সাবেক এমপি’র চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করার খেসারত

মতিউর রহমান মুন্না, নবীগঞ্জ থেকে ॥ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে দেড় মাস ধরে ‘একঘরে’ করে রাখা হয়েছে একটি পরিবারকে। এতে চরম মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে তারা। সাবেক এমপি’র চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার মামলা করেছিল ওই পরিবার। মামলার রায়ে চাচাতো ভাইয়ের সাজা হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে পঞ্চায়েত ডেকে তাদেরকে ‘সমাজচ্যুত’ করার সিদ্ধান্ত দেন হবিগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি জাপা নেতা এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু।
জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি গ্রামের সাফারুন বিবি ২০১৪ সালে সাবেক এমপি এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু’র চাচাতো ভাই ইকরামুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে ৩২ শতক জায়গা বিক্রি করেন। এ সময় জমির মূল্য ১৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার বিপরীতে সাফারুন বিবির জামাতা লিটন মিয়াকে ৯ লাখ টাকার দু’টি চেক দেন ইকরামুল। বাকি টাকার জন্য ১ মাসের সময় চেয়ে করেন চুক্তিপত্র। কিন্তু বার বার যোগাযোগ করেও ব্যাংকে টাকা না পাওয়ায় ২০১৮ সালে আদালতে চেক ডিজঅনার মামলা করেন লিটন মিয়া। বিষয়টি জানতে পেরে গত বছরের শুরুতে সাবেক এমপি মুনিম চৌধুরী বাবু মামলাটি তুলে নেয়ার জন্য লিটন মিয়াকে ১ লাখ টাকা দেন। লিটন টাকা নিতে না চাইলেও জোর করে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে টাকা দেয়া হয় বলেও অভিযোগ করে লিটন। কিন্তু গত ৫ অক্টোবর ইকরামুল ইসলাম চৌধুরীকে ১ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং ৯ লাখ টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের রায় দেন আদালত। তখন আর কিছুই করার ছিল না লিটনের। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১৮ নভেম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত ডেকে লিটন মিয়ার পরিবারকে ‘একঘরে’ রাখার সিদ্ধান্ত দেন সাবেক এমপি বাবু। ফলে দেড় মাস ধরে বাইরে বেরোতে পারছে না লিটন মিয়ার পরিবারের লোকজন। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে পরিবারের সদস্যদের। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সন্তানদের লেখাপড়া।
এমনটাই অভিযোগ করে মামলার বাদী লিটন বলেন- আমার শাশুড়ি সাফারুন বিবি ২০১৪ সালে সাবেক এমপি এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু’র চাচাতো ভাই ইকরামুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে ৩২ শতক জায়গা বিক্রি করেন। এ সময় জমির মূল্য ১৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার বিপরীতে আমাকে ৯ লাখ টাকার দু’টি চেক দেন ইকরামুল। বাকি টাকার জন্য ১ মাসের সময়ে চেয়ে করেন চুক্তিপত্র। কিন্তু বার বার যোগাযোগ করেও ব্যাংকে টাকা না পাওয়ায় ২০১৮ সালে আদালতে চেক ডিজঅনার মামলা করি। মামলার রায় হওয়ায় আমাকে একঘরে করে রাখা হয়েছে।
লিটনের শাশুড়ি জমি বিক্রেতা সাফারুন বিবি বলেন, জায়গা বিক্রির টাকা পেলাম না, উল্টো আমার মেয়ে ও আমার জামাতা পাঞ্চায়েতের নির্মম অত্যাচারের শিকার, আমার মেয়ের পরিবার অনাহারে-অর্ধাহারে দিন যাপন করছে।
লিটনের স্ত্রী তাসলিমা বেগম বলেন- আমরা বাড়ি থেকে বের হতে পারি না, আমরা কষ্টে দিন কাটাচ্ছি, দোকান থেকে আমাদের টাকা দিয়েও খাদ্য সামগ্রী দিচ্ছে না।
প্রভাবশালী মহল কর্তৃক নিরীহ পরিবারকে ‘একঘরে’ করে রাখায় প্রতিবাদ করতে ভয় পাচ্ছেন স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে কুর্শি ইউপি সদস্য আল-আমিন খান বলেন- বিষয়টি তিনি জেনে তাৎক্ষণিক প্রশাসনকে অবগত করেছেন। কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
তবে সাবেক এমপি’র অনুসারীদের দাবি, লিটনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকায় তাঁর সাথে না চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে সাবেক সংসদ সদস্য জাপা নেতা এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু বলেন- পঞ্চায়েত সভায় সমাজচ্যুত করার কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। লিটন নানা প্রতারণায় জড়িত থাকায় স্থানীয় লোকজন ঘৃণায় তার সাথে চলাফেরা করছেন না।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মহি উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।