নিহত নাজমুলের মা ও ভাইয়ের অভিযোগ
মতিউর রহমান মুন্না, নবীগঞ্জ থেকে ॥ প্রায় ১৬ লাখ টাকা আত্মসাতের জন্য ইউরোপের দেশ গ্রীসের এথেন্সে নবীগঞ্জের এক যুবককে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার স্বজনরা। স্বজনদের দাবি অনুযায়ী ঘাতক দূরের কেউ নয়, গ্রীস প্রবাসী নবীগঞ্জেরই বাসিন্দা। গ্রীসের রাজধানী এথেন্সের আত্তিকা নামক একটি এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। নিহত যুবক হলো নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের লালাপুর গ্রামের মৃত আবুল কালামের পুত্র নাজমুল হোসেন। নাজমুলের স্বজনরা যাকে ঘাতক হিসেবে দাবি করছেন সে হলো একই এলাকার মোস্তফাপুর গ্রামের মৃত আতাউর রহমানের পুত্র মফিজুর রহমান। গত ২২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকেলে সেখানকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাজমুলের মৃত্যু হয়।
সূত্র জানায়, নাজমুল হোসেন পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে প্রায় ১৩ বছর পূর্বে বিদেশে পাড়ি জমান। ইরান, তুর্কি হয়ে প্রায় ৮ বছর ধরে গ্রীসে বসবাস করছিলেন। একটি চায়না কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। প্রায় ৮ মাস পূর্বে সেখানের নাগরিক হিসেবে বৈধতাও পেয়েছিলেন নাজমুল। সম্প্রতি একই এলাকার মোস্তফাপুর গ্রামের মফিজুর রহমান গ্রীস যায়। সেখানে গিয়ে নাজমুলের সাথে থাকে। তারা একটি ভাড়া বাসায় থাকতো।
নাজমুলের পরিবারের লোকজন জানান, অনেকদিন ধরে কোন যোগাযোগ করছিল না নাজমুল। পরে তারা খবর পান গত ১২ সেপ্টেম্বর রাতে নাজমুলকে একটি পরিত্যক্ত জায়গা থেকে স্থানীয় পুলিশ আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত ২২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকেলে সে মারা যায়। নাজমুলের পরিবারের লোকজনের দাবি, নাজমুলকে রাতে ঘুমের মধ্যে মফিজুর রহমান কোন কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করে মৃত ভেবে দেহ দূরে কোথায় ফেলে আসে। পরে থাকে সেখানের পুলিশ দেহ দেখতে পেয়ে হাসপাতাল ভর্তি করে। এমন একটি ভিডিও বার্তা দিয়ে গেছে নাজমুল।
এ ব্যাপারে নিহতের মা নাজমা বেগম জানান, ‘আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল সে দেশে এসে বিয়ে করবে এ জন্য আমরা পাত্রীও খুঁজছিলাম। কিন্তু তার স্বপ্ন পূরণ হতে দিলো না ঘাতক। এসব বলেই বারবার মুর্চা যান তিনি।’
নিহতের ভাই এনামুল হোসেন জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একটি ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছিলেন নাজমুল। ভিডিওতে মফিজুলের কথাই বারবার বলেছেন।
এনামুল আরো বলেন, প্রবাস জীবনের উপার্জিত টাকা পয়সা জমা ছিল নাজমুলের কাছে। কিছুদিন পূর্বে জানিয়েছিল তার কাছে ১৫/১৬ লাখ টাকা আছে। তার স্বপ্ন ছিল ভাইকে বিদেশ পাঠাবে, জায়গা কিনে ঘর বানাবে এবং এ বছরই দেশে এসে বিয়ে করবে। তার ওই টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই তাকে হত্যা করে টাকা নিয়ে পালিয়েছে মফিজুর। এমন অভিযোগ করেন নাজমুলের মা ও ভাই। লাশ দ্রুত দেশে এনে শেষ দেখা দেখতে অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। নিহত নাজমুলের ৫ ভাই ও ১ বোনের মাঝে সে ছিল সবার বড়।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহিউদ্দিনের সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন, লাশ দেশে আনতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।