হবিগঞ্জে সাক্ষরতা দিবসের সভায় জেলা প্রশাসক
টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করা একটি ছাত্রকেও চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হবে না
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ আমরা একটি বিশেষ পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে সময় অতিবাহিত করছি। প্রতিদিন করোনা আক্রান্তদের যে তথ্য আমরা পাচ্ছি তাতে দেখা যায় হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় আক্রান্তের হার বেশি। এর মূল কারণ এখানে জনসমাগম বেশি। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শ্রেণি কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান সম্ভব নয়। তাই এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা যাতে পিছিয়ে না পড়ে সেজন্য আমাদেরকে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে জোর দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসের মধ্যে ধরে রাখতে হবে। যারা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন তাদের অনেকের চাকুরি চলে গেছে। যারা বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত তাদের অনেকের বেতন কমে গেছে। কিন্তু যারা সরকারি চাকুরি করেন তাদের চাকুরিও যায়নি, বেতনও কমেনি। এ বিষয়টিকে মাথায় রেখে সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদেরকে তাদের দায়িত্ব ও কাজের প্রতি আন্তরিক হতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে একেক দেশে শিক্ষার ধরণ একেক রকম। সেই অনুযায়ী আমাদের পথ চলতে হবে। আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে ‘কোভিড- ১৯ সংকট ঃ সাক্ষরতা শিক্ষায় পরিবর্তনশীল শিখন-শেখানো কৌশল এবং শিক্ষাবিদদের ভূমিকা’ শীষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন- আমরা হাত পাততে শিখেছি, কিন্তু কর্ম করে নিজে উপার্জনের চিন্তা করতে পারি না। আজকালের সন্তানরা টাকার জন্য বাবার কাছে হাত পাতে। নিজে উপার্জনের কথা চিন্তা করতে পারে না। আমাদের এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা অর্থ উপার্জনের একটি আদর্শ প্লাটফর্ম হতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে শিক্ষিত যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। এতে তার অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি যে সকল শিক্ষার্থী করোনার কারণে ক্লাসে আসতে পারছে না তারাও উপকৃত হবে। আমাদের প্রত্যেককে শিক্ষককে সম্মান করতে হবে। পাড়া মহল্লার প্রত্যেকটি শিশুকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার তাগিদ দিতে হবে। জেলার প্রতিটি উপজেলায় অনলাইন ভিত্তিক ক্লাস সম্পর্কিত প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য তিনি জেলা শিক্ষা অফিসারকে তাগিদ দেন। তাছাড়া সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাসে উদ্বুদ্ধ করারও তাগিদ দেন। তিনি অনুযোগ করে বলেন- সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছাত্রদের পড়াচ্ছেন না। তিনি কঠোরতার সাথে জানান- যে সকল শিক্ষার্থী ভাবছে তারা লেখাপড়া না করেও চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে তা সঠিক নয়। টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করা একটি ছাত্রকেও চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হবে না।
জেলা প্রশাসন হবিগঞ্জের আয়োজনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) উম্মে ইসরাতের সভাপতিত্বে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বৃন্দাবন সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর দেওয়ান জামাল উদ্দিন চৌধুরী, প্রাক্তন অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আব্দুজ জাহের, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলামসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রধান, এনজিও প্রতিনিধি এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা আনোয়ার আলী। পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন পরিতোষ গুপ্ত তরফদার।
অনুষ্ঠানে বক্তাগণ বলেন- করোনার প্রভাব কবে কমবে তা আমাদের জানা নেই। তাই অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হবে যাতে আমরা পিছিয়ে না পড়ি। সাক্ষরতার সাথে শিক্ষা আর শিক্ষার সাথে উন্নত জীবন এ সত্য আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। আমরা সুন্দর হবিগঞ্জ তথা সুন্দর দেশ গড়তে চাই। সবাই মিলে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের যথাযথ শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমাদেরকে গতানুগতিক শিক্ষা প্রদানের নির্ধারিত প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে হবে। ‘রেডিও টিভিতে শিক্ষাদান, শেখ হাসিনার অবদান’ এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে আমরা সামনে এগিয়ে গেলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, কোভিড- ১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। তাই এতে মিডিয়াকর্মীসহ সকলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।