হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিসবাহ উদ্দিন ভূইয়া ও তার ভাই বললেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিসবাহ উদ্দিন ভূইয়া নিজে ও তার ভাই ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হক ভূইয়ার বিরুদ্ধে আনীত যুদ্ধাপরাধের সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষী হওয়ার কারনেই তিনি ও তার ভাই’র বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তার বড় ভাই নুরুল হক ভূইয়া কাকাইলছেও ইউনিয়নের ৯ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অত্র এলাকার মুক্তিযোদ্ধাগণকে সার্বিক সহযোগীতা করেন। তার আশ্রয়ে কাকাইলছেও গ্রামের শত শত হিন্দু পরিবার শরণার্থী হিসেবে অবস্থান করেছিলেন। মিসবাহ উদ্দিন ভূইয়া বলেন, ১৯৭০ সালে নবম শ্রেণির ছাত্র থাকাবস্থায় তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন। তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনের স্বপক্ষে কাজ করেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন হবিগঞ্জের একজন যুবতী মেয়ে নিরাপত্তাজনিত কারনে তার এক আত্মীয়ের সাথে কাকাইলছেও আসার পথে বানিয়াচঙ্গের বিথঙ্গল গ্রামের মধূ মিয়া গং কর্তৃক অপহৃত হয়। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হক ভূইয়াকে জানালে মিসবাহ উদ্দিন ভূইয়া ও তার ভাই নুরুল হক ভূইয়া এলাকার মুরুব্বিগণকে নিয়ে যুবতী মেয়েকে উদ্ধার করেন। তিনি ও তার ভাই যুদ্ধাপরাধ মামলায় স্বাক্ষী হওয়ায় মধু মিয়ার আত্মীয়স্বজনদের প্ররোচনায় তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গত ২৩ আগস্ট যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়। যা গত ২৯ আগস্ট বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ ও প্রচার হয়।
২০১৭ সালের ৩ নভেম্বর হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে মিসবাহ উদ্দীন ভূইয় বলেছিলেন, ১৯৭১ সনের এপ্রিল মাসে কাকাইলছেও গ্রামের একজন হিন্দু বিবাহিতা মহিলা নিরাপত্তার জন্য তার পিতার সাথে হবিগঞ্জ স্বামীর বাড়ি হতে কাকাইলছেও আসার পথে বিথঙ্গলের আলবদর ওয়াহাব মিয়া গং দ্বারা অপহৃত হন। পরে ওই মহিলার পিতা নুরুল হক ভূইয়ার কাছে এসে সাহায্য চান। তার ভাই নুরুল হক ভূইয়া তৎক্ষনাৎ বৈধ বন্দুকসহ এলাকার জনসাধারণকে নিয়ে অপহৃতা মহিলাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। এ সময় জনরোষে আলবদর ওয়াহাব মিয়াসহ ৬/৭ জন নিহত হন। এদিকে গত ২৩ আগস্ট আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়েরকৃত অভিযোগে এ সময় ৫ জন নিহত হয় বলে উল্লেখ করা হয়। বাকী দুজন নিহত ব্যক্তি কে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মিসবাহ উদ্দিন ভূইয়া বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ২০১৭ সালে এমন বক্তব্য দিয়েছেন বলে তার জানা নেই। এ সময় সাংবাদিকরা তার বক্তব্যের স্বপক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করলে, তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এছাড়াও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পূর্বে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজমিরীগঞ্জে নির্বাচনী প্রচারণার আসায় আমি ও আমার ভাই বাধাঁ প্রদান করেছিলাম কথাটি মিথ্যা। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ‘দাস পার্টির খোঁজে’ বইটিতে ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কর্ণেল রবকে নির্বাচনী প্রচারণায় বাঁধা, যুদ্ধকালীন সময়ে খোয়াই নদীতে পাকিস্তান আর্মির চলাচলের সুবিধার জন্য সাকোঁ নির্মাণ করে দেয়াসহ তাদের দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে মিসবাহ উদ্দিন ভূইয়া বলেন, দাস পার্টির খোঁজে বইটিতে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। লিখিত বক্তব্যে মিসবাহ ভূইয়া, মুক্তিযুদ্ধকালীন মেঘনা রিভার ফোর্সের কমান্ডার তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্বা ফজলুর রহমান চৌধূরীকে মুক্তিযোদ্ধার নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি ও তার ভাইকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে মনগড়া ও বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করেন বলে উল্লেখ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, যে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা আমি ও আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে ঢাকা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেয়া অভিযোগে স্বাক্ষী হয়েছেন তাদের অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। প্রকৃত ঘটনা হলো অভিযোগকারী আশরাফ উদ্দিনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে সন্দেহ থাকার কারনে স্বচ্ছতার স্বার্থে এবং প্রকৃত সত্য উদঘাটনের জন্য আমি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে এ বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য অভিযোগ করি যা বর্তমানে তদন্তাধীন আছে। এছাড়াও অপর অভিযোগকারী মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস চৌধুরীও আমি এবং আমার বড় ভাই আলহাজ্ব নুরুল হক ভূইয়া সম্পর্কে বিভ্রান্তিমুলক বক্তব্য প্রদান করার জন্য তার বিরুদ্ধে মানহানিকর মামলা দায়ের করি। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন অবস্থায় আছে।
সংবাদ সম্মেলনে ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হক ভূইয়া সহ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।