হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভের দৌঁড়ে ৬ প্রার্থী

এসএম সুরুজ আলী ॥ ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে শুরু হয়ে জানুয়ারিতেই হবিগঞ্জ জেলার ৫টি পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন হতে পারে। আগামী সপ্তাহে মেয়দ উত্তীর্ণ পৌরসভাগুলোর তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানা গেছে। এ দিকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য হবিগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পৌর এলাকার যেসব নাগরিক তাদের ভোটার স্থান পরিবর্তনের আবেদন করেছিলেন তা সংশোধনের কাজ করছে নির্বাচন অফিস। এছাড়াও পৌরসভাগুলোর ভোটারদের সিডি তৈরীর কাজ করা হচ্ছে। তবে এখন জেলা নির্বাচন অফিসে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন থেকে জেলার হবিগঞ্জ, নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, শায়েস্তাগঞ্জ ও মাধবপুর পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন করার কোন নির্দেশনা আসেনি।
এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছাদেকুল ইসলাম জানান, হবিগঞ্জ জেলার পৌরসভারগুলোর নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন থেকে কোন ধরণের নির্দেশনা এখনও আমাদের কাছে আসেনি। তবে যেহেতু প্রধান নির্বাচন কমিশনার দেশের মেয়াদ উত্তীর্ণ পৌরসভাগুলোর নির্বাচন ডিসেম্বরের শেষের দিকে পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন, এ হিসেবে হবিগঞ্জের মেয়াদ উত্তীর্ণ পৌরসভাগুলোর নির্বাচন ডিসেম্বরের শেষে দিকে অথবা জানুয়ারিতে শুরু হবে। তবে শীঘ্রই আমাদের কাছে নির্বাচনের নিদের্শনা চলে আসবে। তিনি বলেন- নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আমাদের সকল ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বর মাসে সারাদেশের ২৩৪টি মেয়দ উত্তীর্ণ পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন করার ঘোষণা দেয়ায় হবিগঞ্জ জেলার ৫টি পৌরসভার আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে লবিং শুরু করেছেন। শুধু কেন্দ্রেই নয়, জেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ মনোনয়ন বোর্ডে যারা সম্ভাব্য সদস্য হবেন তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। প্রার্থীদের পক্ষে দলের হাই কমান্ড এর কাছে ভাল রিপোর্ট দেয়ার জন্য অনেক প্রার্থী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন। সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা গণসংযোগ, উঠান বৈঠকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু প্রার্থীরাই নয়, তাদের সমর্থকরাও অব্যাহত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি সংরিক্ষত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরাও উঠান বৈঠক ও গণসংযোগ করছেন।
প্রতিটি ওয়ার্ডে এবার একাধিক নারী কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সাধারণ ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলর প্রার্থীরাও বসে নেই।
হবিগঞ্জে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পৌরসভা হলো হবিগঞ্জ পৌরসভা। প্রাচীন এ পৌরসভায় কে মেয়র নির্বাচিত হবেন এ নিয়ে জেলাবাসীর মধ্যে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত চলে আলোচনা। এবারও এর শেষ নেই। এখন শুরু হয়েছে এবারের নির্বাচনে কে কোন দলের মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন। তবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচারণা-ফেস্টুন, পোস্টার সাটানোসহ তাদের সমর্থকদের তথ্য অনুযায়ী ও প্রার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার হবিগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোয়নয়ন চাইবেন বর্তমান মেয়র মিজানুর রহমান মিজান, জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর টিটু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মর্তুজ আলী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সৈয়দ কামরুল হাসান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইংল্যান্ড প্রবাসী নুর উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল। অপরদিকে বিএনপি’র দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক পৌর মেয়র কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সমবায় বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব জি কে গউছের নাম। তিনি নির্বাচন করবেন কি না তা এখনও পরিস্কার নয়। তবে দলের হাই কমান্ড সিদ্ধান্ত দিলে জি কে গউছ প্রার্থী হবেন এটি নিশ্চিত করেছেন তার ঘনিষ্টজনরা। অবশ্য ইতোপূর্বে দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ এর সাথে আলাপকালে জেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও পদত্যাগকারী মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছ বলেছেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে আমি ব্যক্তিগতভাবে অংশগ্রহন করিনি। দলের সিদ্ধান্তে অংশগ্রহন করেছি। আবারও দল থেকে আমাকে নির্বাচনে অংশ গ্রহনের নির্দেশ দিলে আমি দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে যাবো না। জি কে গউছ ছাড়া বিএনপি থেকে নির্বাচন করার জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক এম ইসলাম তরফদার তনু ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক সেলিম। এছাড়াও ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ী নেতা আলহাজ্ব শামছুল হুদা মেয়র পদে নির্বাচন করার পুরো প্রস্তুতি নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য দলে তারুণ্যদীপ্ত ডজনখানেক সম্ভাব্য প্রার্থীর সমর্থকরা ‘মেয়র হিসেবে দেখতে চাই’ লিখে স্ব স্ব পছন্দের নেতার পক্ষে ফেসবুকে প্রচারণা চালাচ্ছেন।