স্টাফ রিপোর্টার ॥ যারা সৃজনশীল মানুষ এবং কর্মবীর তারা কোন দিন মারা যান না। শারীরিকভাবে তারা বিদায় নিলেও তাদের চেতনা এবং কর্ম বেঁচে থাকে অনন্তকাল। এ ধরনেরই আলোকিত মানুষ ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডার সিআর দত্ত বীর উত্তম এবং কর্ণেল আবু ওসমান। তারা চলে গেলেও আমরা তাদের আলোর পথের যাত্রী। তাদের দেখানো পথে আমরা চলতে চাই। আমাদের সাহসের অগ্নিশিখা হলেন ওই সূর্য সন্তানরা। তাদের আলোয় উদ্ভাসিত হবে নতুন প্রজন্ম। শুক্রবার বিকেলে কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও পাঠাগার হবিগঞ্জের উদ্যোগে সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল সিআর দত্ত বীর উত্তম এবং কর্ণেল আবু ওসমানের স্মরণে শোকসভায় দেশ বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা এ কথা বলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও ভাষা সৈনিক অ্যাডভোকেট সৈয়দ আফরোজ বখত এর সভাপতিত্বে শোক সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি ও বেসরকারী সদস্যদের বিল ও বেসরকারী সদস্যদের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান। শুরুতেই সদ্য প্রয়াত দুই বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতিতে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আলোচনায় অংশ নিয়ে সেক্টর কমান্ডার ফোরামের সদস্য সচিব হারুন হাবিব বলেন, ‘বীর সেনানীরা চলে গেলেও বাংলাদেশে আমাদেরকে তাদের চেতনা ও আদর্শকে রক্ষা করতে হবে’।
জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি ড. সানোয়ার আলী বলেন, ‘আমাদের সকলের দায়িত্ব এই দুই সেনানীর প্রতি শদ্ধা জানানো’।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমাদেরকে ছেড়ে চলে যাওয়া দুই বীর সেনানী জাতির জনকের আহবানে দেশকে স্বাধীন করতে লড়াই করেছেন। তারা স্বপ্ন দেখতেন অসাম্প্রদায়ীক ও শোষনমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার। ৭১ এর দালাল নির্মুল কমিটি গঠনে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। আবু ওসমান দেখে যেতে চেয়েছিলেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার’।
সিআর দত্তের ছোট মেয়ে হ্যাপি দত্ত তার পিতার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘বাবার যুদ্ধ শুরু হয়েছিল হবিগঞ্জে। তবে তিনি সমগ্র দেশেই লড়াই সংগ্রাম করেছেন। দেশ স্বাধীনের পরও তিনি দেশের জন্য কাজ করেছেন। যে কাজই করেছেন তা মন দিয়ে ও নীতি মেনে করেছেন। তিনি দেশকে ভাল বাসতেন এবং কখনও নীতিকে বিসর্জন দেননি। এটাই ছিল বাবার চেতনা’।
অনুপ কুমার দেব মনার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন সরকারি বৃন্দাবন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ইকরামুল ওয়াদুদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম মোল্লা মাসুম, হাসান মুর্শেদ, মুক্তিযোদ্ধা রেজিয়া খাতুন, কাজী গোলাম মর্তুজা, আবুল হোসেন, আব্দুর রউফ, ভবতোষ রায় রানা প্রমূখ।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান বলেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ঋণি থাকবে। যারা আমাদেরকে স্বাধীনতার সূর্য এনে দিয়েছিলেন এবং প্রাণ দিয়েছিলেন তাদেরকে স্মরণ রাখতে হবে। শুধু শোকসভা করলেই হবে না, তাদের চেতনা ধারণ করতে হবে। তাদের চেতনার আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।