তেলিয়াপাড়ায় গোপাল কৈরীর পরিবারে শোকের মাতম
মাধবপুর প্রতিনিধি ॥ আমার বড় দাদা কয় দিন আগে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় অকালে প্রাণ হারিয়েছে। আমার ভাবীও মানসিক রোগী। অবুঝ তিনটি শিশুর ভরণপোষণে দায়িত্ব পড়ে আমার উপর। আমার বড় ভাতিজি ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী অর্পিতা কৈরী খুবই মেধাবী ছিল। তার জীবনের লক্ষ্য ছিল ডাক্তার হবে। তার স্বপ্ন পূরণের জন্য আমরা সব রকম সহযোগিতা করেছি। তার বাবার মৃত্যুর পরও লেখাপড়ায় কোন অমনযোগী ছিল না। তার বাবার ডাকে সাড়া দিয়ে অর্পিতা আজ না ফেরার দেশে চলে গেছে। তার ডাক্তার হবার স্বপ্ন আজ ছাইভষ্মে পরিণত হয়েছে। সে বায়না ধরেছিল সামনে তার জন্মতারিখ বড় করে পালন করতে হবে। আর কোন দিন অর্পিতা জন্মদিন পালনের বায়না ধরবে না।
বড় ভাইয়ের বড় মেয়ে অর্পিতাকে হারিয়ে শোকাহত ছোট কাকু বিদ্যাসাগর এ প্রতিনিধির কাছে এসব কথা বলছিলেন।
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া গ্রামের গোপাল কৈরীর মেয়ে অর্পিতা কৈরী তৃষা জগদীশপুর জে.সি হাইস্কুল এন্ড কলেজে অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়ন করতো। সে ছিল মেধাবী ছাত্রী। গত সোমবার রাত ১০টায় নিজ বাসায় পানির পাম্পে সুইচ অন করতে গিয়ে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে তার অকাল মৃত্যু ঘটে। তার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে সহপাঠি ও এলাকাবাসী শত শত মানুষ রাতেই তাকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে তার বাড়িতে ভিড় জমায়।
অর্পিতার পাঠশালার শিক্ষক আবু কাউছার পিন্টু বলেন, অর্পিতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খুবই মেধাবী ছিল। আমাদের আশা ছিল অর্পিতা লেখাপড়া করে বড় মানের একজন কর্মকর্তা হবে। কিন্তু তার এই অকাল মৃত্যু সংবাদ শুনে কিছুতেই মনকে বুঝাতে পারছি না। এর কয়েকমাস মাস আগে তার পিতা গোপাল কৈরী জগদীশপুর তেমুনিয়ায় মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। পিতাকে হারিয়ে অর্পিতার পরিবার খুবই কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিল। প্রতিবেশী শংকর পাল চৌধুরী বলেন, অর্পিতাকে হারিয়ে তার মা ও আরো অবুঝ দুটি শিশু এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। অর্পিতার এমন অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু সবাইকে কষ্ট দিয়েছে। সাংস্কৃতিক কর্মী অসিম রায় বলেন, অর্পিতা একজন সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগীত শিল্পী ছিল। সে খুবই সৃজনশীল ছিল। তার বহুমাত্রিক প্রতিভা ছিল। পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারলে নিশ্চিত সে দেশের জন্য সম্পদ হতে পারত। কিন্তু তার এমন মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেন না। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তেলিয়াপাড়ায় স্থানীয় শ্মশানঘাটে অর্পিতাকে দাহ করা হয়েছে।