পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা প্রেস ব্রিফিংয়ে বললেন- নিজামের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে খুন করে আমেরিকা প্রবাসী
মোহাম্মদ শাহ্ আলম ॥ প্রথমে বাসার মালিক আমেরিকা প্রবাসি ও তার স্ত্রীর যৌন মিলনের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি। পরে সেই ভিডিও এবং ছবি ফেসবুকে ছেড়ে দিয়ে প্রবাসির স্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক ও বিয়ে করে আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল ফুসকা হাউজের কর্মচারী নিজাম উদ্দিন। কিন্তু এই লোভ তাকে পৌঁছে দিয়েছে পরপারে। তার অব্যাহত ব্ল্যাকমেইলিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে প্রবাসী ও তার লোকজন খুন করে হবিগঞ্জ শহরের বৃন্দাবন কলেজ রোডের ঢাকা ফুসকা হাউজের কর্মচারী নিজাম উদ্দিনকে।
গতকাল শনিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা।
তিনি জানান, এ ঘটনায় ১৭ মার্চ দেশত্যাগের সময় ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঘাতক স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ১৯ মার্চ সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা আক্তারের আদালতে হানিফ উল্লাহ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে এবং হত্যার দায় স্বীকার করে।
আটককৃতরা হলেন হবিগঞ্জ শহরের নিউ মুসলিম কোয়ার্টার এলাকার বাসিন্দা মৃত কুদরত উল্লাহর ছেলে মো. হানিফ উল্লাহ (৩৫) ও তার স্ত্রী রোমানা আক্তার (৩০)।
নিহত নিজাম উদ্দিন মাধবপুর উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের ইমাম উদ্দিনের ছেলে। সে হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজ রোডের ঢাকা ফুসকা হাউজে শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। নিজাম উদ্দিন ও তার দুই সহকর্মী হানিফ উল্লাহর একটি টিনশেডের বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিল।
পুলিশ সুপার জানান, ঘাতক স্বামী-স্ত্রী আদালতকে জানিয়েছেন প্রায় ৪ বছর আগে স্ত্রী ও দুই মেয়েসহ আমেরিকা চলে যান হানিফ উল্লাহ। ২০২০ সালের নভেম্বরে হানিফ উল্লাহ তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে দেশে আসেন। দীর্ঘদিন তাদের বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকার সুবাদে নিজাম উদ্দিনের সাথে তাদের সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয়। এ সুযোগে নিজাম উদ্দিন আমেরিকা প্রবাসী হানিফ উল্লাহর শোবার ঘরে ও বাথরুমে গোপন ক্যামেরা লাগিয়ে রেখে তার স্ত্রী রোমানার গোসলের ভিডিও ও স্বামী-স্ত্রীর যৌনমিলনের ভিডিও ধারণ করে রাখে।
পরে সেই ভিডিও ও ছবি রোমানাকে দেখিয়ে অনৈতিক প্রস্তাব দেয়। এ সময় ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে তার কাছ থেকে ১ লাখ টাকাও হাতিয়ে নেয়। এক পর্যায়ে নিজাম উদ্দিন প্রবাসীর স্ত্রী রোমানা আক্তারকে তার স্বামীকে তালাক দিয়ে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এতে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন রোমানা। এক পর্যায়ে বিষয়টি তিনি তার স্বামীকে জানালে হানিফ উল্লাহ নিজাম উদ্দিনকে খুনের পরিকল্পনা করে।
গত ১১ মার্চ সন্ধ্যায় নিজাম উদ্দিনকে রোমানার মাধ্যমে ফোন করে ডেকে আনা হয় শহরের শ্যামলী এলাকার একটি গ্যারেজে। সেখানে হানিফ উল্লাসহ অন্য আসামিরা তাকে হত্যা করে লাশ একটি ঝোপে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। ওইদিনই প্রবাসী স্বামী-স্ত্রী হবিগঞ্জ থেকে পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় ১৫ মার্চ নিহত নিজাম উদ্দিনের বাবা ইমাম উদ্দিন বাদি হয়ে আমেরিকা প্রবাসী স্বামী-স্ত্রীসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ১৭ মার্চ আমেরিকা যাবার সময় ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় বাকি আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও জানান পুলিশ সুপার।