধু ও বন্ধুর প্রেমিকাকে গ্রেফতার করেছে হবিগঞ্জ গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গত রবিবার রাত ৮টার দিকে হবিগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা হত্যার দায় স্বীকার করে খুনের বর্ণনা দিয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ছোট বহুলা গ্রামের জিতু মিয়ার কন্যা শাবনূর আক্তার (১৮), বানিয়াচং উপজেলার শান্তিপুর গ্রামের আব্দুল মালেকের কন্যা সাবিনা আক্তার (১৪) এবং হবিগঞ্জ শহরতলীর পোদ্দার বাড়ি এলাকার সোহেল মিয়ার পুত্র সুমন (১৮)। খুন হওয়া মাদ্রাসা ছাত্র হবিগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণ তেঘরিয়া গ্রামের আব্দুল হেকিমের ছেলে আরিফুর রহমান খোকন (১৮)। সে হবিগঞ্জ দারুচ্ছুন্নাত আলিয়া মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণির ছাত্র। এ তথ্য জানিয়েছেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ওসি আল আমীন।
নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, ১০ দিন পূর্বে বাড়ি থেকে বের হয় আইয়ুবুর রহমান খোকন। এরপর পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে তাকে খোঁজাখুজি করে পাননি। শনিবার বিকেলে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ছোট বহুলা গ্রামের ফারজানা আক্তার নামের এক যুবতী নিহত খোকনের পাশ্ববর্তী বাড়ির এক ছেলের কাছে জানায়, খোকনকে নারায়ণগঞ্জে খুন করা হয়েছে। ওই যুবক এ বিষয়টি খোকনের বাবাকে অবগত করেন। রোববার সকালে নিহত খোকনের বাবা বিষয়টি অবগত করার জন্য হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় যান। থানায় কোন ফল না পেয়ে তিনি দু’জন সাংবাদিককে সাথে নিয়ে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যার কাছে যান। সেখানে গিয়ে তিনি তার ছেলে নিখোঁজের বিষয়টি পুলিশ সুপারকে অবগত করেন। পুলিশ সুপার গুরুত্ব সহকারে নিহতের বাবার কথা শুনে ডিবি’র অফিসার ইনচার্জ আল-আমিন ও হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি তদন্ত দৌস মোহাম্মদকে ডেকে বিষয়টি গুরুত্বে সাথে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। এরপর পুলিশ সুপার নিজেই নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি অবগত করেন। নায়ারাণগঞ্জ থেকে পুলিশ সুপারকে জানানো হয় ৫ দিন পূর্বে রূপগঞ্জের এক ভাড়াটিয়া বাসা থেকে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত শেষে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়েছে। পুলিশ সুপার নারায়ণগঞ্জে লাশ দাফনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে ডিবি’র ওসি আল-আমিনকে ছোট বহুলা গ্রামে অভিযানে পাঠান। ছোট বহুলা গ্রামে পুলিশ প্রথমে ফারজানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ফারজানা জানান, একই গ্রামের শাবনুরের কাছ থেকে তিনি খোকন খুন হওয়ার বিষয়টি জেনেছেন। পরবর্তীতে পুলিশ শাবনুরকে গ্রেফতার করে। শাবনুরের স্বীকারোক্তিতে তার বান্ধবী সাবিনা ও তার প্রেমিক সোহেল মিয়া ওরফে সুমনকে গ্রেফতার করে।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, খোকনের সাথে শাবনুরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আর সাবিনা আক্তারের সাথে সোহেল ওরফে সুমনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তারা কয়েকদিন পূর্বে এক সাথে ৪ জন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গিয়ে স্বামী স্ত্রী পরিচয় দিয়ে একটি বাসা ভাড়া নেয়। এর মধ্যে সাবিনার উপর কুনজর পড়ে খোকনের। খোকন কৌশলে জোরপূর্বক সাবিনাকে ধর্ষণ করে। সাবিনা ধর্ষণের ঘটনাটি শাবনুর ও সোহেলকে জানায়। এরপর তারা ৩ জন বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধে খোকনকে দুনিয়া থেকে শেষ করে দেয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা প্রথমে নুডুলসের সাথে ঔষধ মিশিয়ে খোকনকে খাইয়ে দিয়ে অজ্ঞান করে। পরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
ডিবি’র ওসি আল-আমিন জানান, গ্রেফতারকৃতরা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করেছে।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বলেন, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা হত্যার দায় স্বীকার করে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে। পরে ডিবি পুলিশ রূপগঞ্জ থানার পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। আসামিদেরকে রূপগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।