করণীয় নির্ধারণে আজ ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠকে বসবেন জেলা প্রশাসক
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ হবিগঞ্জের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে প্রতি কেজি ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যে পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হয়েছে ২৮ থেকে ৩০ টাকা সে পেঁয়াজ সপ্তাহখানেক পূর্বে দাম বেড়ে বিক্রি হয়েছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। আর হঠাৎ করে পেঁয়াজের এরকম অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে বেকায়দায় পড়েছেন নি¤œ আয়ের সাধারণ মানুষ। এদিকে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে করণীয় নির্ধারণে আজ বুধবার সকাল ১১টায় ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন জেলা প্রশাসক।
ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি (ব্যকস) হবিগঞ্জের সভাপতি মোঃ শামছুল হুদা জানান- গত এক সপ্তাহ পূর্বে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। ওই সময় প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হয় ৪৫/৪৬ টাকা। পরে আবার দাম কিছুটা কমে। তখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৭/৩৮ টাকা। তিনি আরও জানান- পেঁয়াজের আমদানি কমে যাওয়ায় বর্ডারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। আর পেঁয়াজের দাম নির্ভর করে বর্ডারে কেনার উপর। সেখানে আমদানির উপর নির্ভর করে প্রতিদিনিই দাম পরিবর্তিত হয়। এতে করে দেখা যায় একজন ব্যবসায়ী দিনে যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন বিকেলবেলা তার থেকে বেশি দামে তাকে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। ফলে বেশি দামে বিক্রিও করতে হচ্ছে। এখানে সাধারণ ব্যবসায়ীদের কিছুই করার থাকে না।
তিনি জানান- গতকাল হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। দেশে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ রয়েছে এমন খবর জাতীয় সংবাদপত্রেও প্রকাশ হয়েছে। বিষয়টি নজরে এলে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে ব্যবসায়ীদের নিয়ে আজ সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক বৈঠক ডেকেছেন। গতকাল বর্ডারে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন ভারত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। তিনি আশঙ্কা করছেন এতে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে। আর এ ক্ষেত্রে সরকার উদ্যোগ নিয়ে খোলাবাজারে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করলে তা সুফল বয়ে আনবে।
এ ব্যাপারে শহরের বগলা বাজার নারকেল হাটার পেঁয়াজের পাইকারী ব্যবসায়ী মোঃ আতাউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান- গতকাল মঙ্গলবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকা কেজি। গতকাল পেঁয়াজ কিনতে তিনি বর্ডারে খোঁজ নিয়েছেন। কিন্তু ওই স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন তাদের কাছে পেঁয়াজ নেই। তিনি ধারণা করছেন সরকার এখনই এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে। এছাড়া পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধিতে করণীয় নির্ধারণে ব্যবসায়ীদের নিয়ে আজ সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক বৈঠক ডেকেছেন জেলা প্রশাসক এ বিষয়টিও তিনি নিশ্চিত করেন।
কাউছার নামে বাজারে আসা একজন ক্রেতা জানান- হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম এক লাফে ৪০ থেকে বেড়ে ৭০ টাকা হয়ে গেছে। করোনার কারণে এমনিতে মানুষ রয়েছেন চরম বিপাকে। অনেকেই কর্মহীন। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই। এ পরিস্থিতিতে পেঁয়াজের মতো একটি নিত্যপণ্যের মূল্য হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় নি¤œ আয়ের মানুষ ভোগান্তির শিকার হবেন বেশি। বাজার নিয়ন্ত্রণে তিনি অতি দ্রুত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান।
এদিকে হঠাৎ পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে। ‘কৃষকের প্রাণ কৃষিজগৎ’ নামে একটি আইডিতে এর এডমিন লেখেন- আসুন এই বছর আমরা নই, পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের কাঁদাই। গত বছর এই রকম সময়েই ক্রাইসিস তৈরি করে ২৫০ টাকার উপরে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হলেও আমরা দেখেছি শেষের দিকে ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ গুদামে পঁচেছে। তাই সম্মানিত ক্রেতা সাধারণকে অনুরোধ করব ক্রয় অভ্যাস পরিবর্তন করুন। অতিব্যস্ত হয়ে বা আতংকগ্রস্থ হয়ে একসাথে ৫/১০/২০ কেজি পেঁয়াজ কিনে মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত মানুষকে বিপদে ফেলবেন না। ধৈর্য্য ধারণ করুন। অল্প অল্প করে কিনুন। ব্যবহার কমাবার চেষ্টা করুন। মানুষকে আতংকগ্রস্থ করে ব্যবসায়ীরা হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এটাই অতিলোভী মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের কৌশল। ব্যবসায়ীদের এই চালাকি ঠেকাতে আমরা ক্রেতাগণকে অতি চালাক হবার দরকার নেই। আসুন এবার শুধু প্রতিজ্ঞা করি, পেঁয়াজ গুদামেই পঁচানোর ব্যবস্থা করব। আমাদের ৩০/৪০ টাকার পেঁয়াজ ১০০/১৫০ টাকায় কিনব না। পেঁয়াজের ব্যবহার কমাব, ব্যয় বাড়াব না। ভারত গতকাল পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করেছে। আমাদের মার্কেটের সকল পেঁয়াজ আগের দামে আমদানিকৃত যার দাম কোনক্রমেই ৩২ টাকা/ কেজির বেশি না। তারপরও দাম লাফিয়ে বাড়ছে। এটার জন্য আমাদের দেশিয় অতিলোভী ব্যবসায়ীদের অসভ্য মানসিকতাই দায়ী।
আরও একটি কথা, গত কয়েকমাসে দেখলাম ভারত থেকে যখন অনেক পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছিল, কিছু টিভি নিউজ চ্যানেল নিউজ করতে লাগল বাজারে এত পরিমাণ ভারতীয় পেঁয়াজ আসলে বাংলাদেশের কৃষকরা দেশিয় পেঁয়াজের দাম পাবে না। কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অথচ ফলাফল উল্টো হল। ভারত গতকাল রফতানি বন্ধ করাতে আমরা বিপদে পড়েছি, অথচ গত তিনমাস মিডিয়া নিউজ করে বুঝাতে চাইল ভারত থেকে পেঁয়াজ আসলে আমাদের কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখন তালগোল পাকিয়ে গেল। তাই একমাত্র পথ হল দ্রুত ভোক্তা আচরণ পরিবর্তন করা। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি এই দেশের ব্যবসায়ীদের কেউ কিছু করতে পারেনি, পারবে বলেও মনে হয় না। তাই নিজেদের পকেটের অবস্থা বুঝে নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হবে।
বর্ধিত দামে প্রচুর পেঁয়াজ কিনে মানুষকে বিপদে না ফেলে, আসুন পেঁয়াজের ব্যবহার কমাই। ১৫ দিন এই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে, পেঁয়াজের ঝাঁঝ আমাদের নয়, ব্যবসায়ীদের উপর দিয়েই যাবে।